প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০৮:৩৭:৪১আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১০:৫৫:২১
মায়ের সহযোগিতায় আট বছর ধরে ধর্ষণ: থানায় মামলা
আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
মেয়েটির বয়স এখন ১৮। গত আটটি বছর যে দুঃসহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তাকে যেতে হয়েছে সেটা কখনও লিখে বর্ণনা করা যাবে না। মেয়েটির অভিযোগ, ১০ বছর বয়স থেকেই বিকৃত যৌনাচারের শিকার হতে হয়েছে তাকে। আর এই কাজে সহযোগিতা করেছেন তার নিজের মা।
মেয়েটির অভিযোগ, ১৩ বছর বয়সে একবার গর্ভবতীও হতে হয়েছে তাকে। এরপর তার মা হাসপাতালে নিয়ে সে বাচ্চা নষ্ট করেছেন। এরপর গত ছয় বছরে আরও নানা ঘটনা ঘটেছে তার জীবনে। এরপর একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাস্টিস ফর উইমেন বাংলাদেশের সহযোগিতায় গত রবিবার মেয়েটি মামলা করেছে রাজধানীর মুগদা থানায়।
মামলায় মেয়েটি সৎ বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছে বলে জানিয়েছেন মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হক। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক, কিন্তু নিজের বাবার বিরুদ্ধেও ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা আছে।’
এনামুল হক বলেন, ‘মেয়েটি এনজিওর কাছে কী বলেছে জানি না, তবে আমার থানায় যে মামলা আছে তাতে তার সৎ বাবাকেই একমাত্র আসামি করা হয়েছে। অবশ্য এই মামলাই শেষ কথা না, তদন্ত হবে, আমরাও জিজ্ঞাসাবাদ করবো। তার মা বা অন্য কারও সহযোগিতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদেরকেও আসামি করা হবে।’
মামলার পর মেয়েটির সৎ বাবার পাশাপাশি তার মাও পালিয়ে গেছেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। জানান, মা ও সৎ বাবাকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশে ভুক্তভোগী ওই তরুণীকে টঙ্গীর নিরাপত্তা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
যে দুঃসহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে মেয়েটিকে
জাস্টিস ফর ওমেন বাংলাদেশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে জানান, মেয়েটার বাবা বিদেশে থাকতেন। তার অনুপস্থিতির সময়ে মেয়েটির মায়ের সঙ্গে ঢাকার এক ব্যক্তির সম্পর্ক তৈরি হয়। মেয়েটির বয়স যখন আট থেকে নয় বছর তখন থেকেই তার মায়ের পরকীয়া প্রেমিক নিজেকে ওই মেয়েটার মামা পরিচয় দিয়ে মুগদার মদিনাবাগের বাসায় আসা যাওয়া করতেন। ওই মেয়ের বয়স যখন ১০ বছর তখন থেকেই তাকে তার মা জোর করে ওই তথাকথিত মামার কাছে পাঠাত রাতে ঘুমানোর জন্য। এটুকু বয়সেই বিকৃত যৌনাচারের শিকার হয়েছে মেয়েটি।
আজ থেকে বছর আগে মেয়েটির বয়স যখন ১৩ বছর, তখন মায়ের প্রেমিকের কারণে সন্তান আসে মেয়েটির পেটে। ঘটনাটি মাকেও জানানোর পরও তিনি রাজধানীর একটি হাসপাতালে নিয়ে সেই ছয় মাস বয়সী ওই বাচ্চা নষ্ট করেন।
জাস্টিস ফর উইমেন বাংলাদেশের ওই কর্মকর্তা জানান, বাচ্চা নষ্ট করার সময় মেয়েটির মা মালিবাগের একটি হাসপাতালে ভুল তথ্য দেন। মেয়েটির বয়স ১৩ হলেও হাসপাতালকে জানানো হয় ১৭ বছর।
২০১১ সালে মেয়েটির বাবা দেশে এসে মায়ের পরকীয়ার কাহিনি জেনে তাকে তালাক দেন। মেয়েকে তিনি নিয়ে যেতে চাইলেও মায়ের কারণে নিতে পারেননি। এরপর গত পাঁচ বছর ধরেই মায়ের কাছে থাকছে মেয়েটি।
মেয়েটির মা ২০১১ সালে তার সেই প্রমিককে বিয়ে করেন। এরপর থেকে মেয়েটির ওপর নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। অগুনতি বার বার তাকে ধর্ষিত হতে হয়েছে। সবশেষ দুই সপ্তাহ আগেও মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয় বলে জানিয়েছেন জাস্টিস ফর উইমেন এর কর্মকর্তারা।
মামলায় বলা হয়, কেবল সৎ বাবা না, বাদীর বড় বোনের স্বামীও তাকে কয়েকবার ধর্ষণ করেছে। মেয়েটিকে পড়ালেখাও করতে দেয়া হয়নি। নিজের সন্তানকে নিয়ে মা কেন এমন কাজ করলেন-এই প্রশ্নের জবাবে জাস্টিস ফর উইমেনের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মেয়েটির মাও বিকৃত মানসিকতার মানুষ বলে মনে হয়েছে আমাদের কাছে।’