শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। মন্ট্রিয়লের হোটেল হায়াতে আয়োজন করা হয়েছিল গ্লোবাল ফান্ডের আন্তর্জাতিক সম্মেলন। অনুষ্ঠানের হোস্ট কানাডার প্রধানমন্ত্রী। অতিথি হিসেবে হাজির বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানরা। এতসব অতিথির মধ্যে আছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। কানাডার প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে তিনি ওখানে গেছেন। ভিতরে যখন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়কদের নিয়ে সাজানো গোছানো অনুষ্ঠান চলছে, হোটেলের বাইরে তখন ভিন্ন এক দৃশ্য। সেখানে চলছে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ, স্লোগান, মিছিল। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা এই বিক্ষোভকারীরা সবাই বাংলাদেশি। এরা কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি। রাস্তার একপার্শ্বে বিএনপির কর্মী-সমর্থক, অপর পার্শ্বে আওয়ামী লীগের। আর দুই পক্ষের মাঝে দুই সারি কানাডিয়ান পুলিশ, তারা নিয়োজিত সেখানে শান্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে। এই বীর বাঙালিরা যাতে পরস্পরের ওপর হামলিয়ে না পড়তে পারে, সে কারণেই সদাসতর্ক তারা। একটু পরপর বিএনপি পক্ষের লোকেরা স্লোগান দিচ্ছে ‘গো ব্যাক হাসিনা, গো ব্যাক।’ অপরদিকে থেমে নেই আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও। পাল্টা স্লোগান আসছে তাদের কাছ থেকেও ‘গো ব্যাক রাজাকার, গো ব্যাক পাকিস্তান।’
এই দৃশ্যগুলো আমি একাধিক ভিডিওতে দেখলাম। কানাডা প্রবাসী কয়েকজন বন্ধু তাদের ফেসবুকে এই ভিডিও ক্লিপগুলো আপলোড করেছেন। সত্যি কথা বলতে কি, ভিডিওগুলো দেখতে দেখতে আমি রীতিমতো লজ্জা পাচ্ছিলাম। বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলাম, আমার পাশ থেকে আর কেউ দেখে ফেলল না তো! কেউ বুঝে ফেলল না তো, জাতি হিসেবে আমরা কতটা অসহিষ্ণু আর নিম্নরুচির মূর্খ? বিএনপির যে লোকজন দাঁড়িয়েছিল হোটেলের সামনের রাস্তার অপর পার্শ্বে, তাদের হাতে কিছু প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ছিল। একটা ব্যানারে লেখা ছিল ঝধভব ঢ়বড়ঢ়ষব, ঝধভব ইধহমষধফবংয! বুঝতে অসুবিধা হয়নি, ঝধাব লিখতে গিয়ে তারা ঝধভব লিখে ফেলেছে। যারা সেফ এবং সেভ এর পার্থক্যটাই জানে না, তারা দেশ ছেড়ে সুদূর কানাডায় গিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে রক্ষার মহান ব্রত পালন করছে!
ভিডিওটি দেখতে গিয়ে আমি বারবার কানাডিয়ান পুলিশের মুখের ভাব পড়ার চেষ্টা করছিলাম। ওরা কি ভাবছে এই জাতিটি সম্পর্কে? হোটেলের ভিতরে সম্মেলনে অনেক কটি দেশের সরকারপ্রধানরা ছিলেন। তারা সবাই যে নিজ নিজ দেশে ব্যাপক জনপ্রিয় তাও হয়ত নয়। প্রত্যেক দেশেই এক বা একাধিক বিরোধী দলও আছে। সেই বিরোধী দলের সমর্থকরাও হয়ত কানাডায় প্রবাসী জীবন যাপন করছেন। আবার হয়ত সরকারি দলের সমর্থকরাও আছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনো দেশের কাউকেই কিন্তু হোটেলের সামনে চিল্লাপাল্লা করতে দেখা যায়নি। আসলে কখনোই দেখা যায়ও না। কেবল আমরাই পৃথিবীর তাবৎ জাতিগুলোর জন্য নতুন এক আচরণ দেখিয়ে চলেছি। এসব ঘটনায় ওই দেশে কি জাতি হিসেবে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। ওই হাতেগোনা গোটা বিশেক ধান্দাবাজের ছাগলামির দায় কি গিয়ে বর্তাচ্ছে না হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশির উপরও?
প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরের চূড়ান্ত গন্তব্য কিন্তু কানাডা-ই ছিল না। কানাডা যাওয়ার পথে তিনি নেমেছিলেন ইংল্যান্ডে। আর কানাডা থেকে পরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয় জায়গাতেই প্রায় একই রকম দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল।
শুনেছি নেতা-নেত্রীরা নাকি চান যে বিদেশেও তাদের এইরকম সমর্থক থাকুক। ওনারা যখন ওই দেশে নামেন, কিংবা ওই দেশ থেকে বিদায় নেন, চান যে এয়ারপোর্টে তার দলের সমর্থকরা দল বেঁধে আসুক, তার পক্ষে স্লোগান দিক। এই মানসিকতার একটা নেতিবাচক দিকও যে আছে, সেটা তারা ভুলে যান। হুজুগ একবার তৈরি হয়ে গেলে পক্ষের লোকের পাশাপাশি বিপক্ষের লোকও যে হাজির হবে, তারা যে ‘নিপাত যাক’ জাতীয় স্লোগানও দেবে, এটা মানতে চান না। এবার শেখ হাসিনা যখন লন্ডনে এয়ারপোর্ট থেকে বের হলেন, দুই ধরনের দৃশ্যই তাকে দেখতে হয়েছে। বিএনপির উগ্র সমর্থকরা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী স্লোগান দিয়েছে। উচ্ছৃঙ্খলতা করেছে। আবার আওয়ামী লীগের লোকেরাও শেখ হাসিনার পক্ষে স্লোগান দিয়েছে। এই দুই স্লোগানের কোনোটাকেই কি শোভন বলা যাবে? প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গিয়েছেন, প্রটোকল অনুযায়ী যে দেশে গেছেন তাদের সরকারি লোকই তো থাকবেন। আমাদের দূতাবাসের লোকও থাকবেন। হইচই কেন হবে? বিদেশের ওই এয়ারপোর্টে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও আরও অনেক যাত্রী তো থাকেন। তাদের অনেকে হয়ত শেখ হাসিনা কিংবা খালেদা জিয়ার মতো নেত্রীকে চিনেনও না। তারা কি আমাদের এই আচরণে খুশি হয়ে থাকেন? বিরক্ত হয়ে যখন সেখানে দায়িত্বপালনরত কাউকে জিজ্ঞাসা করেন, তারা নিশ্চয়ই আমাদের নেত্রীদের দেখিয়ে দেন। তখন ওই বিদেশি যাত্রীর মনে আমাদের নেত্রী কিংবা পুরো জাতির প্রতিই যে মনোভাবের জন্ম নেয় তাকে কি ইতিবাচক কিছু বলা যাবে?
নেতা-নেত্রীরা যে আসলেই চান তার বড় প্রমাণ হলো বড় এই দলগুলো গঠণতান্ত্রিকভাবেই বিদেশে তাদের শাখাকে অনুমোদন দিয়ে থাকেন। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির বিদেশে শাখা থাকবে, এটা দলীয়ভাবেই স্বীকৃত। এই নিয়মের হয়ত দারুণ কিছু ইতিবাচক দিকও থাকতে পারে। যদি থেকেও থাকে, তারপরও বলব সেই ইতিবাচক দিকগুলোকে ছাপিয়ে এখন নেতিবাচক বিষয়গুলোই নগ্ন হয়ে বেরিয়ে পড়েছে। বিদেশে যখন বাঙালিরা থাকেন, তা যে দেশেই থাকুন না কেন, তারা তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়েই থাকেন। জাতি হিসেবে এটাই আমাদের কাছে প্রত্যাশিত। এই প্রত্যাশার প্রতিফলন আমরা পেয়েছি ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়। তখন দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালিরা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে বিদেশে জনমত গঠন করেছেন। তার ফলও পেয়েছি, আন্তর্জাতিকভাবেই তখন পাকিস্তান পড়ে গিয়েছিল চাপের মুখে। কিন্তু ইতিবাচক বা ঐতিহ্যম-িত সেই ঘটনার সঙ্গে বর্তমানের হল্লা-হট্টগোলকে মেলানোর সুযোগটা কোথায়? এখন আমরা নিজেরা নিজেরা চিল্লাপাল্লা করি, মারামারি করি। এসব করে লোক হাসাই। আর আমাদের নেতা-নেত্রীরা সেসব উপভোগ করেন।
কানাডা থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গেলেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিলেন। রাষ্ট্রনায়কোচিত সেই ভাষণের পরপরই কি ঘটল? ভাষণ শেষ করেই তিনি গেলেন নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় অংশ নিতে। সেখানে আওয়ামী লীগের দু গ্রুপের মধ্যে মারামারি হলো, অনুষ্ঠানস্থলে চেয়ার ভাঙ্গাভাঙ্গি। অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছিল যে, গ্রান্ড হায়াত হোটেল কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা বাহিনীকে ডাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই যে ঘটনাসমূহ, এসব কি প্রধানমন্ত্রীর সম্মান বৃদ্ধি করল? জাতি হিসেবে আমরা আরও উঁচুতে উঠলাম? তাহলে তারপরও এসব কি চলতেই থাকবে?
রাজনৈতিক দলের বিদেশের শাখা নিয়ে নানা ধরনের মুখরোচক কথা কিন্তু প্রতিনিয়তই শোনা যায়। পৃথিবীর সব দেশেই যে এই আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জাতীয় পার্টির শাখা রয়েছে তা কিন্তু নয়। এর বেশি প্রকোপ দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় দেশসমূহ, মধ্যপ্রাচ্য এসব দেশে। অর্থাৎ যে সব দেশে টাকা-পয়সার লেনদেনটা একটু বেশি, সেসব জায়গায়। বিদেশের এই কমিটিগুলোতে যারা নেতৃত্ব দেন, দেশে থাকতে তাদের কিন্তু তেমন কোনো খবরই ছিল না। বিদেশে গিয়ে হাতে কিছু অর্থ সম্পদ আসার পর তাদের নেতা হওয়ার খায়েশ জাগে। নানা লোকদের ধরাধরি করে তারা নেতা বনে যান। ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, এই প্রবাসী নেতারা কিন্তু আবার জাতীয় নেতৃত্বের কাছে বেশ গুরুত্ব পেয়ে থাকেন। দেশ থেকে দলের নেতারা যখন বিদেশে যান, তখন এরাই তাদের দেখাশোনা করেন। এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে যান, নিজেদের হেফাজতে রাখেন, দু-একটা সংবর্ধনার আয়োজন করেন। শপিং করে দেন। তারপর সেসব উপঢৌকনসহ একেবারে এয়ারপোর্টে তুলে দেন। নেতার স্তর অনুযায়ী এর মাত্রাগত বিভেদ হয় কেবল। সে কারণেই জাতীয় নেতাদের কাছে কেন্দ্রীয় অনেক জুনিয়র নেতার চেয়েও বিদেশের এসব ভূঁইফোড় নেতারা বেশি গুরুত্ব পেয়ে থাকেন। এর কারণ যে, বিদেশে গেলে তাদের আতিথ্য আর উপঢৌকন ছাড়া আর কিছু নয়, সেটা বুঝতে তেমন একটা কষ্ট হয় না।
প্রবাসীদের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে কামড়াকামড়িটাও বেশ দৃশ্যমান। এই যে অতি সম্প্রতি নিউইয়র্কে শেখ হাসিনাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়াকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে হট্টগোল, মারামারি, সেটাও ওই কামড়াকামড়িরই একটা প্রকাশ মাত্র। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের নাম ধরেই সেখানে গালাগালি করা হয়েছে। যারা করেছে, তারাও আওয়ামী লীগ করেন। তারাও জাতীয় পর্যায়ের কোনো না কোনো নেতার সঙ্গে সম্পর্কিত।
একটা প্রশ্ন আমার মনে খুবই জোরালোভাবে রয়ে গেছে। বিদেশে আওয়ামী লীগ, বিএনপির কমিটি এখন থাকতেই হবে কেন? ওরা কি ওখানে রাজনীতি করবে? ওরা কি ওই দেশের রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে? তাহলে কেন? আচ্ছা, না হয় মানলাম যে আমাদের জাতীয় পর্যায়ের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো তাদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফান্ড কালেকশনের জন্যই দিক, আর সেখানে মুসাবিদা করার জন্যই হোক, তারা এদেরকে নিজেদের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু ছাত্র বা যুব সংগঠনের প্রয়োজনীয়তাটা কোথায়? এসব দেশে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, যুবদল, ছাত্রদলের কমিটিও আছে। এরা দেশের যুবক বা ছাত্রদের জন্য কতটা উপকারী ভূমিকা রাখতে পারছে সেটা হয়ত বলা কঠিন, তবে তারা সেখানে মারামারি আর হট্টগোল সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তির যে বারোটা বাজাচ্ছে, তা বলা যায় নির্দ্বিধায়।
একটা উদাহরণ দেওয়া যায়। এ বছরই জাতীয় শোক দিবস পালন করতে গিয়ে যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে প্রকাশ্যে মারামারি হয়েছে। পূর্ব লন্ডনের মাইক্রো বিজনেস সেন্টারে হচ্ছিল সেই আলোচনা সভাটি। আয়োজক অবশ্য ছিল যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ। সভা থেকে বের হয়েই ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ নিজেদের মধ্যেই হাতাহাতি মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। ওদেরকে থামাতে পরে পুলিশ ডাকতে হয়েছিল। তবে বিদেশে যুব এবং ছাত্রদের সংগঠন নিয়ে কিন্তু এগুলোর দেশীয় নেতৃবৃন্দের আগ্রহের কমতি নেই। এ নিয়ে বিরোধের জন্মটাও দেওয়া হয় সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মদদেই। বিদেশে গিয়ে সংগঠনের সভাপতি এক কমিটিকে অনুমোদন দেন, তো সাধারণ সম্পাদক গিয়ে আর এক কমিটিকে অনুমোদন দেন। বলা বাহুল্য, এই উভয় অনুমোদনের পেছনেই নিয়ামক হিসেবে কাজ করে অর্থ আর উপঢৌকন। যুবদলের এক নেতা সম্পর্কে তো এমন কথাও প্রচারিত আছে যে, গত আট বছর ক্ষমতার বাইরে থেকেও এই নেতা কেবল বিদেশে গমন এবং সেখানকার কমিটির অনুমোদনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। এই লোকের এমন ঘটনাও আছে যে, একই এলাকায় তিনি নিজেই একাধিক কমিটি অনুমোদন করেছেন। আবার যারা অর্থ আর উপঢৌকনের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে গেছে, তারা নিজেরাও নতুন নতুন সংগঠনের জন্ম দিয়ে বসেছেন। সেই সব সংগঠনের নাম শুনলেই উপলব্ধি করা যায় এদের ধান্দাটা কোন পর্যায়ের? যেমন ধরা যাক, ‘তারেক রহমান অনলাইন ফোর্স’! এটি একটি সংগঠনের নাম। দেশে এর কোনো অস্তিত্ব আছে বলে জানা না থাকলেও অনেক দেশেই এটি ধান্দার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এরকম তাঁতী লীগ, মৎস্য লীগের শাখাও আছে বিদেশে। বিদেশের মাটিতে বসে ওরা কি তাঁত বোনে? মাছ মারে? এ কেমন মানসিকতা আমাদের?
আসলে আমি এটিকে একটা জটিল পরিস্থিতি বলব। ওদের কাছ থেকে জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যে কিছু পাওয়া নিয়ে দ্বিধা থাকলেও নেতাদের প্রাপ্তিযোগ যে রয়েছে তা নিয়ে কোনোই সন্দেহ নেই। হয়ত সে কারণেই এ প্রবণতা দিনদিন বাড়তেই থাকবে। আর এই ধারা যত বেগবান হবে, ততই বিদেশে ভূলুণ্ঠিত হতে থাকবে আমাদের জাতীয় ভাবমূর্তি। অথচ জটিল এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি কিন্তু খুবই সহজ। কেবল দুই নেত্রী যদি সিদ্ধান্ত দেন, দেশের বাইরে আমাদের কোনো শাখা থাকবে না, তাহলেই হবে। প্রবাসে যারা গেছেন, ওখানে যারা কাজ করছেন, তারা দেশে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছেন, ওতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে। প্লিজ, আপনারা ওটাই করুন। বিদেশে গিয়ে দেশীয় রাজনীতি করবেন না। কারণ এটা করতে গিয়ে যা কিছু করছেন এখন, তাতে বিদেশিদের কাছে আমরা বেইজ্জতি হচ্ছি, লজ্জিত হচ্ছি। আমি জানি, এসব আহ্বানে ওনারা থামবেন না। ওনাদেরকে আসলে থামাতে হবে। আর সেটা পারবেন কেবল দুই নেত্রী। দেশ, জাতি এবং সর্বোপরি আপনাদের নিজেদের সম্মানের স্বার্থে এদেরকে থামান।
মাসুদ কামাল: সিনিয়র নিউজ এডিটর, বাংলাভিশন টেলিভিশন