বাংলাদেশে হামলা পরিকল্পনার অভিযোগে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো ফেনীর পেয়ার আহমদ আকাশ জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র থেকে খোয়া যাওয়া এ কে ফোরটি সেভেন রাইফেল বিক্রির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। তখন তার ভগ্নিপতি ফেনী জামায়াতের নায়েবে আমির আবু ইউসুফের তদবিরে তিনি জামিন পান। এরপর মালয়েশিয়া পালিয়ে যান।
আকাশের বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, আকাশ ফেনী শহরের শাহীন একাডেমি স্কুল থেকে ১৯৯৩ সালে এসএসসি পাস করেন। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ভগ্নিপতি জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আবু ইউসুফের হাত ধরে শিবিরের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে অস্ত্র কেনাবেচায় জড়ান তিনি।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতায় জামায়াত ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সম্পৃক্ততার অভিযোগ করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানান, গত কয়েক বছরে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে যাদেরকে আটক করা হয়েছে তাদের একটি বড় অংশই জামায়াত শিবিরের বর্তমান সদস্য বা অতীতে সংগঠনের কর্মী ছিলেন।
গত ২৬ জুলাই মিরপুরের কল্যাণপুরের জাহাজবাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নিহতদের মধ্যে একজন ছিলেন নোয়াখালীর শিবির কর্মী যোবায়ের হোসেন। ওই আস্তানা থেকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার বগুড়ার হাসানও শিবির প্রভাবিত রেটিনা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়ার পরই পাল্টে যান বলে জানিয়েছেন তার মা রোকেয়া আক্তার। হাসান এইচএসসি পরীক্ষায় বেশিরভাগ বিষয়ে ফেল করার পরও তার রেটিনায় ভর্তি হওয়াটা অস্বাভাবিক ছিল-বলছেন তার কলেজের অধ্যক্ষ।
দেশের ভেতরের পাশাপাশি মালয়েশিয়া বসেও দেশে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলো সাবেক শিবির কর্মীর বিরুদ্ধে।
গত ১৯ আগস্ট মালয়েশিয়ায় জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর ২ সেপ্টেম্বর আকাশকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায় সে দেশের পুলিশ। আর দেশে আনার পর ফেনীর দাগনভুঁঞা থানা পুলিশে তাকে হস্তান্তর করা হয়। আর ২০০৫ সালের সেই এ কে ফোরটিসেভেন বিক্রির মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে পরদিন আদালতে তুলে পুলিশ। আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়।
মালয়েশিয়া পুলিশ জানিয়েছে, আকাশ সে দেশে পর্যটনকেন্দ্র বুকিত বিনতাংয়ে রেস্তোরাঁ চালাতেন। সেখানে গুলশান হামলায় জড়িত সন্দেহভাজন এক জঙ্গির সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছিল। গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় জড়িত একজনের সঙ্গেও তার বৈঠক হয়েছিল। পেয়ার তার দেশের আরও অনেকের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করতেন বলেও জানিয়েছে মালয়েশিয়ার পুলিশ।
শুক্রবার আকাশের বিষয়ে মালয়েশিয়ার গণমাধ্যম দ্য স্টার অনলাইনে তথ্য প্রকাশের পর এ নিয়ে ফেনীতে আলোড়ন তৈরি হয়। আকাশের বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে থাকে গণমাধ্যমকর্মীরা।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হওয়া ১০ ট্রাক অস্ত্রের মধ্যে কয়েকটি এ কে ফোরটিসেভেন রাইফেল বিক্রির অভিযোগে ২০০৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আকাশকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ওই বছর চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত শিবির ক্যাডার দেলোয়ারের কাছে আকাশ চারটি একে- ফোরটি সেভেন রাইফেল বিক্রি করেন আকাশ। দেলোয়ার র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার আগে এই তথ্য প্রকাশ করেন। ওই সূত্র ধরে র্যাব আকাশকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারে পর খোয়া যাওয়া অস্ত্র সর্ম্পকে তখন আকাশ জানিয়েছিল, পুলিশের সাজেন্ট আলাউদ্দিন ও সার্জেন্ট হেলাল উদ্দিনের যোগসাজসে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে অস্ত্রগুলো তিনি বিক্রি করেন। চট্টগ্রাম বন্দরে আসা ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালানের কথা তার আগে থেকে জানা ছিল বলেও তখন পুলিশকে জানিয়েছিলেন আকাশ।
২০১৪ সালের ১ এপ্রিল মধ্যরাতে চট্টগ্রামের সিইউএফএল জেটিঘাটে খালাসের সময় আটক হয় ১০ ট্রাক পরিমাণ অস্ত্র। এই মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি ১৪ জনের ফাঁসির আদেশ দেয় আদালত। জোট সরকারের আমলের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ছাড়াও দ-প্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এরই মধ্যে তার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।