বেসরকারি খাতে গতি আনতে ১ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বাবিউক) এখনো পর্যন্ত নিজেদের নিয়োগবিধি রচনার কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছে। ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার কোনো কাজে হাত দিতে পারেনি তারা।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিধান ঝুলে থাকায় এই প্রতিষ্ঠানে একীভূত হওয়া দুই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারীকরণ কমিশনের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা চাকরি নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তায় আছেন। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আগের সবাই এখানে নিয়োগ পাবেন।
নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেয়া উচিৎ বলে মনে করছেন রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পখাতের সাবেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সহসভাপতি এ এফ মুজতাহিদ। তিনি বলেন, বাবিউক প্রতিষ্ঠার দিকটি ইতিবাচক হলেও দক্ষ জনবল না নিলে এটি কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না।
এখানে দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তাদের নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, এই প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের সব বাধা দূর করবে। বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে নতুন এই প্রতিষ্ঠানে সত্যিকার অর্থেই ‘ওয়ান স্টপ’ সেবা থাকছে।
হয়নি নিয়োগবিধি, উদ্বেগে কর্মীরা
কোনো ধরনের নিয়োগবিধি ছাড়াই যাত্রা শুরু করেছে বাবিউক। ফলে আগের দুই প্রতিষ্ঠানের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা উদ্বেগের মধ্যে আছেন।
বাবিউক সূত্রে জানা যায়, এর জনবল কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। পদ অনুসারে সেখানে প্রশাসন ক্যাডারদের বেশ কয়েকজনকে এখানে রেখে দেয়া হবে। তবে নিয়োগবিধির অপেক্ষায় থাকা আগের দুই প্রতিষ্ঠানের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অস্বস্তিকর সময় পার করছেন। শেষ পর্যন্ত চাকরি থাকবে কি না, এই শঙ্কার মধ্যেও আছেন কেউ কেউ।
তবে বিনিয়োগ বোর্ডের পরিচালক তৌহিদুর রহমান খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কারো চাকরি যাবে না এটা নিশ্চিত। দুই সংস্থাতে এখন যাঁরা আছেন, নবগঠিত সংস্থায় তাঁদের সবাই থাকছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই আমরা নিয়োগ বিধিমালা নিয়ে কাজ করছি। বিধি চূড়ান্ত হলেই সবাই আবার এখানে কাজ করতে পারবে। কারো উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নাই।’
বাবিউক সূত্রে জানা যায়, এখানে ১৯ জন পরিচালক, ২৮ জন উপপরিচালক ও ৩৮ জন সহকারী পরিচালক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন হচ্ছেন এর সচিব।
এদিকে বাবিউকে আগের দুই প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তা যে থাকছেন না, সেটি প্রায় নিশ্চিত বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র।
দ্রুত নিয়োগবিধি চান নির্বাহী চেয়ারম্যান
বাবিউকের প্রথম নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন কাজী মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি এর আগে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব ও বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
আগামী তিন বছরের জন্য তিনি এ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন বলে এক আদেশে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পদাধিকার বলে তিনি বাবিউক গভর্নিং বোর্ডের সদস্য সচিবের দায়িত্বে থাকছেন।
নিয়োগের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সম্ভাবনা কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা এখন নির্ভর করছে আমাদের ওপর। বাংলাদেশের প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরতে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে; কাজ করতে হবে একসঙ্গে।’
প্রথমদিকে কোন কোন বিষয়ে নজর দিবেন- জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘আগে সংস্থার নিয়োগ বিধিমালার কাজ শেষ করি। পরে আপনাদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলবো।’
যারা এখন বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
প্রাইভেটাইজেশন কমিশন ও বিনিয়োগ বোর্ডের ১৯ কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ৬ সেপ্টেম্বর রাতে এ বিষয়ে আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এই আদেশ পাঁচ দিন আগে তথা ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর ধরা হয়েছে।
প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সদস্য ভূঁইয়া শফিকুল ইসলাম ও জিল্লার রহমানকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সচিব) করা হয়েছে।
এছাড়া প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের পরিচালক পদে থাকা কর্মকর্তা মো. সাইফুল হাসিব, বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী সদস্য এম আব্দুজ জাহের, মো. খায়রুল আনাম ও নাভাস চন্দ্র মন্ডলকে ওএসডি করা হয়।
তবে ৮ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ওএসডি দুই অতিরিক্ত সচিব মো. খায়রুল আনাম ও নাভাস চন্দ্র মন্ডলকে নির্বাহী সদস্য হিসেবে বাবিউকে বদলি করেছে। বিনিয়োগ বোর্ডে তারা একই পদে ছিলেন। প্রজ্ঞাপনে নতুন প্রতিষ্ঠানে তাদের কাজ শুরুর দিন দেখানো হয়েছে ১ সেপ্টেম্বর।
বিনিয়োগ বোর্ডের ১৩ যুগ্মসচিবকে ওএসডি করা হয়েছে। তারা হলেন, বিনিয়োগ বোর্ডের পরিচালক নীরঞ্জন কুমার মন্ডল, মঞ্জুরুল কাদের, তৌহিদুর রহমান খান, মো. মনির হোসেন, নিতাই পদ দাস, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. আব্দুল মতিন, জামশেদ আহমেদ, বেগম সাবিনা ইয়াসমিন, মো. মাহবুব কবির, মো. দেলোয়ার হোসেন এবং প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সচিব ড. সৈয়দ নেছার আহমেদ রুমি ও পরিচালক আলী ইউসুফ মুহাম্মদ সুলতান নুর।
তবে বাবিউকের কাজের জন্য এদের মধ্যে ছয় জন যুগ্ম সচিব তৌহিদুর রহমান খান, নীরঞ্জন কুমার মন্ডল, বেগম সাবিনা ইয়াসমিন, মো. মাহবুব কবির, মো. দেলোয়ার হোসেন ও মো. মনির হোসেনকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। ৮ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ক প্রজ্ঞাপনে অনুযায়ী, তাদের এই দায়িত্ব ১ সেপ্টেম্বর থেকেই শুরু হয়েছে।
এদিকে বিনিয়োগ বোর্ডের সচিব মো. আয়ুব আলী এবং চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব মো. আরিফুর হককে বাবিউকের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।