রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে আজিমউদ্দিন যাবেন শনির আখড়ায়। তার সঙ্গে পরিবারের আরো দুই সদস্য। অনেক অপেক্ষার পর একটি সিএনজিচালিত (সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস) অটোরিকশা পেলেন। মিটারে ভাড়া ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা উঠতে পারে। কিন্তু চালক মিটারে যেতে রাজি নন। আজিমউদ্দিনের কাছে দাবি করলেন ৩৫০ টাকা। মৃদু আপত্তির পর তাতেই রাজি হলেন তিনি। বললেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া না দিয়ে উপায় নেই। মিটারে কেউ যাবে না। ইচ্ছামতো ভাড়া চায়। মিটারের আশায় থেকে আর কত সময় নষ্ট করব।’
মিটার কার্যকর করার অজুহাত দেখিয়ে গত কয়েক বছরে কয়েক দফা বেড়েছে সিএনজি অটোরিকশার মিটারের ভাড়া। মিটারের পরিবর্তে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি ভাড়া বাড়ানোর পর প্রতিবারই দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু তার হুঁশিয়ারি ‘মেঠো বক্তব্য’ হয়ে থাকছে। বেশিরভাগ অটোরিকশাচালক মিটার মানছেন না। কেউ কেউ মিটারের ভাড়ার সঙ্গে আবার অতিরিক্ত টাকা দাবি করছেন। কেউ আবার কারসাজির মাধ্যমে মিটারের ভাড়া বাড়িয়ে যাত্রীদের ঠকাচ্ছেন। অন্যদিকে যাত্রীর দরকার মতো গন্তব্যে যাওয়াবিষয়ক সড়ক পরিবহনমন্ত্রীর ঘোষণাও থোড়াই কেয়ার করছেন তারা।
২০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার কমলাপুর রেলস্টেশনের কাছে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কে বেশকিছু সিএনজি অটোরিকশা দাঁড়িয়ে আছে। যাত্রীরা মিটারের কথা বললে কোনো চালকই যেতে রাজি হচ্ছে না। যারা রাজি, তারা আবার মিটারের ভাড়ার সঙ্গে বাড়তি ২০-৩০ টাকা দাবি করছেন। এ বিষয়ে সিএনজি অটোরিকশাচালক মো. ফরহাদ বলেন, ‘মালিককে প্রতিদিন দিতে হয় ৯০০ টাকা। সারাদিনের খরচ আরও ৫০০ টাকা। এই টাকা তুলতে আমাদের অনেক সময় লাগে। তাই ১০-২০ টাকা বেশি নেই সব যাত্রীর কাছ থেকে।’
আরেক চালক মোহাম্মদ সুমন বলেন, ‘প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ৪০ টাকা এবং এর পরের প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১২ টাকা সরকার নির্ধারিত। এই ভাড়ায় গেলে আমাদের পোষায় না।’ তবে মিটারে নির্ধারিত ভাড়া আগের চুক্তিভিত্তিক ভাড়ার প্রায় কাছাকাছি বলে একাধিক যাত্রী দাবি করলেন। এ বিষয়ে বাড্ডার বাসিন্দা মশিউর রহমান বলেন, ‘বাড্ডা থেকে মগবাজার গেলে মিটারে উঠে ১০০ টাকা। কিন্তু যানজট হলে এই ভাড়া ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। মিটার না মানলে খরচ হয় ২০০ টাকার বেশি। চালকদের এখন সবদিকেই সুবিধা।’
সিলেট থেকে সম্প্রতি ঢাকায় আসা সাব্বির আহমেদ চালকদের চালাকির অন্য এক রূপ তুলে ধরলেন। তিনি জানালেন, ঢাকা শহরের অলিগলি এখনো ঠিকমতো চেনেন না। মিটারে যেতে রাজি হয়ে এক চালক তাকে অনেক ঘুরিয়ে গন্তব্যে নিয়ে গেছেন। মিটারে বিল উঠেছিল ৬০০ টাকার বেশি। পরে বুঝেছেন সেখানে বিল হতে পারে ৩০০ টাকা।
সিএনজি অটোরিকশাচালকদের দৌরাত্ম্য সম্পর্কে মতিঝিল ট্রাফিক জোনের একজন পুলিশ সদস্য বললেন, ‘যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে এটা ঠিক। আবার কিছু যাত্রীরও সমস্যা আছে। যানজট থাকলে চালকরা মিটারে যেতে চায়, আর যানজট না থাকলে যাত্রীরা মিটারে যেতে চায়। রাস্তায় যদি সিএনজি অটোরিকশা ধরি মিটারে না গিয়েও অনেক যাত্রী বলে মিটারে যাচ্ছি। তখন আমাদের কিছু করার থাকে না। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে চালকদের বিরুদ্ধে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেই।’
সিএনজি অটোরিকশার মিটারের ভাড়া বাস্তবে থাকছে না কেন জানতে চাইলে ঢাকা জেলা ফোর স্ট্রোক অটোরিকশা ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল আহমেদ বলেন, সরকার নির্ধারিত জমা ৯০০ টাকা হলেও কোনো মালিক এক হাজার, কেউ এক হাজার একশ টাকা করে জমা নিচ্ছে। এই অতিরিক্ত জমা-খরচ উঠাতে গিয়ে মিটারের ভাড়ার চেয়ে ১০-২০ টাকা বেশি চান চালকরা।
মিটার কার্যকরে যাত্রীদের সচেতনতার ওপর জোর দিলেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ট্রাফিক জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আবু ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করছি। কিন্তু অভিযানের সময় প্রায় প্রতিটি সিএনজির যাত্রী বলেন যে, তারা মিটারেই যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে তো আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না।’