প্রকাশ : ২০ আগস্ট, ২০১৫ ২২:০১:০০আপডেট : ২১ আগস্ট, ২০১৫ ১৩:২৫:৩১
এটা কি জার্নালিস্টিক স্ট্যাটাস?
নাঈমুল ইসলাম খান প্রবীর সিকদার সাংবাদিক না অ্যাক্টিভিস্ট? আমরা যদ্দুর জানি, তিনি সাংবাদিকও, অ্যাক্টিভিস্টও। একই মানুষ যখন একাধিক কাজ করে, তখন আমরা কনফিউজড হই। এই কারণে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত নিয়ম যে, সাংবাদিক কখনও অ্যাক্টিভিস্ট হবে না। আর আমি সাংবাদিক বলে প্রিভিলেজ পেতে পারি না। দুইটা ভালো কাজ। আমার ধারণা দুইটা ভালো কাজ একসঙ্গে করা উচিত নয়। সারাদেশে সংখ্যালঘুদের জমি দখল হয়, নারী নির্যাতন হয়-এসব ইস্যুতে অ্যাক্টিভিজম দরকার আছে। আমি মনে করি, আমারও এ বিষয়ে কাজ করার দরকার আছে। কিন্তু আমি যখন করব, তখন সাংবাদিকতা করে এটা করব না। অনেস্টলি বলি আমারও ইদানিং মনে হয় যে, সাংবাদিকতা আর করবো না। নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কাজ করবো। কিন্তু সাংবাদিকতা করে এটা সম্ভব নয়। এটা তখন অ্যাক্টিভিজম হয়ে যাবে। এটা নিয়ে অনেকের সঙ্গে আমার বিতর্কও হয়েছে। সমস্যা সমাধানে অ্যাক্টিভিজমের দরকার আছে। একই মানুষ যখন সাংবাদিকতা করে অ্যাক্টিভিজম করে তখন কোন কাজটা তার সাংবাদিকতা এবং কোন কাজটা অ্যাক্টিভিজম এটা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। আমরা অ্যাক্টিভিজমকে জার্নালিজম মনে করে বাদ-প্রতিবাদ করি, যেটা নিয়ে আমাদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের শুরু হয়। এখন আমি প্রবীর সিকদারের স্ট্যাটাস প্রসঙ্গে বলি। এটা কি জার্নালিস্টিক স্ট্যাটাস? আমার কাছে তা মনে হয়নি। কারণ জার্নালিজমের একটা শর্ত হলো- আপনি কোনো অভিযোগ করতে পারবেন না উইথআউট অ্যানি সাবস্ট্যানশিয়ালিটি। উনি যদি এখানে বলতেন- আমার মৃত্যুর জন্য এ তিনজন দায়ী হবেন কারণ তারা আমার বিরুদ্ধে এই এই (সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিবরণ) পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাহলে একটা কিছু দাঁড়াতো। কিন্তু সেখানে কোনো সাবস্ট্যানশিয়েট করা নাই। যার কারণে এটা একটা ওয়াইড অ্যাকুইজিশন। যেটা একজনের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ আনছে। এরকম একটা স্টেটমেন্ট নিঃসন্দেহে ফৌজদারি অপরাধ। কারণ আমি যদি তিনজনকে দায়ী করি তাহলে তিনজনের বিপদ হয়ে যায়। সেই অর্থে আমি মনে করি এটা একটা বিপজ্জনক স্ট্যাটাস। এখন তার ওপর কেনো এই বিপদটা আসছে? পত্রিকায় পড়েছি এটা তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে অপরাধ। দেশে যখন কোনো একটা আইন থাকে আইনের বরখেলাপ হলে জবাবদিহি করতে হবে, বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। সুতরাং উনিও যদি আইনলঙ্ঘন করে থাকেন, বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। মানুষ বলে আইসিটি আইন খুবই ভয়ংকর। কিন্তু দেশে যখন কোনো আইন বিদ্যমান থাকে আপনি তা অমান্য করতে পারেন না। ওটা পরিবর্তনের জন্য আপনি আন্দোলন করতে পারেন- এটাই আইনের শাসনের ভিত্তি। আমিও মনে করি আইসিটি আইন অপব্যবহার হওয়ার মতো ভয়ংকর একটা আইন। এটার পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশে যে আন্দোলন-সংগ্রাম হবে আমি তার সঙ্গে থাকবো। কিন্তু যতক্ষণ আইনটি আছে ততক্ষণ অমান্য করতে পারব না। এটাই নিয়ম। এই নিয়মের কারণেই ম্যান্ডেলা জেল খেটেছেন, বঙ্গবন্ধুও জেল খেটেছেন। আইন অমান্য করলে আপনাকে শাস্তির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, আপনি সাংবাদিক বলে পার পেয়ে যেতে পারেন না। মনে রাখতে হবে, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন। এখানে প্রশ্ন আসছে এটার সঙ্গে একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী জড়িত। এজন্য তড়িঘড়ি করে অ্যাকশন নেয়া হয়েছে। মজার ব্যপার হলো- তড়িঘড়ি করে স্বাভাবিক অ্যাকশান নিচ্ছে। এটা সাধারণভাবে হয় না। আমরা বলি যে, কেনো একটা ঘটনা ঘটার এতক্ষণ পরে পুলিশ পৌঁছালো। ফেসবুকে ব্লগাররা জানিয়েছে তাদের জীবন বিপন্ন। কিন্তু পুলিশ তো কোনো অ্যাকশন নেয়নি? সামাজিক যোগাযোগের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। এজন্যই এটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সাংবাদিকতা না। মানুষ ধারনা করে, কিন্তু মানুষের ধারনার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। যোগাযোগ মাধ্যমগুলো মানুষের কাছে খবর পৌঁছায় কোনো ধরনের বিধি বিধান না মেনেই। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও যোগাযোগের কোনো বিধিবিধান মানে না। সামাজিক মাধ্যমে বলা মানে হচ্ছে- সবার সমানে প্রকাশ্যে বলা। এখানে কোনে গালি দিলে সেটা অপরাধ হয়। এটা যে অনলাইনে হচ্ছে তা বলার দরকার নেই- এটা বাস্তবেও ঘটছে। সামনাসামনি গালি দিলে যে আইনে অপরাধ হয়, অনলাইনে দিলেও একই অপরাধ হয়। বিদ্যমান আইন দিয়েই এটার বিচার করা যায়। আলাদা আইনের দরকার নেই। শুধু একটা কথা বলার দরকার, যে মাধ্যমেই করুক এটা ওই আইনের আওতাভুক্ত। আমাদের দেশের মামলাগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়। এজন্য অনেকে ধৈর্য রাখতে পারে না। দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা গেলে মানুষ এই আইনেই বিচার চাইবে। নতুন আইনের দরকার হবে না। আইনগুলো দ্রুত কার্যকর করার ব্যবস্থা করা দরকার। অনেকে বলেন, বাংলাদেশে অনেক সাংবাদিক অ্যাক্টিভিজম করেন। দেখা উচিত, সাংবাদিকতা এটা অনুমোদন করে কি-না। এটা নিয়ে তো কোনো আইন নাই। সাংবাদিকতা কোনো আইন মেনে করা হয় না। কিন্তু আমি বুঝি যে, এটা সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী। এটাকে বলে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। সাংবাদিকের দায়িত্ব হচ্ছে কোনো ঘটনা প্রপারলি হয়েছে কি না তা যাচাই করে লেখা। প্রমাণ না পেয়ে রিপোর্টিং করা যায় না। কারণ সাংবাদিকতা আইনি পেশা না। সাংবাদিক তথ্য চাইলে যে কারোরই ডিক্লাইন করার অধিকার আছে। তাই বলে কী আমরা সাংবাদিকতা ছেড়ে দেবো? তখন আমরা কৌশলে এগোই, গবেষণা করি, অনুসন্ধান করি। এভাবেই প্রার্থিত তথ্য বের করি। সাংবাদিকতা হলো কৌশলী পেশা। কৌশলের ব্যাপারে সাংবাদিকতার একটা নীতি আছে। আইনী কৌশলও নিতে পারেন, বেআইনী কৌশলও নিতে পারেন। বেআইনী কৌশল নিলে ঝুঁকি আছে। এজন্য আপনাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। ইউরোপ আমেরিকায় সাংবাদিকরা জাতির স্বার্থে কাজ করতে গিয়ে অবশ্য চুরির দায়ও নেয়। জেল খাটে। মানে ডিউ প্রসেসে তথ্য বের করা হয় না। আগে আমাদের শেষে এ চর্চা ছিল না। কিন্তু এখন রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্ট আছে। আপনি চাইলে বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু এক্ষেত্রেও সময় লাগতে পারে। ইউরোপ-আমেরিকায় সর্বোচ্চ একবছর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। আমরা এখানে এক মানুষ নানান ভূমিকা পালন করি। আরেকটা সমস্যা হলো সুপারফিশিয়াল লেভেলে কথা বলা। তাৎক্ষণিক যেটা মনে আসে (না জেনে) তাই বলা। এটা আইনের বিষয়। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নানা রকম নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার। এটা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়। এটার সঙ্গে সুনির্দিষ্ট কোনো দল জড়িত নয়। তবে একটা পার্টিকুলার অভিযোগ সত্যও হতে পারে। একজন হয় তো সঠিকভাবে জমিটা কিনেছেন কিন্তু আমি যদি তাকে পছন্দ না করি সে তখন তার বিরুদ্ধে লেগে গেলাম। বলে যে হিন্দুর জমি জোর করে নিয়েছে। খুঁজলে হয়তো দেখা যাবে, ওই লোকটাও ওই জমিটা কিনতে চেয়েছিলেন। না পেরে মিথ্যে অভিযোগ ছড়িয়ে বিষয়টাকে ভিন্নরূপ দেয়ার চেষ্টা করছেন। প্রবীর যে বললো সে খুন হলে তিনজন দায়ী হবেন। এটা সিভিল অফেন্স নয়, একেবারে ক্রিমিনাল অফেন্স। এটার জন্য যদি তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, এটা অপরাধমূলক মত প্রকাশের জন্য, মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য নয়। প্রবীর যেটা করেছে সেটা ডেঞ্জারাস কমেন্ট। কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া এটা করা অন্যায়। আবার গ্রেপ্তার করার পর প্রবীরকে নির্যাতন করা হয়েছে-এমনটা বলা হচ্ছে। যদি সত্যিই এমন কিছু হয়ে থাকে একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি তার প্রতিবাদ করছি।