বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের নাম শেখ হাসিনা। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, আপসহীন, দৃঢ়চেতা, মমতাময়ী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রধানমন্ত্রী। সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আজ চৌকস এক রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছেন তিনি। দেশ পরিচালনা করছেন দৃঢ়তা ও সাহসের সঙ্গে। তিনি দুই বার সফলতা ও দক্ষতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করে বর্তমানে তৃতীয়বারের মতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব পালন করছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও প্রধান ছিলেন তিনি। ইতোমধ্যেই নানা বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি এখন পরিণত হয়েছেন বিশ্বনেতায়।
২৮ সেপ্টেম্বর। এ দিনটি কেবল ক্যালেন্ডারের পাতার একটি তারিখ মাত্র নয় - এ দিনটি বাঙালি জাতির দিনবদলের বিশেষ দিন। কারণ এদিনেই জন্মগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, দেশরত্ন, জয়তু জননেত্রী শেখ হাসিনা। আজ তাঁর ৭০ তম জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের কোল আলো করে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেয়া কন্যা-ই আজকের সফল প্রধানমন্ত্রী, সফল রাজনীতিক। তাঁর নেতৃত্ব বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত। আর তাইতো যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্য ইভেট ডায়ান ক্লার্ক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্বের গর্ব’ আখ্যায়িত করেছেন। জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ূ কামনা করে কিছু কথা নিবেদন করছি।
দুই.
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃসংসভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে ঘাতকদল মনে করেছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা হয়ে গেছে। কিন্তু রাখে আল্লাহ্ মারে কে? আল্লাহর ইশারায় সেদিন বিদেশে থাকায় ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধু নেই। তাঁর পরিবারে নেতৃত্ব দেয়ার কেউ নেই। জাতীয় চার নেতা নেই। চক্রান্তের রাজা, মহারাজা সামরিক শাসক ও পাকিস্তানের জেনারেল আইয়ুব খানের অনুসারী জেনারেল জিয়াউর রহমান তার প্রথম রাজনৈতিক দল ‘জাগদল’ গঠনের আগে তিনি আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিভ্রষ্ট নেতার দ্বারা একটি নকল আওয়ামী লীগ গঠন করে সেটিকে ক্ষমতার সিঁড়ি করতে চেয়েছিলেন। আইয়ুব খানের তথাকথিত হ্যাঁ-না ভোট, মুসলিম লীগ গঠন ইত্যাদি প্রতিটি কাজের অনুকরণ বাংলাদেশে করেছেন জিয়াউর রহমান। কারণ আইয়ুব খান ছিলেন জে. জিয়ার রোল মডেল। তারই আদলে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে ভাঙন ধরিয়ে সোহরাওয়ার্দী আওয়ামী লীগ গঠনের চেষ্টার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ও আদর্শ মুছে ফেলার অপচেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি সফল হতে পারেননি।
৭৫-এর ১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডির পর আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও নবীন যেসব নেতার দলের হাল ধরার কথা, তাদের অধিকাংশের মধ্যে সাহস এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব, স্বার্থপরতা, সুবিধাবাদিতা এবং অনৈক্যের সুর বেজে উঠেছিল। দলের ভেতরেও ছিল বিপর্যয়ের সুর। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য বাধ্য হয়েই ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দলের সভানেত্রীর পদ গ্রহণে তাঁকে রাজি করানো হয়। দলের সভানেত্রীর পদ গ্রহণের প্রাক্কালে তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু কর্তৃক রাজনৈতিক তালিম না থাকলেও বঙ্গবন্ধুর রক্ত, পিতার রাজনৈতিক ক্যারিশমা অনুসরণ, ছাত্ররাজনীতির অভিজ্ঞতা, সাহস ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞাই ছিল প্রধান অনুপ্রেরণা; যা তাঁকে নেতৃত্ব গ্রহণে শক্তি যুগিয়েছিল।
ইংল্যান্ডে থেকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন এবং ১৯৮০ সালে তিনি দিল্লি থেকে লন্ডনে আসেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে পূর্ব লন্ডনের ইয়র্ক হলে তাকে বিশাল গণসংবর্ধনা দেয়া হয়। বিশাল ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা কান্নাজড়িত কণ্ঠে শপথ উচ্চারণ করে বলেছিলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধূলায় লুটাতে দেবেন না। নিজের জীবন দিয়ে হলেও সে আদর্শ রক্ষা এবং দেশের গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য কাজ করবেন। সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য দেশে ফিরবেন।’
শেখ হাসিনা দেশে ফেরার আগেই আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সভায় সর্বসম্মতভাবে তিনি দলের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে সেনাশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তাঁর দেশে ফেরার দিন আকাশ যেন অঝোরে কাঁদছিল। ঢাকা বিমান বন্দরে দেশের লাখো জনতার উপস্থিতি পরিণত হলো জনসমুদ্রে। সেখানে সংবর্ধনা দেয়া হলো শেখ হাসিনাকে। উত্তাল জনসমুদ্রে শেখ হাসিনার সেদিনকার ভাষণ প্রমাণ করেছে তিনি গৃহবধূ নন; তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা। লন্ডনের একটি দৈনিকে সিঙ্গেল কলামে খবরটি ছাপা হয়েছিল এভাবে A Leader is born (একজন নেতার জন্ম)। আর সেদিনই জিয়াউর রহমানের অবৈধ সামরিক শাসনের ভিত নড়ে উঠেছিল।
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পরপরই শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন তিনি। কারাঅন্তরীণ করা হয় বারবার। তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে কমপক্ষে ১৯ বার সশস্ত্র হামলা করা হয়। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সামরিক সরকার তাঁকে আটক করে ১৫ দিন অন্তরীণ রাখে। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি এবং নভেম্বর মাসে তাঁকে দু’বার গৃহবন্দী করা হয়। ১৯৮৫ সালের ২ মার্চ তাঁকে আটক করে প্রায় তিন মাস গৃহবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে তিনি ১৫ দিন গৃহবন্দী ছিলেন।
১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তিনি তিনটি সংসদীয় আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এই নির্বাচনের পরেই দেশ থেকে সামরিক আইন প্রত্যাহার করে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। ৮৭ সালের ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে তাঁকে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এতে অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। এ সময় যুবলীগ নেতা নূর হোসেন, বাবুল ও ফাত্তাহ নিহত হন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাঁকেসহ তাঁর গাড়ি ক্রেন দিয়ে তুলে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। ১১ নভেম্বর তাঁকে গ্রেপ্তার করে এক মাস অন্তরীণ রাখা হয়। ৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে স্বৈরাচার এরশাদের পুলিশ সদস্যরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে এবং লাঠিচার্জ করে। সেখানেও অলৌকিকভাবে আল্লাহ তাঁকে অক্ষত রাখেন। কিন্তু প্রাণ হারান কমপক্ষে ৩০ জন। লালদীঘি ময়দানে ভাষণদানকালে তাঁকে লক্ষ্য করে দুইবার এবং জনসভা শেষে ফেরার পথে আবারও তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করা হয়। ১৯৮৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আবারও কারাঅন্তরীণ করা হয়। ৯০ সালের ২৭ নভেম্বর তাঁকে বঙ্গবন্ধু ভবনে অন্তরীণ করা হয়। ৯০-এর ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন এবং এই আন্দোলনে ভীত হয়ে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ৯১ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের কারণে তাঁর দল আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। ক্ষমতায় আসে বিএনপি। ফলে তিনি পঞ্চম সংসদের বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে বিএনপি ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করে। ওই নির্বাচনের বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে গণআন্দোলনে ভীত হয়ে ৩০ জুন পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় বিএনপি সরকার।
১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ২৩ জুন তিনি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তাঁর দল আওয়ামী লীগ পরাজয় বরণ করে। শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকালে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা করা হয়। ওই হামলায় প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা (পরে রাষ্ট্রপতি) জিল্লুর রহমানের প্রিয়তমা স্ত্রী আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ কমপক্ষে ২৪ শাহাদত বরণ করেন। এখনো অসংখ্য নেতা-কর্মী মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। কিন্তু মহান আল্লাহ পাকের অশেষ কুদরতে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও কাঁনে মারাত্মক আঘাত পান।
২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা ও জটিলতা সৃষ্টি করলে সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে সংসদ ভবন চত্বরে সাব-জেলে পাঠায়। প্রায় এক বছর পর ২০০৮ সালের ১১ জুন তিনি মুক্তি লাভ করেন। দেয়া হয় মিথ্যা মামলা। করা হয় হত্যার ষড়যন্তও। কিন্তু শেখ হাসিনার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন না দিয়ে প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর ওই সরকার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে। এই নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বিএনপি-জামায়াতের বোমা-গ্রেনেড ও অগ্নিসন্ত্রাসের দাঁতভাঙা জবাব হিসেবে এদেশের গণমানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন ও ভোটে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
তিন.
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আজ এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি একমাত্র বাঙালি বধূ যিনি সরকার পরিচালনায় দক্ষতার সাক্ষর রেখেছেন। বিশ্বকে তাক লাগিয়ে সীমিত সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দুর্বার গতিতে। ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধি, জিডিপির লক্ষ মাত্রা উন্নয়ন, সমুদ্র বিজয়, ৬৮ বছরের ছিটমহল সমস্যার সফল সমাধান, আইনের শাসন নিশ্চিত করণ, দুর্নীতি দমনের মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করা, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা, বাল্য বিবাহ ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো, ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলা, ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ, অবাধ তথ্য-প্রবাহের দুয়ার উন্মোচন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবায় অভাবনীয় সাফল্যের ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের রোল মডেল। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত। তাঁর শাসনামলে ১৯৯৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অফ ল ডিগ্রি; ৪ জুলাই জাপানের ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটি থেকে অনারারি ডক্টর অফ ল ডিগ্রি এবং ২৫ অক্টোবর স্কটল্যান্ডের ডান্ডির ইউনিভার্সিটি অফ এবারটে থেকে তিনি লিবারেল আর্টসে অনারারি পিএইচডি অর্জন করেন। একই সালে ভারতের নেতাজী সুভাষ চন্দ্র পদক এবং রোটারি ফাউন্ডেশন কর্তৃক পল হ্যারিস ফেলো মর্যাদা লাভ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে সুদীর্ঘ ২৫ বছরের গৃহযুদ্ধ অবসানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কোর ফেলিক্স হোফে-বোইনি শান্তি পদকে ভূষিত হন। ১৯৯৮ সালে সর্বভারতীয় শান্তি পরিষদের মাদার তেরেসা পদক এবং বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও গণতন্ত্র প্রসারে অবদানের জন্য নরওয়ের অসলোর মহাত্মা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ফাউন্ডেশন কর্তৃক এম কে গান্ধী পদক প্রাপ্ত হন। লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের মডেল অফ ডিস্টিংশন ১৯৯৬-৯৭ এবং ১৯৯৮-৯৯, হেড অফ স্টেট মডেল ১৯৯৬-৯৭’র গৌরব অর্জন করেন। ২৮ জানুয়ারি ১৯৯৯ তারিখে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনারারি ডিগ্রি ‘দেশিকোত্তম’ (ডক্টর অফ লিটারেচার) অর্জন করেন। ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও)-এর সেরেস মেডেল ১৯৯৯, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডক্টর অফ ’ল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনারারি ডক্টর অফ ’ল অর্জন করেন। ২০০০ সালে আাফ্রো-এশিয়ান লইয়ার্স ফেডারেশনের পার্সন অব দ্য ইয়ার মনোনীত হন। ২০০০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাট অঙ্গরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ব্রিজপোর্ট থেকে অনারারি ডক্টর অফ হিউম্যান লেটার্স নির্বাচিত হন। ওই বছরের ৯ এপ্রিল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার র্যানডষ্ফ-ম্যাকন ওম্যান’স কলেজ থেকে পার্স এস বাক পদক অর্জন করেন। ২০০৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব লায়ন্স ক্লাবের মেডাল অব মেরিট পদক প্রাপ্ত হন। ২০০৯ সালে ভারত সরকার ইন্দিরা গান্ধী পদক প্রদান করেন। ২০১০ সালে শিশুমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতিসংঘের এমডিজি পদক অর্জন করেন। ২০১১ সালে গণতন্ত্র সুসংহতকরণে প্রচেষ্টা ও নারীর ক্ষমতায়নে অবদান রাখার জন্য ফ্রান্সের দোফি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে স্বর্ণপদক প্রদান করেন। ওই বছরই বিশ্ব মহিলা ও শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়নে অবদানের জন্য জাতিসংঘ ইকনোমিক কমিশন ফর আফ্রিকা; জাতিসংঘে এন্টিগুয়া-বারমুডার স্থায়ী মিশন, আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন ও সাউথ-সাউথ নিউজের সাউথ-সাউথ পদক এবং বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ অর্জন করেন। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ভারতের ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অফ লিটারেচার এবং ওই বছর বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেসকোর কালচারাল ডাইভারসিটি পদক অর্জন করেন। নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীশিক্ষার প্রতি তাঁর অঙ্গীকারের জন্য ২০১৪ সালে ইউনেস্কোর পিস ট্রি পুরস্কার এবং ২০১৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর নেতৃত্বের জন্য জাতিসংঘের চ্যাম্পিয়ন্স অফ দি আর্থ পুরস্কার প্রাপ্ত হন। ২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) আইসিটি সাসটেইনএবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। বাংলাদেশে কমিউনিটি রেডিও প্রবর্তনে তাঁর চিরোজ্জ্বল অবদানের অন্যন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি স্বরূপ জাতিসংঘের তথ্যসমাজ বিষয়ক বিশ্বসম্মেলন পুরস্কার ২০১৬ অর্জন করেছে বাংলাদেশ। লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ অবদানের জন্য ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কার অর্জন করেন। বিশ্বের স্বনামধন্য অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁর পরিবেশ বিষয়ক নীতি নির্ধারণ, শন্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছেন। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৩টি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন তিনি।
চার.
শেখ হাসিনার জন্ম হয়েছিল বলে তিনি দুঃখিনী বাঙলার কৃষক, শ্রমিক, আপামর মেহনতি মানুষের নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন। ‘অন্ধকারের সিন্ধুতীরে একলাটি ওই মেয়ে/আলোর নৌকা ভাসিয়ে দিল আকাশ-পানে চেয়ে’ রবীন্দ্রকাব্যের এ চরণ দুটি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য অনেকটা প্রযোজ্য। কারণ, তিনি যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন তখন ভগ্নহৃদয় নিয়ে আশাহীন, ভরসাহীন বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামের কথা মাথায় রেখেই বিপদসঙ্কুল - বন্ধুর পথটি বেছে নিয়েছিলেন। আজ বাংলাদেশসহ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কিছু কথা পাঠকদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরছি। বিশিষ্ট সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী আলাপচারিতার এক পর্যায়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের বিষয়ে জানার আগ্রহ প্রকাশ করলে বঙ্গবন্ধু বলেন, “আমার পরে কে তা নিয়ে আমি চিন্তাভাবনা করি না। এই দায়িত্ব পালন করবে ইতিহাস। আমার প্রবীণ ও নবীন সহকর্মীদের মধ্যে কে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা দেখিয়ে দেশ এবং দলের হাল ধরবে তা আমি নিজেও জানি না। এমন হতে পারে, আমার প্রবীণ ও নবীন সহকর্মীরা যোগ্যতা এবং সাহসের পরীক্ষায় অনেকেই হেরে গেল; সেখানে ইতিহাস এমন একজনকে নেতার পদে তুলে এনেছে, যার কথা আমি কোনোদিন ভাবিনি; তোমরাও ভাবছ না। বাংলাদেশে ইতিহাস এই চমক সৃষ্টি করতে পারে।” শান্তির অগ্রদূত শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের দায়িত্বভার গ্রহণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর একথা প্রমাণ করলেন।
পাঁচ
জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর জন্মদিনটি ঘটা করে পালন করতে অভ্যস্ত নন। জন্মদিনের কেক কেটে নয় বরং তাহাজ্জুদের নামাজসহ ফজরের নামাজ আদায় করে শাহাদৎবরণকারী বাবা, মা, তিন ভাই ও নিকটাত্মীয়-স্বজনসহ প্রয়াত সবার জন্য দোয়া করতেই তিনি অভ্যস্ত। তাঁর ধ্যান শুধু দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার। জন্মদিনেও তিনি থাকেন দায়িত্ব পালনে তৎপর। সারাদিন কর্মব্যস্ত থাকলেও প্রতি ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন যথাসময়ে। পত্রিকার সিঙ্গেল কলামে ছাপা ছোট একটি নিউজও তাঁর চোখ এড়ায় না। অবুঝ শিশুর একটি চিঠিও তাঁর কাছে মহামূল্যবান। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পটুয়াখালী সরকারি জুবলী উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শীর্ষেন্দু বিশ্বাসের লেখা চিঠি। হিন্দু পরিবারের সন্তান শীর্ষেন্দু পায়রা নদীতে ব্রীজ নির্মাণের দাবীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি চিঠি লিখেন। আর সেই চিঠি তাঁর হস্তগত হলে তিনি ওই ছাত্রের চিঠির আন্তরিক জবাব দিতে ভুলেননি। একই সঙ্গে দ্রুত নির্মাণের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সংশ্লিদের নির্দেশ দেন। যা নিয়ে গত কয়েকদিন গণমাধ্যম ও স্থানীয় প্রশাসন ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছে। তিনি এতোটাই সুন্দর মনের অধিকারী যে, এবারের ঈদুল আজহায় তাঁর দেয়া ঈদ শুভেচ্ছা কার্ডে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু শিল্পী প্রিয়াংকা দাসের আঁকা গ্রামের অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি ছবি ঠাঁই পেয়েছে, যা সর্বমহলে প্রশংসিত। তিনি দায়িত্ব পালনে এতটাই আন্তরিক যে, পুরান ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া নিঃস্ব পরিবারের তিন কন্যার দায়িত্ব নিয়ে ধুম-ধাম করে মাতৃস্নেহে তাঁদের বিয়ে দিয়েছেন। এখনও তিনি ওই তিন কন্যা ও তাঁদের সন্তানদের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন। তাছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অথবা বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ দেশের প্রবীণ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের খোঁজ-খবর নিতেও তিনি ভুল করেন না। সম্প্রতি তিনি অসুস্থ দেশবরেণ্য কবি সৈয়দ শামসুল হককে দেখতে হাসপাতালে ছুটে গেছেন। শুধু তা-ই নয়, সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, খেলোয়ারসহ অসংখ্য অসহায় ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যগণের পাশে তিনি দাঁড়িয়েছেন।
মনে আছে ময়মনসিংহের গফরগাঁয়ের হতদরিদ্র ভ্যানচালক হাসমত আলীর কথা। তিনি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে ‘এতিম কন্যা’ শেখ হাসিনার নামে একখণ্ড জমি লিখে দিয়েছিলেন। এ খবর পত্রিকার পাতায় পড়ে বঙ্গবন্ধুর স্নেহময়ী কন্যা হাসমত আলীর স্ত্রী রমিজাকে নিজ দপ্তরে এনে তারসঙ্গে কুশলবিনিময় করেন এবং আবেগতাড়িত হয়ে রমিজাকে মেয়ের আদরে জড়িয়ে ধরেন। পরে ওই জমিতে তিনি হাসমত আলীর স্ত্রীর জন্য একটি সুন্দর বাড়ি নির্মাণ করে দিয়ে তার উদ্বোধন করেন। ফিরিয়ে দেন হাসমত আলীর দেয়া দলিলও। এ বিরল ভালোবাসা নিয়ে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হচ্ছে মর্মে জানা গেছে। শুধু তা-ই নয়, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালের নামে অগ্নিসন্ত্রাসের সময় ককটেল বিস্ফোরণে আহত চট্টগ্রামের স্কুলছাত্রী অন্তু বড়ুয়ার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন তিনি। আর হরতালের নামে নৈরাজ্যের শিকার অগ্নিদগ্ধদের হাসপাতালে গিয়ে তাদের সহমর্মিতা জানাতেও তিনি ভুলে যাননি। এমন অসংখ্য বিরল ভালোবাসার উদারহরণ বঙ্গবন্ধু কন্যা সৃষ্টি করেছেন। তাঁর এ উদারতা, মহানুভবতা ও আন্তরিকতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি হিসেবে সমুজ্জ্বল থাকবে।
এক-এগারোর শুরুতেই আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে গৃহবন্দি করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৬ জুলাই তাঁকে সাব-জেলে কারাঅন্তরীণ করা হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তাঁর ৬০তম জন্মদিন ছিল। দিনটি ছিল শুক্রবার। সারাদেশে মিছিল-মিটিং নিষিদ্ধ। আর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তো নির্বাসনে। ঘরোয়া পরিবেশেও অনুষ্ঠান করার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-নেত্রী প্রকাশ্যে নেই। অনেকে জেলের ভয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাথে আঁতাত করেছে। কিন্তু তারপরও প্রিয় নেত্রীর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোর প্রবল ইচ্ছা জাগে মনে। নির্ভীকের মতো সকালে সাবজেলের সামনে গিয়ে আমার নেতৃত্বাধীন সংগঠন ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’র কয়েজন জড়ো হই। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের নারী নেত্রীরাও প্রিয় নেত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ফুল হাতে সাবজেলের সামনে গিয়ে হাজির হলেন। পুলিশের বাধার মুখে তারা সবাই ফুটপাতে বসে পড়লেন। আমরাও সেদিন তপ্ত রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে চোখের জল ফেলে ফুটপাতেই বসে রইলাম। ছোট্ট কণ্ঠে স্লোগানে, স্লোগানে জানালাম ‘শুভ, শুভ, শুভ দিন; শেখ হাসিনার জন্মদিন। শেখ হাসিনা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই।’ প্রিয় নেত্রীকে এক পলক দেখতে পারিনি; পারিনি জন্মদিনে সরাসরি শুভেচ্ছা জানাতে। কিন্তু তাতে কি হয়েছে? নেত্রী কারাঅন্তরীণ আর আমরা কয়েক শ’নেতা-কর্মী সাবজেলের বাইরে। বিকালে সাবজেলে গিয়ে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের (বর্তমানে মাননীয় সংসদ সদস্য) নেতৃতে কয়েকজন নিকটাত্মীয় কোরআন শরিফ, ইফতারসহ উপহার সামগ্রী নিয়ে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হলো। এ সময় কয়েকজন শিশুও তাঁকে শুভেচ্ছা জানানোর সুযোগ পেয়েছিল। বাইরে কি হচ্ছে নেত্রী সাবজেলে বসেই তা জানতে পেরেছিলেন। নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানানোর আবেগ তিনি ঠিকই হৃদয়াঙ্গম করেছেন। তাইতো নেত্রী সেদিন আবেঘন পরিবেশে বলেছিলেন, “ন্যায়বিচার পেলে আমি খুব শিগগির মুক্তি পাব।” বিকেলে ধানমন্ডির কার্যালয়ে আয়োজন করা হয় মিলাদ-মাহফিলের। সেখানে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে জননেতা জিল্লুর রহমান (পরবর্তীতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, বর্তমানে প্রয়াত) ঈদের আগেই নেত্রীর মুক্তি দাবি করে তাঁর জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর স্বামী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাথেও তিনি সাক্ষাৎ করে নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনের বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা নেন।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পক্ষ থেকে আমার নেতৃত্বাধীন সংগঠন ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রিয় নেত্রী , জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্তি দেয়ার জন্য সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিই, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। পরবর্তীতে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’র পক্ষ থেকে আমার নেতৃত্বে সংগঠনের প্রতিনিধিদল আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জননেতা জিল্লুর রহমানের বাসভবনে গিয়ে নেত্রীর মুক্তির আন্দোলন ত্বরান্বিত করার জন্য স্মারকলিপি প্রদান করি। সেখানে এখনকার শীর্ষ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে দেশ-বিদেশের প্রচণ্ড চাপের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হুঁশ ফিরলে নেত্রীকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। আজ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ আমাদের প্রিয় নেত্রী, প্রাণের নেত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা নেত্রীর জন্মদিন। মুক্ত পরিবেশে নেত্রীর জন্মদিন আজ। কিন্তু এবারও তিনি প্রবাসে। সেখানে আদরের ছোট বোন শেখ রেহানা, পুত্র বিশিষ্ট কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয়সহ নিকটাত্মীয়রা তাঁর শুভ জন্মদিন পালন করবেন। আমরা বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর কন্যার কোটি কোটি ভক্ত-অনুরক্তরা হাজার হাজার মাইল দূরে মহাসিন্ধুর এপার থেকে তাঁকে জানাই জন্মদিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা। সৃষ্টিকর্তা সহায় হোন।