চৈত্রের খরার শেষ দিনে পাঁচ, ১০ বা ১৫ হাজার টাকাতেও ইলিশ কেনার লোকের অভাব পড়ে না। অথচ তখন ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মাছটি ধরা নিষেধ। নিজেদের শুদ্ধ ও ধন্য বাঙালি হিসেবে প্রকাশ করতে ঝাপিয়ে পড়ে উচ্চমূল্যেও ইলিশ কিনতে পিছপা হন না অনেকে। তারা আজ যদি ১৫০ টাকার ইলিশ ২৫০ টাকাতেও কিনেন, তাহলে মেঘনা পারের মাঝিদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হতে পারে, এরা কয়টা টাকা নিজেদের করে পেতে পারে।
কিন্তু আপনারা তা করবেন না। কারণ চৈত্রের শেষ দিনের হাজার হাজার টাকা মধ্যসত্ত্বভোগীকে দিয়েই আপনার পৈশাচিক আনন্দ! চৈত্রের জাটকার জন্য হাজার হাজার টাকা নষ্ট না করে সঠিক সময়ের রুপালী ইলিশ খেয়ে গরিব কুবেরদের বাঁচান। এতে আপনার মনুষ্যত্ব বাঁচবে!
আমরা বরাবরই হুজুগে মাতি। লোক দেখানোতে আমাদের অতি আহ্লাদপনা নিজেদেরকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যায় তা অনুধাবন করার ক্ষমতা যদি থাকতো, তবে আমাদের সমাজটা এমন হতো না। আজ যখন খবরে দেখি ইলিশের সারি সারি ঝুড়ি রাস্তার পাশে পড়ে থাকছে, ক্রেতা আর বরফের অভাবে নষ্ট হচ্ছে, তখন চোখের সামনে ভেসে উঠে গেল বৈশাখে খরার সময়ে একটা ইলিশের জন্য কতজনের হাহাকার! কত বেদনার্ত ফেইসবুক স্টেটাস!
ভেসে উঠে সেই সকল নির্লজ্জ বৈশাখ উদযাপনকারীদের চেহারা, যারা কিনা ১৪, ১৫ বা ১৭ হাজার টাকায় একজোড়া ইলিশ কিনে ছবি আপলোড করেছিলেন। যারা এক প্লেট পান্তা ইলিশ হাজার টাকা খরচ করে গেলার আগে সেলফি দিয়েছিলেন! আজ লজ্জা লাগে, কেউ গিয়ে ঐ কুবেরদের কাছ থেকে দুই পয়সা বেশি দিয়ে পাঁচটা ইলিশ এক বা দেড় হাজার টাকায়ও কিনছেন না। ছবি দিচ্ছেন না ফেইসবুকে।
আরে, এখন সময় ইলিশের। এখন ন্যায্যদামে দুটা ইলিশ খেলে তা হবে আমাদের কুবের শ্রেণির জন্য আশীর্বাদ। এরা এই সময়টাতেই দুই পয়সা বাড়তি রোজগার করতে পারে। আসুন, ওদের সাহায্য করি, নিজেরও রসনা বিলাস করি। এতে কোন লজ্জা নেই, বরং আছে গর্ব। অসময়ে জাটকার উপর হামলে না পড়ে, সুসময়ে দেশের একটা শ্রেণির ভাগ্য বদলের যুদ্ধে সহায়তা করা।
মানুষের একটি বড় অংশই ব্যতিক্রমের কাছে নিজেকে সোপর্দ করতে দ্বিধা করেন না। তাই স্বাভাবিকটাকে কেউ গুরুত্ব দিতে চায় না। অথচ সেই সাধারণ কর্মটিই বদলে দিতে পারে আমাদের আশপাশের অহেতুক অনিয়মগুলো। পান্তার সঙ্গে ইলিশ খেলেই কেবল পহেলা বৈশাখ উদযাপন যথার্থ হবে, এমনটি বাংলার ইতিহাসের কোথাও নেই। বরং শুকনো মরিচ আর লবণ দিয়ে দিনটি শুরু করে দেখবেন। বুঝতে পারবেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য।
আসুন, বর্ষার ইলিশ বর্ষায় আর চৈত্রের কাঁচা তাল চৈত্রেই খাই। অসময়ে বিনাসের পথে না হেঁটে বরং সুসময়ে সবার পাশে থাকি, এতে দেশেরই মঙ্গল।