প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০৮:৪১:১৯আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ২০:০০:০২
সবই চাই তাদের
বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
‘এক নেতা এক পদ’ নীতি কার্যকর করতে পারছে না বিএনপি। ছয় মাস আগে নেয়া এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে নেতাদের কেউ কেউ এক বা একাধিক পদ ছাড়লেও এখনও বেশিরভাগ নেতাই একাধিক পদ ছাড়তে রাজি হচ্ছেন না। বারবার তাগাদা দেয়ার পরও তারা দুই বা ততোধিক পদ আঁকড়ে ধরে আছেন।
এই অবস্থায় এবার খালেদা জিয়া কেন্দ্র থেকেই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার মতো অবস্থায় যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কয়েকজনকে বিশেষ দায়িত্বও দিয়েছেন তিনি।
নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল ঠেকাতে গত মার্চের জাতীয় সম্মেলনেই বিএনপিকে ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি গ্রহণ করা হয় সর্বসম্মতভাবে। তখন কেউ এর বিরোধিতা করেননি। বিএনপির আশা ছিল, এভাবে দলের অনেক বেশি নেতাকে পদ দেয়া সম্ভব হবে। এতে করে বঞ্চনাবোধ কমে আসবে। ফলে দল আরও সংগঠিত হওয়ার পাশাপাশি আন্দোলন বা অন্য কর্মসূচিতে একাট্টা হয়ে নামবেন সব পর্যায়ের নেতা এবং তাদের অনুসারীরা।
গত আগস্টে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার আগেই কেন্দ্রীয় বহু নেতার জেলা-উপজেলা বা সহযোগী সংগঠনের পদ রয়ে গিয়েছিল। তবে জাতীয় সম্মেলনের পর নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি-এই কারণ দেখিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা আঞ্চলিক পদগুলো দখল করে রেখেছিলেন। কিন্তু আগস্টে কমিটি ঘোষণার পর নানা যুক্তি দেখিয়ে এসব পদও দখল করে আছেন তারা।
এখনো একাধিক পদ ছাড়েননি যারা
একাধিক পদে আছেন এমন নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক কমিটিতে আছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আ স ম হান্নান শাহ, রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এখনো ছাড়েননি ঢাকা মহানগরের পদ। যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল এখনো ছাড়েননি মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির পদ। অবশ্য গ্রেপ্তার এড়াতে দীর্ঘদিন ধরে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।
ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে একাধিক পদে রয়েছেন আলতাফ হোসেন চৌধুরী পটুয়াখালী জেলার সভাপতি। শামসুজ্জামান দুদু কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক ও চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির পদ, মাজিদুল ইসলাম খুলনা জেলা সভাপতি পদে রয়েছেন।
নতুন কমিটির উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতির পদে, মসিউর রহমান ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি, মেহেদী আহমেদ রুমী কুষ্টিয়া জেলার সভাপতি, আবুল খায়ের ভূঁইয়া লক্ষ্মীপুর জেলা সভাপতি ও ঢাকা মহানগর বিএনপি, তৈমুর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি, এ কে এম মোশাররফ হোসেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা সভাপতির পদেও রয়েছেন।
ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন গাজীপুর জেলার সভাপতি, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার বরিশাল মহানগরের সভাপতি, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ছাড়েননি নরসিংদী জেলার সভাপতির পদ।
রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু লালমনিরহাট জেলা সভাপতির পদ, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোর জেলা বিএনপি সভাপতি, খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতির পদও ধরে রেখেছেন।
এ ছাড়া বিএনপির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক স্থানীয় বিভিন্ন পদে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে থাকা নেতাদের মধ্যে বিশেষ সম্পাদক নাদিম মোস্তফা রাজশাহী জেলা সভাপতি, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম ঢাকা মহানগর বিএনপির পদ, জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া ফরিদপুর জেলার সভাপতি, সহ-পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক মোজাহার আলী প্রধান জয়পুরহাট জেলার সভাপতির পদে রয়েছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম বগুড়া জেলার সভাপতি, এম নাছের রহমান মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি, জি কে গউছ হবিগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক। আনোয়ার হোসাইন শ্রমিক দলের সভাপতি, শফিকুর রহমান কিরণ শরীয়তপুর জেলার সভাপতি, কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল গাজীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক, সৈয়দ মোদারেছ আলী ইসা ফরিদপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক, ওয়ারেছ আলী মামুন জামালপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক, হুমায়ুন কবির খান তাঁতীদলের সভাপতি, রফিকুল ইসলাম মাহতাব মৎস্যজীবী দলের সভাপতি, মীর সরফত আলী সপু স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক, মনির খান জাসাস সাধারণ সম্পাদক, শফিউল বারী বাবু স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক, গাজী নুরুজ্জামান বাবুল পিরোজপুর জেলা সভাপতি, আলমগীর হোসেন পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ বরিশাল উত্তর জেলা সভাপতি ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বরিশাল উত্তর জেলা সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন।
‘একাধিক পদ ছাড়ছে দুর্বল হবে দল’
‘এক নেতার এক পদ’ নীতি কার্যকরের সিদ্ধান্ত হলেও যারা এখনো একাধিক পদে আছেন, তারা নিজেদের মতো করে নানা যুক্তি দিচ্ছেন। কেউ বলছেন জেলার পদ ছেড়ে দিলে সংগঠনের অবস্থা নাজুক হয়ে যাবে। তাই আরেকটু গুছিয়ে নিতে চান তারা।
কেউ আবার বলছেন, তৃণমূলের পদ ছেড়ে দিলে সরকারের রোষানলের সামনে দল টিকতে পারবে না। নেতাকর্মীরা নির্যাতন- নিপীড়নের শিকার হবে। তাই কেন্দ্রকে বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখার পরামর্শ তাদের।
একাধিক পদধারীতে একজন খায়রুল কবির খোকন। জেলার পদ ছাড়ছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দমন-পীড়নের মধ্যেও জেলার সাংগঠনিক শক্তি জোরালো করতে কাজ করেছি। কিন্তু হঠাৎ ছেড়ে দিলে সেটি আবার ধ্বংস হয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস কেন্দ্র যোগ্য কাউকে দায়িত্ব দেয়ার সময়টুকু দিবেন।’
আর মজিবুর রহমান সরোয়ারের ভাষ্য, দলের সিদ্ধান্ত মানতে আপত্তি নেই। তবে অনেক প্রশ্ন থেকে যাবে।’
ঢাকাটাইমসকে খোকন বলেন, ‘দলে এক নেতার এক পদ নীতি কার্যকর হলেও চেয়ারপারসন বিশেষ প্রয়োজনে যে কাউকে একাধিক পদে রাখতে পারবেন এমন এখতিয়ারও তার আছে। দেখি শেষ পর্যন্ত কী হয়।’
কঠোর হচ্ছেন খালেদা জিয়া
বারবার তাগাদা দেয়ার পরও নেতাদের মধ্যে একাধিক পদ না ছাড়ায় এবার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এবার খালেদা জিয়া কঠোর হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন নেতারা। দায়িত্বপ্রাপ্তদের সে অনুযায়ী নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। তবে কবে এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে পরিষ্কার কোনো তথ্য নেই কারও কাছে।
এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এখনও আশা করছেন তারা ব্যবস্থা নেয়ার আগেই একাধিক পদধারীরা একটি পদ রেখে বাকিগুলো নিজে থেকেই ছেড়ে দেবেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ে ‘এক নেতার এক পদ’ কার্যকর করতে সম্প্রতি কেন্দ্র থেকে তৎপরতা শুরু করে বিএনপি। শুরুতে গত ১৫ আগস্ট দলের যৌথ সভায় বিএনপির মহাসচিব একাধিক পদ আছে এমন নেতাদের পছন্দের পদ রেখে বাকিটা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানান। অন্যথায় দলের পক্ষ থেকে চিহ্নিত করা ৪৮ নেতার কাছে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়, যারা কেন্দ্রের নির্বাহী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন।
এই কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত মো.শাহজাহানের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা কার্যকর করতে আমরা বদ্ধপরিকর। যারা এখনো একাধিক পদে আছেন তাদের মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। পরে চিঠি দেয়া হবে। তাতে কোনো কাজ না হলে দলীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
একাধিক পদ ছেড়েছেন যারা
মহাসচিবের পদ রেখে বাকি পদ ছেড়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে ঝালকাঠি জেলা সভাপতির পদ ছেড়েছেন শাহজাহান ওমর, নোয়াখালী জেলা সভাপতির পদ ছেড়েছেন মো.শাহজাহান, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি আহমদ আজম খান,ঢাকা মহানগরের পদ ছেড়েছেন আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতির পদ ছেড়েছেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
উপদেষ্টাদের মধ্যে ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদকের পদ ছেড়েছেন আমান উল্লাহ আমান, জয়নাল আবদিন ফারুক ছেড়েছেন সেনবাগ উপজেলা বিএনপির পদ, যুবদলের সভাপতির পদ ছেড়েছেন যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল,বরিশাল মহানগর মহিলা দলের সভাপতির পদ ছেড়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, মৎস্যজীবী দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ ছেড়েছেন কুমিল্লা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান।
এ ছাড়া মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ রেখে কেন্দ্রীয় স্বনির্ভর সম্পাদকের পদ ছেড়েছেন শিরিন সুলতানা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও কেন্দ্রীয় সহ-মানবাধিকার সম্পাদকের পদ ছেড়েছেন আসিফা আশরাফী পাপিয়া।
আফরোজা খান রিতা মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি পদ রেখে উপদেষ্টা থেকে সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছার কথা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনকে চিঠি দিয়েছেন।