তামাকজাত দ্রব্যের প্রচার প্রচার সম্পূর্ন নিষিদ্ধ হলেও ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে কৌশলে প্রচার চালাচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। নানারকম প্রচার আর পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করছে তারা। নিজেদের সিগারেটের বিক্রি বাড়াতে কোথাও ছোট ছোট প্রতিযোগিতা আয়োজন করে বিজয়ীদের পণ্যের লোগো সম্বলিত উপহার দেয়া হচ্ছে। আবার কোথাও সিগারেটের খালি প্যাকেট জমা দিলে দেয়া হচ্ছে সিগারেটসহ নানা ধরনের লোভনীয় উপহার। ছোট ছোট লিফলেট ও স্টিকার ব্যবহার করা হচ্ছে অনেক জায়গায়।
‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালার ৫ ধারার ১ উপধারার খ-তে উল্লেখ আছে তামাকজাত দ্রব্য ক্রয়ে প্রলুদ্ধকরণের উদ্দেশ্যে, উহার কোনো নমুনা, বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে, জনসাধারণকে প্রদান বা প্রদানের প্রস্তাব করিবেন না বা করাইবেন না।’
তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে সিগারেট কোম্পানিগুলো এই নিয়ম ভাঙছে অত্যন্ত চাতুরতার সাথে। বিক্রি বাড়াতে উইনস্টন, ব্রাইটন, মেরিস ব্র্যান্ডের সিগারেটের লোগো সম্বলিত মগ, পেনড্রাইভ, ছাতা, ব্যাগ উপহার হিসেবে দেয়া হচ্ছে। স্বাদ পরীক্ষা করানোর নামে মেরিস এবং ব্রাইটন ব্রান্ডের সিগারেট বিনামূল্যে বিতরন করা হচ্ছে। বেশিমাত্রায় ধূমপানে উদ্বুদ্ধ করতে ও উৎসাহিত করতে খালি প্যাকেটের বিনিময়ে সিগারেট দেয়া হচ্ছে। রঙিন আকর্ষণীয় লিফলেট ও স্টিকারে দেয়া আছে সিগারেট ও সিগারেটের লোগো সম্বলিত ঘড়ি, ছাতা, প্রেসার কুকার এমনকি এলইডি টিভি পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের উপহারের পর্দ।
জামালপুরের ইসলামপুর বাজার, পিরোজপুরের নাজিরপুর, সুনামগঞ্জের বিশম্ভরপুর, কক্সবাজারের মহেশখালী, খুলনার ময়লাপোতাসহদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে এরকম অবৈধ বিজ্ঞাপন ও অফারের চিত্র চোখে পড়ে। তেমনি নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার প্রত্যন্ত এলাকা টাংকির ঘাট। অধিকাংশ মানুষের পেশা মৎস্য শিকার। সেখানে বেশ কয়েকটি সিগারেটের দোকানে গিয়ে দেখা যায় অনেকগুলো করে মেরিস সিগারেটের খালি প্যাকেট জমানো আছে। বিক্রেতাদের জিজ্ঞেস করলে বলেন নানা রকম চটকদার উপহারের কথ। একজন দোকাদার একটি রঙিন লিফলেট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, ‘চাই দেখেন মেলা উপহার পাওয়া যাইবো।’ লিফলেটে আঠারোটি উপহারের কথা উল্লেখ আছে। পাশ্ববর্তী লক্ষীপুরের তেকাইচ্ছা ঘাট, রামগতি বাজার এলাকায় আবুল খায়ের গ্রুফের এই ব্র্যান্ডের সিগারেটের এইরকম বহু বিজ্ঞাপন দেখা যায়।
দেশের বাজারে সিগারেটের প্রায় ৮০ শতাংশই দখল করে আছে নি¤œস্তরের কমদামি সিগারেট। সেই সিগারেটের প্রতি আসক্ত করতে এ ধরনের অবৈধ প্রচার চালানো হচ্ছে। দাম বাড়িয়ে ধূমপান কমানোর প্রচেষ্টাকে ম্লান করে দিচ্ছে এসব চমকদার অফার আর অবৈধ বিজ্ঞাপন।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী খুলনাসহ দেশের প্রায়ই সর্বত্র অবাধেই চলছে এসব অবৈধ বিজ্ঞাপন কার্যক্রম। ধূমপায়ীরা উদ্বুদ্ধ হয়ে আরো বেশি ধূমপানে আসক্ত হওয়ার পাশাপাশি অধূমপায়ীরাও এই বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে ধূমপায়ী হয়ে উঠছে।
উল্লেখ্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন ২০৪০ সালের মধ্যে ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার। আর এভাবে প্রধানমন্ত্রীর ধূমপানমুক্ত দেশ গড়ার অন্তরায় হয়ে উঠছে এসব তামাকদ্রব্যের লোভনীয় বিজ্ঞাপন। লেখক: কবি