নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নতুন কমিশনার নিয়োগ দিতে সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এরই মধ্যে ফাইল চালাচালি শুরু হয়েছে। তবে পুরো প্রক্রিয়া এখন পর্যন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে জানিয়ে এ বিষয়ে বিভাগের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে চাইছেন না।
বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি। অর্থাৎ তাদের হাতে পাঁচ মাসের কম সময় বাকি আছে। এই সময়ের আগেই নতুন কমিশনের জন্য কমিশনার নিয়োগে যাচাই-বাছাই শেষ করতে হবে। এ জন্য নাম প্রস্তাব করতে বুধবার সার্চ কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতিকে দেয়া হয়েছে। এ এখতিয়ার প্রয়োগে রাষ্ট্রপতি স্বাধীন নন। ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে এ নিয়োগ দিতে হয়। তবে ২০১২ সালে বর্তমান কমিশনের নিয়োগ হয় সার্চ কমিটির মাধ্যমে। সে সময় প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। আর দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতেই গঠন করা হয় নির্বাচন কমিশন। এবারও এই প্রক্রিয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনারদের নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে সরকারের সূত্রগুলো।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে বিভাগ সার্চ কমিটি গঠনের জন্য একটি প্রস্তাব তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে যোগদান শেষে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফাইলটি তোলা হবে। তিনি তা অনুমোদন করলে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে তা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য ১০ জনের নাম প্রস্তাব করা হবে। এর মধ্যে থেকে পাঁচজনকে নিয়োগ দেয়া হবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘২০১২ সালে যে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বর্তমান ইসি গঠন করা হয়েছিল, সে প্রক্রিয়া এখনো বিদ্যমান। অতএব নতুন আইন প্রণয়ন না হলেও সার্চ কমিটি গঠন করেই নতুন ইসি সদস্য নিয়োগ দেয়া হবে।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দলের লক্ষ্য- জাতীয় নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করা। এজন্য সব গ্রহণযোগ্য, স্বাধীন এবং শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন চান। আর এই কমিশন গঠন নিয়ে যেন বিতর্ক না হয় সে জন্যই সার্চ কমিটির মাধ্যমে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে কমিশন গঠনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।’
সার্চ কমিটি গঠনের এই আনুষ্ঠানিকতা এখনো পরিণতি না পেলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতারা এরই মধ্যে এ নিয়ে কথা বলা শুরু করেছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এরই মধ্যে সার্চ কমিটি গঠনের আগেই আলোচনা চেয়েছেন।
বিএনপির নেতারা বলছেন, সার্চ কমিটির নামে নিজেদের পছন্দের লোকদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের চেষ্টা করা হলে তারা মেনে নেবেন না। ‘পক্ষপাতমূলক নির্বাচন কমিশন গঠন’ করলে আন্দোলনের হুমকিও দেন তারা। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেয়া হবে বলেও জানান দলটির নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র বায় ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সার্চ কমিটিতে অবশ্যই নিরপেক্ষ লোক থাকতে হবে। নইলে এই প্রক্রিয়াতেও নিরপেক্ষ নির্বা্চন কমিশন গঠন করা যাবে না।’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের দলের লক্ষ্য- জাতীয় নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করা। এ জন্য আমরা গ্রহণযোগ্য, স্বাধীন এবং শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন চাই। সার্চ কমিটি করে যদি এটা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে আমরা একে স্বাগত জানাবো।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেবেন। এ বিষয়ে আমাদের বিশেষ কোনো প্রস্তাব নেই।’
বিএনপির দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে হানিফ বলেন, ‘তারা কেন এ নিয়ে এক কথা বলে। তাদের সরকারের আমলে তারা তো নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী আজিজ মার্কা কমিশন গঠন করেছিল। আমরা তো এমন করিনি। তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই তো বর্তমান কমিশন গঠন করা হয়েছে।