প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০৮:৩৫:৪৫আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০৯:১৭:৩৯
টাম্পাকোর ওয়েবসাইটে শ্রমিক নিরাপত্তার বুলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
টাম্পাকো ফয়লস লিমিটেডের ওয়েবসাইটে শ্রমিক কল্যাণ ও নিরাপত্তার নানান ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। তবে বাস্তবে যে এর কোনো বালাই ছিলো না, তা বয়লার বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ২৫ জনের প্রাণহানি ও ৪০ জনের আহত হওয়ার মধ্য দিয়ে জানা গেল।
দেশের প্যাকেজিং শিল্পের অগ্রপথিক দাবিদার টাম্পাকো বরাবরই ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করে আরও বেশি মুনাফা করার দিকে মনযোগী ছিলো। এমন বার্তা দিচ্ছে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটের তথ্যাবলি। সেখানে থাকা এর চেয়ারম্যান সৈয়দ মকবুল হোসেনের বার্তা থেকেও মেলে একই রকম ইঙ্গিত।
ওয়েবসাইটের তথ্য থেকে জানা যায়, টাম্পাকোর যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৮ সালে। কাগজ, ফিল্ম, ফয়েল ও কালি নিয়েই তাদের কারবার। দেশের সবচেয়ে বড় ও প্রধান প্যাকেজিং শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের জাহির করছে তারা। এই শিল্পে নিত্য-নতুন ধ্যান-ধারণা যুক্ত করার কথা বলছে তারা। ক্রেতাদের গুণগত মানের প্যাকেজিং পণ্য দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে তারা দাবি করছে, তাদের কারখানায় বিশ্বমানের প্রযুক্তি ও ছাপাই উপকরণ জড়ো করা হয়েছে। তাদের দাবি, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, তাইওয়ান ও ভারত থেকে আনা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে তারা। তবে এগুলোর মেয়াদ কতো দিন ছিলো, তা নিয়ে কোনো তথ্য নেই। অবশ্য তারা নিরাপদ যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ব্যবহারে যে সেভাবে মনযোগী ছিলো না তা বয়লার বিস্ফোরণের মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয়েছে।
টাম্পাকোর ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে, শ্রমবান্ধব পরিবেশ আছে তাদের প্রতিষ্ঠানে। শ্রমিক নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থা রাখারও দাবি করা হচ্ছে। দুর্যোগ প্রতিরোধে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা রাখার কথা বলছে তারা। কর্মীদের অগ্নি নিরাপত্তা ও প্রাথমিক চিকিৎসায় প্রশিক্ষিত করার দাবিও আছে ওয়েবসাইটে। তবে বাস্তবে তা কাজে আসলো না কেন, সেই প্রশ্ন এখন উঠতে বাধ্য।
কারণ শনিবার ভোরের দিকে বয়লার বিস্ফোরিত হলে পাঁচ তলা ওই কারখানা ভবনে আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা গভীর রাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন; কিন্তু বিভিন্ন ফ্লোরে মাঝে-মধ্যে আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছিল সকালেও।
বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৩ জন, আরও প্রায় ৪০ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সিলেটের বিএনপির সাবেক সাংসদ সৈয়দ মকবুল হোসেনের মালিকানাধীন ওই কারখানায় সাড়ে চারশর মতো শ্রমিক থাকলেও শুক্রবার রাতের পালায় ৭৫ জনের মতো কাজ করছিলেন। শনিবার ঈদের ছুটি হওয়ার কথা ছিল।
ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ওয়েবসাইটে সৈয়দ মকবুল হোসেনের শেষ কথা এমন- ‘লক্ষ্য পূরণের মাধ্যমে আমরা অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এর মাধ্যমে আমরা দক্ষতারও পরিচয় দিয়েছি। প্যাকেজিং শিল্পে সেরা থাকার পথ আমাদের জানা।’
সেরা হতে, সুদক্ষ হতে যাদের শ্রম-ঘামের যোগ আছে, তাদের নিরাপত্তার কথা আসলে কতটা ভেবেছিলেন সৈয়দ মকবুল হোসেন?