কলকাতা আমাকে প্রথম কে চিনিয়েছিল তা খুব ভালো করে বলতে পারব না। দেশ পত্রিকার কল্যাণে কলকাতাকে প্রথম জানি আমি। আরেকটু গুছিয়ে বললে, সুনীল আর শংকরের উপন্যাস আমাকে এ সময়ের কলকাতা এবং তার পথ-ঘাট-বাজার-লোকালয়ের নাম চেনায়। আমরা এখন যে বাংলাটা লিখি বা পড়ি তার সূচনা উনিশ শতকে, অই কলকাতা থেকেই। তার আগে আনুমানিক নবম শতাব্দীতে বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনার সূত্রপাত হয়। দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত বৌদ্ধ দোঁহা-সংকলন চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্য ছিল কাব্যপ্রধান। হিন্দুধর্ম, ইসলাম ও বাংলার লৌকিক ধর্মবিশ্বাসগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল এই সময়কার বাংলা সাহিত্য। মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব পদাবলি, শাক্তপদাবলি, চৈতন্য জীবনী, রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবতের বঙ্গানুবাদ, রোমান্টিক প্রণয়োগাভান দো-ভাষী পুঁথিসাহিত্য, নাথসাহিত্য, বাউল পদাবলি এবং ইসলামি ধর্মসাহিত্য ছিল এই সাহিত্যের মূল বিষয়। বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার সূত্রপাত হয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার নবজাগরণের যুগে কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে বাংলা সাহিত্যে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। এই সময় থেকে ধর্মীয় বিষয়বস্তুর বদলে মানুষ, মানবতাবাদ ও মানব-মনস্তত্ত্ব বাংলা সাহিত্যের প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর বাংলা সাহিত্যও দুটি ধারায় বিভক্ত হয় : কলকাতাকেন্দ্রিক পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য ও ঢাকাকেন্দ্রিক পূর্ব পাকিস্তান-বাংলাদেশের সাহিত্য। বর্তমানে বাংলা সাহিত্য বিশ্বের একটি অন্যতম সমৃদ্ধ সাহিত্যধারা হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। আশির দশকে আমি ‘আউট বই’য়ের পাঠক হই। প্রথম যে কয়টি বই পড়ে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম সেগুলো ছিল সবই কলকাতার লেখকদের। এঁদের মধ্যে ছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ফালগুনী মুখোপাধ্যায়, নীহাররঞ্জন গুপ্ত, যাযাবর, নিমাই ভট্টাচার্য প্রমুখ। এঁদের পরে আমি ‘শংকর’ ধরি। শংকরের কত অজানারে, যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ, চৌরঙ্গীÑ এগুলোর কথা মনে ছিল। শংকরের কাছ থেকেই আমার ‘চৌরঙ্গী’ নামটি জানা। কলকাতায় প্রথমবার এসে দেখি, সেই চৌরঙ্গী। সেই গ্রান্ড হোটেল। শংকর এই গ্রান্ড হোটেলে কাজ করতেন জনসংযোগ বিভাগে। এই হোটেলের অভিজ্ঞতা তিনি লিখেছেন সেই বইগুলোতে। আমার প্রথম সফরেই কলকাতা এসে আমি এই লেখকদের দেখার জন্য অস্থির হয়ে যাই। আনন্দবাজারে ৪৫ মিনিট