জালিয়াতি: বাংলাদেশিদের জন্য ইতালির ভিসানীতি পরিবর্তন
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০৮:১৩:৫০আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১০:৩৫:২৯
ফ্যামিলি রি ইউনিয়ন ভিসা
জালিয়াতি: বাংলাদেশিদের জন্য ইতালির ভিসানীতি পরিবর্তন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ইতালির ফ্যামিলি রি ইউনিয়ন ভিসা পেতে ভুয়া কাগজপত্র ও জালিয়াতি ঠেকাতে ভিসা প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক নীতি পরিবর্তন করেছে ইতালীয় দূতাবাস। ভিসার আবেদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বাড়ি গিয়ে তার দেয়া তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই করার পাশাপাশি জালিয়াতি ধরা পড়লে তাৎক্ষণিক থানায় মামলা করা হচ্ছে।
চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গুলশান থানায় ইতালীয় দূতাবাসের ২৪টি মামলায় ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
এ ছাড়া ফ্যামিলি রি ইউনিয়ন ভিসার পরিবর্তিত নীতিতে ভিসা ফি বেড়েছে চার গুণ। ১২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে তা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১ হাজার টাকার মতো।
নতুন ভিসা নীতির কারণে অনেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, বিশেষ করে যারা এই নীতি বাস্তবায়নের আগে আবেদন করেছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাদের আবেদন দূতাবাসে পড়ে থাকলেও নতুন নিয়মের পর যারা আবেদন করছেন তাদের ভিসা হচ্ছে আগে আগে।
তথ্য জালিয়াতির অভিযোগে ইতালীয় দূতাবাসের মামলার বিষয়ে গুলশান থানা জানায়, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ-সংক্রান্ত ২৪টি মামলা করেছে দূতাবাস। ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ পেনাল কোডে করা এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৮ জনকে।
গুলশান থানার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি মাসে পৃথক ৯ মামলায় ১০ জনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে ৭ জানুয়ারি দুই মামলায় দুজন, ১০ জানুয়ারির এক মামলায় দুজন, ১১ জানুয়ারির চার মামলায় চারজন, ১২ জানুয়ারির মামলায় একজন ও ১৭ জানুয়ারির মামলায় একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ফেব্রুয়ারি মাসে পৃথক চার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় চারজনকে। তাদের মধ্যে রয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি এক মামলায় একজন ও ১০ ফেব্রুয়ারি তিন মামলায় তিনজন।
ফ্যামিলি রি ইউনিয়ন ভিসার আবেদনের ক্ষেত্রে জাল-জালিয়াতি ঠেকাতে মার্চ মাসে নতুন নিয়ম চালুর পর গত পাঁচ মাসে ১১টি মামলা করেছে ইতালীয় দূতাবাস, আর তাতে গ্রেপ্তার হয়েছে ১৩ জন।
এর মধ্যে রয়েছে ২৫ এপ্রিল এক মামলায় একজন, ১৭ মে এক মামলায় দুজন।
আগস্ট মাসে সাত মামলায় আটক হয়েছে সাতজন, যাদের মধ্যে রয়েছে ৪ আগস্ট দুই মামলায় তিনজন, ১৭ আগস্ট তিন মামলায় তিনজন, ২৫ আগস্ট এক মামলায় একজন ও ৩১ আগস্ট এক মামলায় একজন আসামি।
সবশেষে ৮ সেপ্টেম্বর এক মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে গুলশান থানার পুলিশ।
ইতালি প্রবাসী এক বাংলাদেশি নাম প্রকাশ না করা শর্তে অভিযোগ করেন, ফ্যামিলি রি ইউনিয়ন ভিসার আবেদনের নতুন নিয়মের পর ইতালীয় দূতাবাস পুরনো আবেদনকারীদের ভিসা ফাইল ঝুলিয়ে রাখছে মাসের পর মাস। নতুন নিয়মে ভিসা ফি চাহিদামতো জমা দেয়ার পরও অনেকে শিকার হচ্ছেন হয়রানির।
ওই প্রবাসী আরও বলেন, অনেক ভুক্তভোগী আছেন যারা ২০১৪ সালের শেষের দিকে বা ২০১৫ সালে ফ্যামিলি রি ইউনিয়ন ভিসার জন্য ফাইল জমা দিয়েছেন, কিন্তু তারা ভিসা পাননি এখনো।
গত ২৩ মার্চের আগে তখনকার নির্ধারিত ১২ হাজার ৫০০ টাকা ভিসা ফি দিয়ে জমা দেয়া ফাইল নতুন নিয়মে আবার যাচাই-বাচাই করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তাদের সবাইকে দূতাবাস থেকে ফোন করে বর্ধিত ৪০ হাজার ২৫০ টাকা জমা দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। এই টাকা জমা দেয়ার পর নতুন করে ভিসা প্রসেসিংয়ের কাজ আবার শুরু হবে।
জানা গেছে, নতুন নিয়মে ফ্যামিলি ভিসার আবেদন পাওয়ার পর ভিসা প্রসেসিংয়ের কাজের সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবেদনকারীর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছে ইতালীয় দূতাবাস। এ সময় জালিয়াতির প্রমাণ মিললে তাৎক্ষণিক মামলা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের থানায় ইতালীয় দূতাবাসের করা সব মামলাই জাল-জালিয়াতির অভিযোগে করা হয়েছে। তবে এসব মামলায় কতগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে আর কতগুলো পেন্ডিং রয়েছে, তা এখন বলতে পারছি না।’