রাজধানীর উত্তরা আবাসিক এলাকার তিন নম্বর সেক্টরের ১৪ নম্বর সড়ক। প্রায় এক দশক পর মেরামত হয়েছে সড়কটি। কিন্তু এই সুখ বেশিদিন সইলো না এলাকাবাসীর। দুই মাসের মধ্যেই সড়কটি কেটে ফেললো সরকারি সংস্থা ওয়াসা।
এই কাণ্ডে ভীষণ বিরক্ত স্থানীয়রা। ওই এলাকার বাসিন্দা আতিকুল্লাহ বলেন, ‘এটা কোনো কথা হলো? সড়ক যদি কাটতেই হতো তাহলে রাস্তা মেরামতের আগে কাটা হলো না কেন?’
রাজধানীতে এই সমস্যা নতুন নয়। একেক সময় রাস্তা কাটে একেক সেবা সংস্থা। এতে বছর জুড়ে ভোগান্তি রয়েই যায় নগরবাসীর। এই সমস্যা সমাধানে সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের দাবি জানাচ্ছেন নগরবাসী আর নগর পরিকল্পনাবিদরা।
সেবা সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের তাগিদ ও বাস্তবতা
আশার কথা হচ্ছে ইদানিং সেবা সংস্থার মধ্যে এই সমন্বয়ের কথা বলছে নগর কর্তৃপক্ষও। গত ২১ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কোনো সড়ক কাটার দরকার হলে সিটি করপোরেশনকে ছয় মাস আগে সময়সূচি জানাতে হবে।
এর তিন দিন পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ২৬টি সংস্থাকে নিয়ে বৈঠকে যে ২২টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় তার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘রোড কাটিং’। এতে বলা হয়, ‘পরস্পরের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় একেক সংস্থা একেক সময় ডিএনসিসির রাস্তা, ফুটপাত ইত্যাদি কাটাকাটি করে যা ব্যাপক দুর্ভোগের কারণ। তাই বছরের শুরুতে বিভিন্ন সংস্থা তাদের উন্নয়ন প্রকল্পের প্রয়োজনে যেসব রাস্তা, ফুটপাত বা অন্য কোনো অবকাঠামো কাটাকাটি করবে তার সুনির্দিষ্ট তালিকা আবশ্যিকভাবে ডিএনসিসিতে পাঠাবে।’
কিন্তু সিদ্ধান্ত তো হলো, তা কতটা মানা হচ্ছে? উত্তরার তিন নম্বর সেক্টরের উদাহরণ দিয়েই বলা যায়, মানা হচ্ছে না।
বাংলাদেশ প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান ইশরাত ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘একটি রাস্তা যখন নতুন হয় তখন সেই রাস্তায় যাতে নূন্যতম পাঁচ বছর হাত দিতে না হয় সেই রকম পরিকল্পনা করেই করা উচিত। কিন্তু মশকিলটা হচ্ছে- সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, ডেসাসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার মধ্যে সমন্বয় নেই। একারণে ওয়াসা কাজ করে তার মতো করে, ডেসা করে তার মতো করে আর সিটি করপোরেশন করে তার মতো করে। এ কারণেই ভোগান্তি লাগব হচ্ছে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে এই অধ্যাপক বলেন, ‘সিটি করপোরেশন যদি বলতো এই রাস্তা মেরামত করা হবে। এই রাস্তায় ওয়াসা, ডেসা বা অন্য কোনো সংস্থার কাজ বাকি থাকলে তা যেন শেষ করা হয়। কিন্তু সেটা না করাতে এই সমস্যা চলছেই।’
স্থানীয় প্রশাসন যা বলছে
গত কয়েক মাস ধরেই উত্তরা আবাসিক এলাকায় ভাঙা রাস্তা মেরামতের পাশাপাশি সরু রাস্তা চওড়া করা হচ্ছে। এতে দীর্ঘ ভোগান্তির অবসান হওয়ায় খুশি নগরবাসী। কিন্তু এর মধ্যেই আবার নতুন করে সংস্কার করা সড়ক কেটে লাইন বসাচ্ছে পানি ও পয়ঃসেবা দেয়া সরকারি সংস্থা ঢাকা ওয়াসা ও বিদ্যুৎ সেবা দেয়া সরকারি সংস্থা ডেসা। এদের কর্মকাণ্ডেই আবার তৈরি হচ্ছে বিরক্তি।
উত্তরার তিন নম্বর সেক্টরের ১৪ সড়কটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। সড়কটি সংস্কারের পর পরই কেন আবার কাটা হলো, সে বিষয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন আহমদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একাধিকবার ফোন করেও তার মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারার পর কথা হয় সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘সেক্টর সাত এর এ, বি ও সি ব্লকে পয়ঃনিষ্কাষণের কাজের জন্য রাস্তার ওই অংশটি কাটা হয়েছে। ১৪ নম্বর সেক্টরের পয়েন্ট রয়েছে স্ট্রম সোয়ারেজ লাইন। সেখানে এই সংযোগ মিশবে।’
রাস্তাটি মেরামতের আগে কি এই লাইনের কাজ করা যেতো না?- এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান ওই কর্মকর্তা। তবে ওই অঞ্চলের নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘কেউ অনুমতি নিয়ে কাটলে তো আমাদের কিছু করার থাকে না। ওয়াসা, ডেসা তাদের লাইন নেয়ার জন্য যখন অনুমতি চায় তখন তো দিতে হয়।’