২০১৫-১৬ সেশনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি কলেজে স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন তরিকুল ইসলাম। তার প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার সময়সূচি ঠিক হয়েছে চলতি বছরের অক্টোবরে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এত আগে আগে কখনো প্রথম বর্ষ পরীক্ষা নেয়া হয়নি। এই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের এক দিনের জন্যও সেশনজটে পড়তে হবে না।
গত ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে যারা ভর্তি হয়েছিলেন, তাদেরও একই অবস্থা। তাদের প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে। তারাও কোনো সেশনজটে পড়বে না। এই দুই বর্ষের শিক্ষার্থীরা চার বছরের মধ্যেই অনার্স কোর্স শেষ করবে বলে আশা করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
অথচ বছর তিনেক আগেও পরিস্থিতি এ রকম ছিল না। চার বছরের অনার্স কোর্স শেষ করতে কখনো সাত বছর, কখনো বা তার চেয়ে বেশি সময় লেগে যেত। এ কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা বরাবরই গররাজি ছিলেন।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ আসার পর সেশনজট নিরসনে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মধ্যে আছে ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’। এই বিশেষ প্রোগ্রামের মাধ্যমে লক্ষ্য ঠিক করা হয় ২০১৮ সালের পর আর সেশনজট থাকবে না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সারা দেশে দুই হাজার ২০০ কলেজে অনার্স কোর্স চালু আছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ছাত্রসংখ্যার দিক দিয়ে ঢাউস এই বিশ্ববিদ্যালয়ে লাখ দশেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। এর মধ্যে প্রথম বর্ষে পড়ছে প্রায় আড়াই লাখ।
নয় মাসে শিক্ষাবর্ষ
নয় মাস শিক্ষাবর্ষ ধরে সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে ফল প্রকাশের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এগিয়ে নেওয়ার কর্মসূচি হলো ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’।
২০১৫ সালের জানুয়ারি এই বিশেষ প্রোগ্রাম চালু করা হয়। এই প্রোগ্রাম অনুযায়ী ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ক্লাস শুরু থেকে পরীক্ষা পর্যন্ত নয় মাস করে শিক্ষাবর্ষ ধরা হয়েছে। এর সুফল মিলেছে অনেক বেশি। ফলে গতি এসেছে এক সময়ে সেশনজটে নিমজ্জিত থাকা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।
জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই বিশেষ প্রোগ্রামের ২০১৫ সালে যারা ভর্তি হয়েছে তাদের পরীক্ষা ওই বছরই হয়ে গেছে। চলমান সেশনে যারা ভর্তি হয়েছে তাদের পরীক্ষা হবে অক্টোবরে। অর্থাৎ এই সেশনগুলোতে আর জট হবে না। তারা চার বছরেই অনার্স শেষ করবে। ক্রাশ প্রোগ্রাম না হলে এটা সম্ভব হতো না। আমরা যেভাবে এগোচ্ছি তাতে ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে সেশনজটমুক্ত হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ নামের এই কর্মসূচি ঘোষণার পর যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণ ও নির্ধারিত তারিখে ফলও প্রকাশ হচ্ছে। এই কর্মসূচির পর পরীক্ষাগুলো নির্ধারিত সময়ে গ্রহণ ও ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
২০১৩ সালের ডিগ্রি পাস কোর্সের পরীক্ষা ২০১৫ সালের ১৮ এপ্রিল শুরু করে শেষ হয় ২০ জুন। এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর। ২০১৪ সালের অনার্স পার্ট-ওয়ান পরীক্ষা ২০১৫ সালের ২১ মে শুরু করে শেষ হয় ৬ জুলাই, ওই বছরের ৫ অক্টোবর ফল প্রকাশ করা হয়। ২০১৪ সালের অনার্স পার্ট-টু পরীক্ষা ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল শুরু হয়ে শেষ হয়েছে গত ২৭ মে। এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয় ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর।
২০১৩ সালের অনার্স পার্ট-থ্রি এর পরীক্ষা গত ১০ জুন শুরু হয়ে শেষ হয় ৮ জুলাই। এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয় ওই বছরের অক্টোবরে।
উপাচার্য বলছেন, কেন্দ্রীভূত প্রশাসন, গতানুগতিক প্রশাসন পরিচালনা ও পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা এবং হরতালের মত রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে দীর্ঘ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজট তৈরি হয়।
ক্রাশ প্রোগ্রামে যা আছে
ক্রাশ প্রোগ্রামে স্নাতকে ২১০ দিন ক্লাস, ফরম পূরণে ১৫ দিন, পরীক্ষা ৫৫ দিনে, ফল প্রকাশ করা হচ্ছে ৯০ দিনে। প্রতিটি ক্লাস নেয়া হচ্ছে ৬০ মিনিটে। এর আগে ক্লাসে ২৪০ দিন, ফরম পূরণে ৩০ দিন, পরীক্ষায় ৭৫ দিন, ফলাফলে ১২০ দিন সময় ছিল। আর তখন ক্লাস নেয়া হতো ক্লাস ৪৫ মিনিট। মাস্টার্সেও এভাবে সময় কমিয়ে আনার কথা বলা হয়। এতে ২০১৭ সালের মধ্যে পুরাতন সব বর্ষের শিক্ষার্থীরা সেশনজটমুক্ত হতে পারবে। আর ২০১৮ সালের মধ্যে পুরোপুরি সেশনজটমুক্ত হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম গ্রহণের পর পরীক্ষাগুলো যথাসময়ে অনুষ্ঠিত ও ফলাফলও নির্ধারিত দিনে প্রকাশ হয়েছে। সকালে ক্লাস নিয়ে বিকালে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসের কোনো ক্ষতি না হয়।’ ক্রাশ প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে শিক্ষকরা কঠোর পরিশ্রম করে সাহায্য করছেন বলে জানান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান।