সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অ্যাকাউন্টে খুব বেশি সাড়া নেই। বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গত ১ সেপ্টেম্বর দলের ফেসবুক ও নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট খোলেন বিএনপি নেত্রী। এর দুই সপ্তাহ পরও তার সেসব অ্যাকাউন্টে দলের জনপ্রিয়তার তুলনায় তেমন লাইক পড়েনি। ফলোয়ারের সংখ্যাও খুব একটা বেশি নয়।
দেশের প্রধান দুটি দলের একটি বিএনপি। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত চার বার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে দলটি। দেশে তো বটেই, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও ব্যাপক জনপ্রিয় দলটি। এই বাস্তবতাতে খালেদার উদ্বোধন করা বিএনপির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও বিএনপি নেত্রীর টুইটার অ্যাকাউন্টে সেভাবে সাড়া না পড়ার বিষয়ে কিছুটা অবাকই হয়েছেন বিএনপির নেতারা।
বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচার প্রচারণার আগ্রহ কম। মূলত মাঝারি পর্যায়ের তরুণ নেতারাই এসব প্রযুক্তি বেশি ব্যবহার করছেন।
বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সবে তো যাত্রা সবে মাত্র শুরু হয়েছে। আগামীতে এগুলোর প্রচার প্রচারণার জন্য আলাদা একটি টেকনিক্যাল শাখা কাজ করবে। আশা করি তখন নেতাকর্মীরা ব্যাপকভাবে সক্রিয় হবে এবং লাইক ও ফলোয়ারের সংখ্যাও আশাতীত হবে।’
জানতে চাইলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ম্যাডামের অ্যাকাউন্টের বিষয়ে আলাদা কোনো নির্দেশনা নেই। তবে আমি ফেসবুকে লাইক দিয়েছি। আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করলে এসব অ্যাকাউন্টে লাইক ও ফলোয়ারের সংখ্যা বাড়বে। আর ম্যাডামের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরও দ্রুত ছড়িয়ে যাবে।’
বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি বলেন, ‘আসলে আমাদের নেতা-কর্মীদের বেশিরভাগই ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছে। ম্যাডামও হজ করতে সৌদি আরব আছেন। নেতা-কর্মীরা ফেরার পাশাপাশি ম্যাডামও দেশে চলে আসবেন। তারপর বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে এর প্রচার প্রচারণার বিষয়ে আমরা কাজ করবো।’
ভুয়া অ্যাকাউন্টে ফলোআরের অভাব নেই
এতদিন খালেদা জিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না থাকলেও তার নামে ভুয়া অ্যাকাউণ্টের অভাব নেই। কেবল ফেসবুকেই বেগম খালেদা জিয়া নামে অন্তত ১৮টি অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায়। এগুলোতে লাইক এবং ফলোয়ারের সংখ্যা ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ পর্যন্ত দেখা গেছে।
এসব ভুয়া নামে খোলা বেশিরভাগ অ্যাকাউন্টেই রাজনৈতিক বিষয়ে নানা পোস্ট আছে। খালেদা জিয়ার নামে নানা পোস্টে সরকারবিরোধী নানা বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। আছে বিভিন্ন সংবাদপত্রের কাটিং এবং ভিডিওচিত্রও। এসব পোস্টে বিএনপিমনারা নানা রকম মন্তব্যও পোস্ট করে যাচ্ছেন।
একইভাবে খালেদা জিয়ার নামে টুইটারে অন্তত ১১টি ভুয়া অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায়। এগুলোতেও বিএনপি নেত্রীর নামেই নানা বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়।
আসল অ্যাকাউন্টের জনপ্রিয়তা কম
বিভিন্ন ভুয়া অ্যাকাউন্টে লাইক বা ফলোয়ারের সংখ্যা এখনও যত বাড়ছে, খালেদা জিয়া নিজের ও বিএনপির আসল অ্যাকাউন্টে লাইক বা ফলোয়ারের সংখ্যা তত বাড়ছে না। এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার খোলা বিএনপির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লাইকের সংখ্যা হয়েছে ৬২ হাজার ৬০৬। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে লাইক বেড়েছে চার হাজারেরও কম। গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে লাইক বৃদ্ধির হার কমেছে ৪০ শতাংশ।
একইভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার আগ মুহূর্তে টুইটারে খালেদা জিয়ার ফলোয়ারের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৯৫৮ জন। অর্থাৎ দিনে ফলোয়ারের সংখ্যা বেড়েছে আটশর কিছু বেশি। অথচ বিএনপি নেত্রী যখন তার অ্যাকাউন্ট উদ্বোধন করেন তার তিন ঘণ্টার মধ্যেই টুইটারে ফলোয়ারের সংখ্যা দাড়ায় ১৭১ এ।
নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে খুব বেশি সক্রিয় নন খালেদা জিয়া নিজেও। ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই প্রতিবেদন প্রকাশ পর্যন্ত আটটি টুইট করেছেন বিএনপি নেত্রী। বিএনপি নেত্রী সবশেষ টুইটে গত ১১ সেপ্টেম্বর দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বিএনপির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট উদ্বোধনের পাশাপাশি গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির একটি ব্লগ অ্যাকাউন্টও খোলেন খালেদা জিয়া। এই অ্যাকাউন্টটির নাম রাখা হয়েছে বাংলাদেশ ভয়েস। সেটিতে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি লেখা আপলোড করা হয়েছে। এর একটি লেখা হয়েছে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌ রুট কী ক্ষতি করতে পারে সেসব বিষয়ে। অপর ব্লগটি বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর আকারে তৈরি একটি লেখা। প্রথম দুটি লেখা ইংরেজিতে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হলে সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতি হবে। আরেকটি লেখা বাংলায়। সেটি ডয়চে ভেলে থেকে সংগৃহীত।