প্রকাশ : ১৫ জুলাই, ২০১৫ ১২:১৩:২০আপডেট : ১৫ জুলাই, ২০১৫ ১২:১৬:০৮
দিনলিপি
মুখপঞ্জির বিচিত্র লেখা
নির্মলেন্দু গুণ
কবি রাজু আলাউদ্দিনের জন্য সমবেদনা
তোমার কষ্টের যে একটা বিশেষ কারণ রয়েছে, সে কথা তো সবাই জানে না। আমি জানি বলেই খেলাটি দেখার সময় তোমার কথা আমি বিশেষভাবে মনে করেছি। গত বিশ্বকাপের ফাইনালে হল্যান্ড যখন স্পেনের কাছে অতিরিক্ত সময়ের শেষ-পর্বে গিয়ে একমাত্র গোলে পরাজিত হয়েছিলো- তখন আমার খুব কষ্ট হয়েছিলো। রেফারি সেদিন যদি হল্যান্ডের ডিফেন্সের একজন খেলোয়াড়কে লালকার্ড না দিতেন, তাহলে স্পেন জিততে পারতো না। খেলাটি টাইব্রেকারে গড়াতো।
পরদিন প্রথম আলোতে আমি লিখেছিলাম, ‘হল্যান্ড, তোমার চোখের জল আমার চোখে দাও।’
তিনবার ফাইনালে গিয়েও হল্যান্ড একবারও কাপ জিততে পারেনি। আমি চাই এবার সে জিতুক।
বিশ্বকাপ ফুটবলের খেলাগুলোকে মৃত্যুর সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। অর্ধেক হাসি আর অর্ধেক কান্না দিয়ে মোড়া এই বিশ্ব-আয়োজন। একের ভিতরে দুই। হাসি আর কান্না।
স্মরণ করতে বলি আমার ‘ফুটবলবন্দনা’ কবিতার একটি স্তবক। ‘...বল যেই স্পর্শ করে গোল পোস্টে পাতা জাল/ কেহ কাঁদে, কেহ হাসে/ কেহ অশ্রুজলে ভাসে/ কেহ হয় বিশ্বজয়ের আনন্দে মাতাল।’
তোমার ও তোমার মেক্সিকান স্ত্রীর জন্য আমার গভীর সমবেদনা। দুঃখ করো না, বাঁচো। খেলা দেখো, আনন্দ করো।
৩০.০৬.২০১৪
নেঈমার কি পরিকল্পিত আক্রমণের শিকার?
টিভিতে খেলা চলাকালে যতটা দেখেছিলাম, তাতে আমার মনে হয়নি যে ওই হস্তিসদৃশ কলম্বি^য়ান খেলোয়াড়টি ইচ্ছাকৃতভাবে নেঈমারকে ফাউল করেছে। কিন্তু পরে সংশ্লিষ্ট ছবিটি দেখার পর আমার মনে হয়েছে, উড়ন্ত বলে হেড করার ছলে আকাশে লাফিয়ে উঠে তার দশাসই দেহের সমস্ত ওজন নিয়ে নেঈমারের পিঠের ওপর পরিকল্পিতভাবেই ক্রাশ-ল্যান্ডিং করেছে কলম্বিয়ার হুয়ান কামিলো।
খেলা চলাকালে ভেবেছিলাম নেঈমার তো একটু হালকা-পাতলা ধরনের, তাই ওই দৈত্যটির ভারে লুটিয়ে পড়েছে মাটিতে। আঘাত তেমন গুরুতর নয়।
এই ছবিটি দেখে আমার সেই ধারণা সম্পূর্ণ পাল্টে গেলো। উহু, বলে হেড করার জন্য মোটেও নয়, কামিলোর অকারণে আকাশে লাফিয়ে ওঠার পেছনে ওর মনের ভিতরে একটা কু-পরিকল্পনা লুকিয়ে ছিলো। নেঈমারের পিঠের ওপর কামিলোর অবতরণের ছবিটি দেখে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। হুয়ান কামিলোর চোখ-মুখ, চোয়াল ও হাতের পেশি ও হাঁটুর ভঙ্গির মধ্যে হিং¯্রতার সুস্পষ্ট প্রকাশ আমি দেখতে পাচ্ছি। আশা করি ফিফা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবে। খেলার ভিডিও ফুটেজ নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করবে। করা উচিত।
আমি মনে করি, উরুগুয়ের ফুটবলার সুয়ারেজ ইতালির জর্জিও কিয়েল্লিনের ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দিয়ে যে অপরাধ করেছে, কলম্বিয়ান খেলোয়াড়টির অপরাধ তা থেকে মোটেও কম কিছু নয়।
বিশ্বকাপের রেফারিদের চোখ ততটা নির্ভরযোগ্য নয় যে, তা কিয়াল্লিনির ঘাড়ে সুয়ারেজের কামড় বসানোর ঘটনাটি থেকে আমরা জানতে পেরেছি। প্রতিপক্ষের ঘাড়ে কামড় বসানোর শাস্তি সুয়ারেজ মাঠের ভিতরে না পেলেও, মাঠের বাইরে পেয়েছে। অথচ রেফারি ঘটনাটি দেখেও দেখেননি। চেষ্টা করেও রেফারির সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি ঘাড়ে কামড়-খাওয়া সেই ইতালিয়ান খেলোয়াড়- জর্জিও কিয়েল্লিনি। কিন্তু পরে বিয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে ফিফা মাঠের বাইরে বসে সুয়ারেজকে শাস্তি দিয়ে মুখ রক্ষার চেষ্টা করেছে।
আমি মনে করি, একইসঙ্গে দরকার ছিলো রেফারিকেও ভর্ৎসনা করা।
রেফারির দৃষ্টি এড়িয়ে (দেখে না-দেখাও হতে পারে) সম্পাদিত অপরাধের জন্য খেলার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হুয়ান কামিলো নামের ওই কলম্বিয়ান দস্যুটিকেও ফিফা শাস্তি দিতে পারে বৈকি। সুয়ারেজকে পারলে, হুয়ান কামিলোকে কেন নয়?
০৫.০৭.২০১৪
সুমির কাছে খোলা চিঠি
সুমি, এতো মন খারাপ করো না। যে প্রশ্নটা আমি অনেকদিন আগে থেকে করে আসছি, তা আবার আজও বলি, ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা আমাদের কে? সারা ফুটবলবিশ্বই আমাদের বন্ধু। সব বন্ধুরাই আমাদের কাছে কুটুম্ববৎ। জাপান আমাদের সবচেয়ে বড় সাহায্যদাতা দেশ। বিশ্বকাপে তাদের আমরা সমর্থন করি না। মুসলমান দেশ হিসেবে ইরানকেও আমরা সমর্থন করিনি। এশীয় দেশগুলোর কোনো পতাকা আমার চোখে পড়েনি ঢাকার কোনো বাড়ির ছাদে।
ভালো খেলাই যদি আমাদের সমর্থনের ভিত্তি হয় তবে জার্মানি তো ভালো খেলেই জিতেছে। সে তিনবারের বিশ্বকাপ জয়ী। তার জয়ে খুশি হও। গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় দিয়েছে হল্যান্ড। তাকে সমর্থন করো।
যাকে সমর্থন করি তার পরাজয়টাই শুধু বড় হয়ে বুকে বাজবে, আর প্রতিপক্ষের বিজয়ের নান্দনিক সৌন্দর্যটা আমাদের চোখের জলে ভেসে যাবে? একবারও চোখে পড়বে না, এ কেমন কথা?
তবে এটা মানি জার্মানির কাছে ব্রাজিলের পরাজয়ের ব্যবধানটা বড়ই দুঃখজনক। এটা একটা বিশ্ব রেকর্ড। এ রকম বড় ব্যবধানে বিশ্বকাপ ফুটবলের সেমিফাইনালে আর কেউ কখনও হারেনি। হঠাৎ করে নেঈমার আর রক্ষণভাগের (নামটা ভুলে গেছি) ওই ছেলেটা না-থাকার ধাক্কাটা সামলে উঠতে পারেনি ব্রাজিল। জার্মান তার সুযোগ পুরোপুরি নিয়েছে।
সুনীল গাভাসকার একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, আমি যখন আউট হই তখন দর্শকরা আমার নিন্দা করেন, কিন্তু আমি যে বোলারের করা একটা আনপ্লেয়েবল ভালো বলে আউট হয়েছি, সে কথা তারা বলেন না। বোলারের প্রশংসা করতে তারা ভুলে যান। তাদের কাছে আমার আউট হওয়াটাই যেন অপরাধ।
আমার কাছে তোমার মুখশ্রী ব্রাজিলের বিরুদ্ধে জার্মানির নান্দনিক বিজয়ের চেয়েও সুন্দর। ব্রাজিলের পরাজয়ের বেদনায় সেই মুখে দুঃখের কালো ছায়া পড়–ক, তা আমি চাই না। প্রাণখুলে হাসো। আনন্দ করো। মনে হচ্ছে- গত বিশ্বকাপের মতো এবারের বিশ্বকাপটিও ইউরোপীয় কাপেই পরিণত হতে চলেছে। জার্মানির কাছে বড় ব্যবধানে ব্রাজিলের পরাজয়ের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়বে আর্জেন্টাইন শিবিরে।
১৬টি গোল করে বিশ্বকাপ ফুটবলের নতুন রেকর্ড গড়ার জন্য আমরা উষ্ণ-অভিনন্দন জানাই জার্মানির বর্ষীয়ান স্ট্রাইকার মিরোসøাভ ক্লোসাকে ।
০৯.০৭.২০১৪
গভরমেন্টের টাকা
[মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত,
প্রিয় মুহিত ভাইকে, তাঁর আশি বছর পূর্তিতে
এই কবিতাটি তাঁকে উৎসর্গ করা হলো।]
আম উঠেছে, জাম উঠেছে, কাঁঠাল পাকা-পাকা,
কিন্তু কিছুই কেনা যাচ্ছে না, পকেটে নেই টাকা।
‘কোথায় পাবো টাকা? কোথায় গেছে টাকা?’
ধমক দিয়ে বাবা বললেন, ‘পকেট আমার ফাঁকা।’
মায়ের কথা কী আর বলবো, টাকার কথা শুনে,
জ্বলে উঠলেন তেলে-বেগুনে : ‘চুরি করবো নাকি?’
অগত্যা তার বিশ্ববেকার কাকা ছিলেন বাকি,
খোকন গেলো কাকার কাছে ছুটে।
বায়না শুনে কাকা বললেন,
‘বটে, এই বয়সেই চিনে গেছিস, বাহ।’
খোকন বললো, ‘নাহ, তুমি দিলেই চিনবো।
দাওনা কাকা- একটা জিনিস কিনবো।’
কাকা তখন পকেট থেকে একটা টাকা এনে,
হেসে বললেন- ‘নে নে।’
খোকন দেখলো- টাকা কোথায়? রঙিন কাগজ।
তার উপরে রঙিন ছবি আঁকা।
তবে কিনা কাগজটা বেশ কড়কড়ে ও শক্ত।
তাই কি সবাই এই কাগজের ভক্ত?
ছোট্ট খোকন ভেবে পায় না,
কেমন করে কাগজ হলো টাকা।
সে বললো- ‘কাকা, টাকা মানে কি
কাগজে হরিণ আঁকা?’
কাকা দেখলেন- ভারী বিপদ,
এই বয়সেই কী মারাত্মক প্রশ্ন।
নাছোড়বান্দা ছেলে। হেসে বললেন-
‘এমন উদ্ভট প্রশ্ন কোথায় পেলে?’
খোকন বললো- ‘কোথায় আবার, মাথায়।
আচ্ছা কাকা, আমি যদি অনেকগুলি
হরিণ আঁকি খাতায়, অনেক টাকা হবে?’
যেন গলায় ব্যাঙ ঢুকেছে, এমনিভাবে কেশে,
কাকা ভাবলেন, ছেলেটা কি পাগল হবে শেষে?
নিয়ম আছে, নম্বর আছে, আছে জলের ছাপ।
না-না, এসব কথা চিন্তা করাও পাপ।
হেসে বললেন হাত ঢুকিয়ে ইস্ত্রি করা প্যান্টে-
‘আমরা আঁকলে হবে না হে,
কাগজগুলি টাকা হবে আঁকলে গভরমেন্টে।’
১১.০৭.২০৪
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সমীপে
ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ত রাজপথের পাশে বিলবোর্ডে আমার ছবি। প্রচারেÑ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ সরকার। আমার একই ছবি সম্বলিত এ রকম দুটো বিলবোর্ড টানানো হয়েছে। একটা বিজয় সরণিতে, অন্যটি আনন্দ সিনেমা হলের পাশে, ফার্মগেইটে। ছবিতে আমি দেশের সক্ষম নাগরিকদের উদ্দেশে যথাসময়ে কর প্রদানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আমার মতো একজন সামান্য কবির আহ্বানে দেশের ধনবান নাগরিকরা সাড়া দেবেনÑআমার ওপর এ রকম আস্থা রাখার জন্য রাজস্ব বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাই।
যদিও এখনও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আমাকে কোনো সম্মানী প্রদান করেননি, নিশ্চয়ই করবে বলেই আমার আশা। আশা এ জন্য যে, রাজপথের পাশে টানানো বিলবোর্ড-এ দাঁড়িয়ে আমি দেশের সক্ষম নাগরিকদের কর প্রদানের জন্য উৎসাহিত করবো, আর আমাদের সক্ষম সরকার আমার মতো কর প্রদানে অক্ষম একজন কবিকে এ জন্য কোনো সম্মানী দেবেন নাÑএটা হতেই পারে না। বিষয়টির প্রতি আমি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সম্মানী চাইছি বলে আবার আমার ছবিযুক্ত বিল বোর্ড দুটো নামিয়ে ফেলবেন না। আমি কিন্তু খুবই খুশি হয়েছি বিলবোর্ডে আমার বিরাট ছবি দেখে।
বিলবোর্ড নামিয়ে ফেলার চিন্তাটা আমার মাথায় এলো এ কারণে যে, এমনটা একবার হয়েছে।
বিটিভি আমার কবিতার ওপর সুরারোপিত একটি গান ( স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো) বছরের পর বছর বাজিয়েছে। এক পর্যায়ে আমি গানের জন্য সম্মানী দাবি করলে বিটিভি আমাকে কিছু সম্মানী প্রদান করে বটে কিন্তু সম্মানী প্রদানে বাধ্য হওয়ার বদলা নিতে ওই গানটির প্রচার বন্ধ করে দেয়। অথচ গানটি ছিলো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত। সুতরাং বুঝুন অবস্থা।
আমি কিন্তু ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রত্যাশা করি না।
ছবি দুটো আমি আমার মুঠোফোনে কাল রাতে তুলেছি। তাই কিছুটা অস্পষ্ট দেখাচ্ছে। কিন্তু আমাকে খুব সুন্দর না দেখালেওÑ চেনা যাচ্ছে। তাই না?
১৬.০৭.২০১৪
শাস্তিযোগ্য অপরাধ
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর- খুনিচক্রের অন্যতম মেজর ডালিম তৎকালীন বাংলাদেশ বেতার থেকে দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর উদ্দেশে খবরটি সদম্ভে প্রচার করতে শুরু করেন। মেজর ডালিমের কণ্ঠোচ্চারিত ওই খবরটি কিছুক্ষণ পরপরই প্রচারিত হতে থাকে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরপরই বঙ্গবন্ধু খুনিরা বাংলাদেশে আরও দুটো হত্যাকা- ঘটায়।
১। বাংলাদেশ বেতারকে হত্যা করে তারা বাংলাদেশ বেতারের নতুন নাম রাখে, ‘রেডিও বাংলাদেশ।’
২। এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ভিতর দিয়ে অর্জিত জাতীয় ধ্বনি- ‘জয় বাংলা’র পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ উচ্চারণ করার ভিতর দিয়ে তারা রেডিও-অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করে।
উল্লেখ্য, পূর্ণ-পাকিস্তানের জীবদ্দশায় ‘রেডিও পাকিস্তান’ এবং ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’-ই বলা হতো। পাকিস্তানে এখনো তাই বলা হয়।
এই ইতিহাসই যদি সত্য হয়ে থাকে- তাহলে, যাহা ‘জয় বাংলা’ তাহাই ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ এমন কথা বলাটা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ভিতর দিয়ে, লক্ষ-প্রাণের মূল্যে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি বিদ্রƒপবৎ এবং নিশ্চিতভাবেই একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
২০.০৭.২০১৪
একটি সুসংবাদ
ইয়াহুহুহু! আমার লেখায় কাজ হয়েছে। আজ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিরুদ্ধে আনীত আমার অভিযোগটির নিষ্পত্তি হয়েছে। মূসক দিবসের প্রচারণায় বিজয় সরণি ও ফার্মগেটে টানানো বিশালাকায় বিল বোর্ডে আমার ছবি ব্যবহার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আমাকে সম্মানী প্রদান করেছে। শুধু আমাকে নয়, বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে আমার লেখার প্রকাশিত হওয়ার পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিল বোর্ডে অন্য যাদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল, তারাও আমার সমান সম্মানী লাভ করেছেন। ধন্যবাদ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আপনারা সময় মতো কর পরিশোধ করুন।
আমার লেখার কারণে অন্য যারা রাজস্ব বোর্ড থেকে সম্মানী পেয়েছেন, আপনারা দয়া করে আমাকে ৫ কেজি করে ল্যাংড়া আম দিবেন। আর? আর ঈদ মোবারক।
২৩.০৭.২০১৪
অবিলম্বে তওবা করুন
তোবা গার্মেন্টস-এর অনশনরত শ্রমিকদের দাবির প্রতি আমি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। ঈদের পূর্বে তাদের বেতন পরিশোধ না করে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে, তার জন্য যারা দায়ী, তাদের সকলের প্রতি আমি তীব্র ঘৃণা ও নিন্দা জানাচ্ছি। যেহেতু এই প্রতিষ্ঠানের মালিক শ্রমিকদের যথাসময়ে বেতন না দিয়ে দেশে একটি অগ্রহণযোগ্য ও অমানবিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে এবং এখনও বেতন প্রদানে গড়িমসি করে চলেছে, তাই আমার প্রস্তাবÑ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অবিলম্বে এই প্রতিষ্ঠানটি অধিগ্রহণ করুক এবং অনতিবিলম্বে এই গার্মেন্টস-এর সকল শ্রমিকের সকল বকেয়া বেতন পরিশোধ করুক। ড. আতিউর রহমানের ব্যাংকে মেদের মতো টাকা জমিয়ে রেখে কোন বালটা হবে, যদি না তা বাংলাদেশের সৎ-মানুষের কাজে লাগে?
০৫.০৮.২০১৪
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা
বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর
তাঁকে নিয়ে রচিত প্রথম কবিতা
রচয়িতা : বঙ্গবন্ধুর বাল্যবন্ধু মৌলানা শেখ আবদুল হালিম
হে মহান, যার অস্থি-মজ্জা, চর্বি ও মাংস এই কবরে প্রোথিত;
যার আলোতে সারা হিন্দুস্তান, বিশেষ করে বাংলাদেশ আলোকিত হয়েছিলো।
আমি আমার নিজেকে তোমার কবরের উদ্দেশে উৎসর্গ করিতেছি,
যে তুমি কবরে শায়িত।
আমি তোমার মধ্যে তিনটি গুণের সমাবেশ দেখেছি : ক্ষমা, দয়া ও দানশীলতা।
নিশ্চয়ই তুমি জগতে বিশ্বের উৎপীড়িতদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে
জন্মগ্রহণ করেছিলে,
সেইহেতু অত্যাচারীররা তোমাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে।
আমি/আমরা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের কাছে তাদের বিচারের প্রার্থনা জানাই,
যারা তোমাকে বিনা-বিচারে হত্যা করেছে।
আমরা মহান আল্লাহর নিকট তোমার আখিরাতের মঙ্গল কামনা করি।
বিদায়! বিদায়! বিদায়, হে মহান জাতির জনক।
১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে কবরে শুইয়ে দিয়ে ঘরে ফিরে এসে তিনি এই কবিতাটি রচনা করেন এবং একখ- টিনের উপর কবিতাটি লিখে বঙ্গবন্ধুর কবরে পুঁতে দিয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালের বন্যার সময় বঙ্গবন্ধুর কবরটি জলে ডুবে গেলে প্রবল জলের তোড়ে ঐ কবিতাটি ভেসে যায়। ১৯৯০ সালে আমি টুঙ্গীপাড়ায় যাবার পর মৌলানা শেখ আবদুল হালিমের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তখন তিনি স্মৃতি থেকে তাঁর রচিত ওই কবিতাটি আমাকে শুনিয়েছিলেন।
১৫.০৮.২০১৪
এটিএম বুথ
কামরাঙ্গীরচরে একটা এটিএম বুথ আছে রনি মারকেটে। আমি মাঝেমধ্যে ওই বুথ থেকে টাকা তুলি। টাকা তুলে বসেছিলাম বুথের সামনে রাখা ছোট্ট বেঞ্চিটাতে। এমন সময় একটি ছেলে এলো টাকা তুলতে। সে সিকিউরিটির লোকটাকে খুঁজছিল। আমি বললাম তিনি নেই। তখন সে খুব অসহায় বোধ করলো। আমি বললাম যান, আপনি টাকা তুলতে পারেন না? ছেলেটি মাথা নেড়ে বললো-না। আমার কাজের তাড়া ছিল না। বললাম, আসেন আমি আপনাকে সাহায্য করছি। সে আমার কাছে তার কারডটি দিলো। তার সঞ্চয়ে ছিল ৮২৪৬ টাকা। সে বললো সে ৮০০০ টাকা তুলবে। টাকাটা পকেটে ভরে নিয়ে চলে যাবার সময় ছেলেটা আমার দিকে একটা দশ টাকার নোট দিয়ে বললো, চা খাবেন। আমি বললাম, না টাকা দিতে হবে না। সে বললো, সমস্যা কী?
আমি তখন তার মুখের দিকে তাকালাম। মনে হলো ওর টাকাটা না নিলে সে কষ্ট পাবে। আমি তখন হাত বাড়িয়ে দশ টাকার চকচকে নোটটা গ্রহণ করলাম। ছেলেটা খুব খুশি হয়ে চলে গেলো। আমার খুব ভালো লাগলো টাকাটা পেয়ে। আজ আর চা খাবো না। কাল খাবো।
২৫.০৮.২০১৪
কাশবন বিদ্যানিকেতনকে অনতিবিলম্বে বিদ্যুৎ-সংযোগ দিন
আমি নেত্রকোনার পল্লীবিদ্যুতের কর্মকর্তাদের বহুবার বোঝাতে চেষ্টা করেছি যে, ইচ্ছে করলে বিদ্যুতের জন্য আমি বিদ্যুৎ-প্রতিমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টার কাছে যেতে পারি, কিন্তু আমি চাই এই সামান্য কাজটা আপনারাই করে দিন। প্রধানমন্ত্রীর কাছেও যে যেতে পারি, সেকথা বলিনি এজন্য যে, তারা এটা বিশ্বাস করবেন না। বিশ্বাস করলে তো অনেক আগেই কাজ হতো। আমিও চাইনি যে, আমাকে ঘিরে তাদের বিশ্বাসে চিড় ধরুক। এর ফলে যা হবার তাই হয়েছে। গত কয়েক বছরে বেশ কয়জন জিএম বদল হয়েছে, কিন্তু কেউই কথা রাখেননি। নেত্রকোনা পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ দিচ্ছি দিব করে আমাদের ঘুরাচ্ছে তো ঘুরাচ্ছেই। ঘুরাচ্ছে তো ঘুরাচ্ছেই। ঘুরাচ্ছে তো ঘুরাচ্ছেই। কিছুতেই কাশবন বিদ্যানিকেতনকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে না। ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ-উৎপাদনের উৎসব পালিত হওয়ার পরও কাশবন বিদ্যানিকেতনের বেলায় বিদ্যুৎ কেন নেই, এই প্রশ্নের জবাব কে দেবেন?
সম্প্রতি আমাদের সাংসদ ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী জনাব আরিফ খান জয় কাশবন পরিদর্শন শেষে অনতিবিলম্বে কাশবনকে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের জন্য নেত্রকোনার পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে একটি সুপারিশপত্র দিয়েছেন। তারপরও কাজ হচ্ছে না। নেত্রকোনা থেকে ঢাকা-অফিসে নাকি ফাইল পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ওই ফাইল নাকি নড়ছে না।
এদিকে কাশবন বিদ্যানিকেতনের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা গরমে কষ্ট পাচ্ছেন এবং বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবটি বিদ্যুতের অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। নষ্ট হবার পথে।
নেত্রকোনা পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়ের টাকা দিয়ে ট্রান্সফরমার ও খাম্বা কেনার যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, আমরা তাতে রাজি হইনি। আমরা বিদ্যুতের মূল্য দিতে রাজি আছি কিন্তু আমাদের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব- আমরা মনে করি সরকারের।
অনতিবিলম্বে কাশবন বিদ্যানিকেতনকে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা না হলে আমি কাশবনের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের নিয়ে নেত্রকোনা পল্লীবিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করবো। এই আমার শেষ কথা। আপনাদের সমর্থন চাই।
০৩.০৯.২০১৪
যদি
ভাগ্যিস, ১৯৬৯ সালে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়া বিএ-টা পাস কইরা রাখছিলাম, তা না হইলে আইজ আর বুক ফুলাইয়া নিজেরে পাকিস্তান আমলের গ্রাজুয়েট বইলতে পারতাম না। ভাগ্যিস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভারতে মিসেস গান্ধী ও সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের যৌবন থাকতে-থাকতে, ১৯৭১ সালে আমরা এই দ্যাশটারে স্বাধীন কইরা ফালাইছিলাম। তা না হইলে আমাগো দশাডা যে কী অইতো! আহারে!
০৮.০৯.২০১৪
আত্মকথা ১৯৭১ বনাম ১৯৭১ ভিতরে বাইরে
এ-পর্যন্ত কাব্যগদ্য মিলিয়ে আমার শতাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু প্রকাশনা উৎসব হয়েছে মাত্র একটি গ্রন্থের। সেই গ্রন্থটির নাম হচ্ছে- আত্মকথা ১৯৭১। আমার পছন্দমতেই মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন মুক্তিবাহিনীর উপসেনাধ্যক্ষ জনাব এ কে খন্দকার। প্রকাশনা উৎসবে জনাব এ কে খন্দকার আমার ‘আত্মকথা ১৯৭১’ বইটির ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘কবি নির্মলেন্দু গুণ-এর আত্মকথা ১৯৭১ বইটি মুক্তিযুদ্ধের একটি স্বচ্ছ দলিল। সেই সময়ে ঘটে-যাওয়া প্রতিটি ঘটনাকে কবি জীবন্ত বর্ণনাশৈলীর মাধ্যমে আকর্ষণীয় করে তুলেছেন।...আমি মনে করি, এই বইটি বারবার প্রকাশিত হওয়া উচিত। ...বইটির রচনাশৈলী এবং স্বাধীনতার ইতিহাস জানার একাগ্রতা এই বইটিকে বহুবার ছাপাঘরে নিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।’ [সূত্র : সাপ্তাহিক, ৩১ জুলাই ২০০৮। বর্ষ ১ সংখ্যা ১১।]
আত্মকথা ১৯৭১ বইয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ ৭ মার্চের ভাষণ হুবহু তুলে ধরেছেন এবং ওখানে জয়বাংলা কথাটিই রয়েছে। কই তখন তো এ কে খন্দকার মহোদয় এর বিরোধিতা করেননি।
২. ‘এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ, এই মুখে মিথ্যা কথা কি মানায় ?...এ হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ, আমি কি এ হাতে কোনো পাপ করতে পারি?’
জনাব এ কে খন্দকারের হাতে ধরা আমার বইটি দেখে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই কবিতার পঙক্তিটি খুব মনে পড়ছে। যে হাতে আপনি আমার লেখা আত্মকথা ১৯৭১ বইটি দর্শকদের উদ্দেশে তুলে ধরে রয়েছেন বা ছিলেন, সেই একই হাত দিয়ে আপনি ‘১৯৭১ ভিতরে বাইরে’ বইটি লিখেছেন? আমি বিশ্বাস করি না। আপনি?
০৯.০৯.২০১৪
আমি ড. বারকাতের পক্ষে
মাননীয় অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি কী কারণে জানি না, জনতা ব্যাংকে ‘অবক্ষয়’ হয়েছে বলে সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমাদের অবহিত করেছেন। এবং এই অবক্ষয়ের জন্য তিনি দায়ী করেছেন জনতা ব্যাংকের মাননীয় চেয়ারম্যান দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতকে। তিনি এও বলেছেন যে, ড. বারকাতের সঙ্গে সম্পাদিত জনতা ব্যাংকের চুক্তি শেষ হওয়ার পথে, সেটি আর নবায়ন করা হবে না।
অর্থমন্ত্রীর কথা শুনে ড. আবুল বারকাত সাহেব জনতা ব্যাংকের এমন কী ক্ষতি করলেন, তা জানার আগ্রহ তৈরি হলো। আমি ড. আবুল বারকাতকে একজন সৎ, সাহসী ও বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হওয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে জানি।
আমার বেশি অপেক্ষা করতে হলো না। সম্ভবত পরদিনই ড. আবুল বারকাত প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে কিছু ফাইলপত্রসহ উপস্থিত হন এবং জনতা ব্যাংকের বিরুদ্ধে অর্থমন্ত্রীর ‘অবক্ষয়’-এর অভিযোগ পুরোপুরি নাকচ করে দিয়ে তাঁর হাতে রাখা ফাইলগুলো দেখিয়ে বলেন যে, তিনি তথ্যপ্রমাণ ছাড়া জীবনে কখনও কোথাও কোনো কথা বলেননি।
আমি তাঁর এই কথা শুনে মুগ্ধ হই। বাংলাদেশে খুব বেশি মানুষ এরকম দৃঢ়চিত্তে কথা বলতে পারে না। জঙ্গিবাদের অর্থনীতি বা অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে তাঁর যে গবেষণাকাজ- এই কাজ করার জন্য আমি মনে করি মেধাই যথেষ্ট নয়, তার জন্য চাই কমিটমেন্ট, সততা এবং সাহস। ড. আবুল বারকাতের তা আছে।
আমার ধারণা হয়েছিলো, তাঁর নেতৃত্বে জনতা ব্যাংক কেন মুনাফা করতে পারেনি, ড. বারকাত হয়ত এখন সেই ব্যাখ্যাই হাজির করবেন। ড. বারকাতের বিরুদ্ধে উচ্চারিত মাননীয় অর্থমন্ত্রীর অভিযোগ থেকে আমার এমন ধারণাই হয়েছিলো। কিন্তু কী আশ্চর্য! ড. বারকাত মাননীয় অর্থমন্ত্রীর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে জানালেন যে, সকল দেনা শোধ করে, বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ে আর্থিক সাহায্য প্রদান করার পরও গত অর্থবছরে জনতা ব্যাংক ৯৫০ ( কিছু কমবেশি হতে পারে) কোটি টাকার মতো নীট মুনাফা করেছে। জনতা ব্যাংকে অবক্ষয় হয়েছে বলে জাতির কাছে জনতা ব্যাংক ও তার চেয়ারম্যান সম্পর্কে মিথ্যা ধারণা প্রদান করার জন্য তিনি মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানান।
আমার জানা মতে, ড আবুল বারকাতের নেতৃত্বে পরিচালিত জনতা ব্যাংক দেশের বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ে বেশকিছু অর্থ সাহায্য প্রদান করেছে। আমাদের কাশবন প্রকল্পে তিনি তিন লক্ষ টাকা সাহায্য দিয়েছেন। কাশবনে আর্ট স্কুল ও গানের স্কুলের জন্য সেই টাকায় আমরা একটি ৩০ ফুট বাই ৪০ ফুট টিনশেড নির্মাণ করেছি। সেখানে এখন বেশ কিছু ছেলেমেয়ে একসঙ্গে বসে ছবি আঁকা ও গানের তালিম পাচ্ছে। জনতা ব্যাংকের এই সাহায্য প্রকল্প আমার এলাকার সাংস্কৃতিক অবক্ষয় রোধে যথেষ্ট ভালো ভূমিকা রেখেছে। রেখে চলেছে। ড. বারকাতের সৃজনশীল চিন্তার জন্য জনতা ব্যাংক ও তার চেয়ারম্যান হিসেবে যখন তাঁকে আমাদের প্রশংসা করা উচিত, তখন মাননীয় অর্থমন্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে ‘অবক্ষয়ের’ ধূম্রজাল বিস্তার করে ভারী অন্যায় করেছেন বলেই আমার মনে হলো।
মাননীয় অর্থমন্ত্রী, আপনি জনতা ব্যাংক ও ড. আবুল বারকাতের বিরুদ্ধে আনীত ভ্রান্ত অভিযোগটি প্রত্যাহার করুন। ভুল স্বীকার করুন। আপনি ভুল স্বীকার করলে ভুল তথ্য সম্বলিত গ্রন্থ রচনা করার জন্য আপনার বন্ধু এ কে খন্দকারও হয়ত বা ভুল স্বীকারে আগ্রহী হতে পারেন। ভুল করতে পারবেন আর ভুল স্বীকার করতে পারবেন না, এ কেমন কথা?
১৪.০৯.২০১৪
হার্ট অপারেশন
মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে পুরনো চেহারাটা ফিরে আসছে। হার্ট অপারেশনের পর থেকে কন্যার পরিবাগের বাসায় আছি। ওর বাসায় একটা লেদারের ইজি চেয়ার আছে। প্রজাপিত আকৃতির বলে এর নাম বাটারফ্লাই ইজি চেয়ার। রবীন্দ্রনাথের মতো বেতের ইজিচেয়ারে বসে ছবি তোলার সুযোগ হয়নি। এবারে সেই গোপন বাসনার অনেকটাই পূরণ হলো।
০৩.১১.২০১৪
আমি নবজাতকের প্রথম কান্নার মতো সত্য,
আমি প্রতিটি প্রাণের শেষ নিঃশ্বাসের মতো সত্য।
ভালোবাসা ছাড়া দান করবার মতো আমার আর কোনো ঐশ্বর্য ছিলো না।
২২.১১.১৪
প্রধানমন্ত্রীর অনুদান : আমার কথা
বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি দেশের দুইজন বিশিষ্ট চিত্রাভিনেত্রী ও একজন স্কুল শিক্ষিকার সঙ্গে আমাকেও ২০ লক্ষ টাকার আর্থিক সাহায্য প্রদান করেছেন। খবরে বলা হয়েছে যে, আর্থিক অনুদানের ওই টাকাটা চেকের মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্য নয়। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, চেকের মাধ্যমে নয়, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সোনালি ব্যাংকে নিবন্ধিত ‘পরিবার সঞ্চয়পত্রে’র মাধ্যমে
আমাকে এই অর্থ প্রদান করা হয়। ফলে প্রদত্ত অর্থের ওপর আমার প্রবেশাধিকার যথেচ্ছ বা স্বাধীন নয়। এটা হচ্ছে অদৃশ্য টাকা বা আনসিন মানি। তবে আমাকে প্রদত্ত সঞ্চয়পত্র থেকে আমি প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা করে সুদ পাবো। ওই সুদের টাকাটা আমি স্বাধীনভাবে খরচ করতে পারবো।
২। চিত্রাভিনেত্রী রানী সরকার বা শাহিনা সিকদার বনশ্রীর দুর্দশাকবলিত জীবনের কথা পত্রিকায় পাঠ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁদের গণভবনে ডেকে এনে সাহায্য দিয়েছেন। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সে রকম কিছু হয়নি। আমার বাই-পাস হওয়ার আবেগজড়িত ঘটনাটিকে কাজে লাগিয়ে আমি নিজেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অর্থ-সাহায্যের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। ভেবেছিলাম ১০ লক্ষ পাবো। তিনি ২০ লক্ষ দিবেন, ভাবতে পারিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অশেষ ধন্যবাদ।
৩। আমার স্বপ্নগ্রাম কাশবনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন (বেতন না বলে মাসোহারা বলাটাই শ্রেয় হবে) দিতে হয়। ১০ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র থেকে এই টাকাটা পাওয়া যাবে। আমার মৃত্যুর পরও যাতে প্রতি মাসে ব্যাংক থেকে এই টাকাটা পাওয়া যায়, এটা নিশ্চিত করার জন্যই আমি আমাকে প্রদত্ত ২০ লক্ষ টাকা সঞ্চয়পত্রের অর্ধেক অর্থাৎ ১০ লক্ষ টাকা আমার পরিবর্তে আমাদের কাশবনের নামে ট্রান্সফার করতে চাই। সোনালি ব্যাংকের বারহাট্টা শাখাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সে রকম বিশেষ নির্দেশ প্রদান করলে এই কাজটা সহজে সম্ভব হবে। অন্যথায় ‘পরিবার সঞ্চয়পত্র’ প্রতিষ্ঠানের নামে পরিবর্তন করা যাবে না।
৪। আমার নৈতিকতার ওপর আস্থা রেখে বাকি ১০ লক্ষ টাকাকে দৃশ্যমান করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে দেবেন বলে সংস্কৃতিমন্ত্রী বিশিষ্ট আবৃত্তিকার জনাব আসাদুজ্জামান নূর আমাকে যে কথা দিয়েছেন, আশা করি তিনি সেটা ভুলে যাবেন না। এই দুটো কাজ সম্পন্ন হলেই আমি সানন্দে প্রস্থান করতে পারবো।
পরিবাগ, ঢাকা। ২২ নভেম্বর ২০১৪
শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী
মানুষের মৃত্যু যে কত রকমভাবে হয়, হতে পারে, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যু-দৃশ্যটি প্রত্যক্ষ করে সে কথা নতুন করে মনে হলো। অনন্য জন্মের দ্বার/ মৃত্যু শতপথে। একদিনের ব্যবধানে আমরা আমাদের সর্বজনপ্রিয় দুজন মানুষকে হারালাম। বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে আগের রাতে মারা গেলেন দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক জগলুল চৌধুরী। আমাদের সাংবাদিক জীবন শুরু হয়েছিল একই পত্রিকায়, দি পিপল-এ। তিনি ছিলেন আমার বন্ধুস্থানীয়। তাঁর অপঘাত-মৃত্যুর পরের রাতেই আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজিত সংগীতরজনীর অনুষ্ঠান-মঞ্চে বক্তৃতা দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। জাতীয় কবিতা পরিষদের অনুষ্ঠানে শিল্পী কামরুল হাসানের মৃত্যুর কথা মনে পড়ছে। কাইয়ুম ভাইকে বড় ভাই জ্ঞান করতাম। আমার দুটো কাব্যগ্রন্থের চমৎকার প্রচ্ছদ করেছিলেন তিনি- পৃথিবীজোড়া গান ও মুক্তিযুদ্ধের কবিতা। বন্ধু-সাংবাদিক জগলুল ও অগ্রজ শিল্পী কাইয়ুম ভাইয়ের উদ্দেশে আমার গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন করছি।
১ ডিসেম্বর ২০১৪। রাত ১০টা।
অপারেশন থিয়েটারের দিকে
দাদা, আমি ডা. মাহবুব। আমি আপনার কবিতার ভক্ত। আমার খুব পছন্দের মানুষ আপনি। আপনাকে এনেসথেশিয়া দেবার দায়িত্ব আমার। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, একটুও ভয় পাবেন না।
ও, তাই বলেন। আপনিই আমাকে অজ্ঞান করবেন, তাই তো?
অজ্ঞান শব্দটা ডা. মাহবুবের কানে বাজলো।
আমার হাতটা আরও জোরে চেপে ধরে বললেন, ঠিক তাই, কিন্তু এমন করে বলবেন না।
আমি হাসতে হাসতে বললাম, ডা. মাহবুব, আমি আপনার ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখছি। শুধু অজ্ঞান করা নয়, আমাকে সজ্ঞান করার দায়িত্বও কিন্তু আপনার।
ডাক্তার মাহবুবের উত্তর শোনার আগেই আমাকে বহনকারী ট্রেচারটি চলতে শুরু করলো অপারেশন থিয়েটারের দিকে...
০৪.১২.২০১৪
বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা, বিজয় দিবসের কবিতা
শিয়রে বাংলাদেশ
আমার যখন পঁচিশ বছর পূর্ণ হয়েছিল
তুই তখনও ছিলি আমার স্বপনে।
আমি পাঁজর খুলে বলেছিলাম তোকে,
আমার বুকে যা আছে তুই সব নে।
আমার যখন পঁচিশ বছর পূর্ণ হয়েছিল,
তুই তখনও ছিলি মায়ের ভ্রƒণে।
আমি অস্ত্রজ্ঞানে আড়াল করে তোকে
তীর বানিয়ে রেখেছিলাম তূণে।
আমার যখন পঁচিশ বছর পূর্ণ হয়েছিল,
তুই তখনও ছিলি জন্ম-আশায়।
তোকেই তখন বড় করে দেখেছিলাম বলে
সঁপিনি মন নারীর ভালোবাসায়।
আমার যখন পঁচিশ বছর পূর্ণ হয়েছিল
অস্ত্র তুলে নিয়েছিলাম হাতে।
যুদ্ধ করতে গিয়েছিলাম দূরপাহাড়ি বনে
যদিও সায় ছিল না হত্যাতে।
আমার যখন পঁচিশ বছর পূর্ণ হয়েছিল
টগবগে লাল রক্ত ছিল বক্ষে।
তখন তোকে নরক থেকে মুক্ত করা ছাড়া
আর কী শ্রেয় আমার পক্ষে?
আমার যখন পঁচিশ বছর পূর্ণ হয়েছিল,
বিজয়-গর্ব ছিল না তোর স্বরে।
আমি তোকে বিজয় দিয়ে বিজয়বতী করে
দিয়েছিলাম ষোলোই ডিসেম্বরে।
এখন যখন পঁচিশ বছর পূর্ণ হলো তোর,
আমি তখন তোকে রেখে পঞ্চাশে দেই দৌড়।
রজতে নয়, সুবর্ণতে এ-দৌড় হবে শেষ,
তখনও তুই থাকবি আমার শিয়রে বাংলাদেশ।
কাশবনে ২০০৯ সালে আমরা আমাদের মহান বিজয় দিবস পালন করেছিলাম কেরসিন কাঠ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে। ২০১০ সালে আমরা কাশবনে ন্যাচারাল স্টোন দিয়ে স্তম্ভ ও মার্বেল পাথরের বেদি দিয়ে একটি স্থায়ী শহীদবেদি তৈরি করি। তার পর থেকে ওই শহীদবেদিতে ফুল দিয়েই আমরা বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলো পালন করে আসছি।
১৬.১২.২০১৪
বিজয় দিবসে পতাকার গান
নির্মলেন্দু গুণ
আকাশের সূর্যটা পতাকায়,
নাকি পতাকার সূর্যটা আকাশে
বুঝি না, বুঝি না, বুঝি না হায়।
দাওনা দাওনা কেউ বুঝিয়ে আমায়।
বাংলাদেশের এই পতাকার
সূর্যটা এতো লাল হলো কী করে?
লাখো প্রাণ করি দান,
বক্ষের তাজা খুন
কারা ঢেলে দিয়ে গেলো
বিজয়ের বৃক্ষশিকড়ে?
দাওনা দাওনা কেউ বুঝিয়ে আমায়।
আমার পিতার, আমার মায়ের,
আমার বোনের, আমার ভায়ের
জীবনের বিনিময়ে
লালসবুজের এই রক্তপতাকা
হয়েছে আমার পাওনা।
একটা পতাকা আমারে দাও না।
কী আছে আর দেশমাতৃকার
গৌরববাহী এই পতাকার ন্যায়?
দাওনা দাওনা কেউ বুঝিয়ে আমায়।
কামরাঙ্গীরচর, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪
ওষুধের দাসত্ব
পাঁচ রকমের পাঁচটা ট্যাবলেট গলাধঃকরণ করে রাতে ঘুমাতে যাই। সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে একটা, তার কিছুক্ষণ পর সকালের নাস্তা।
দুপুরের খাবারের আগে কিছুক্ষণের ওষুধবিরতি। খাবারের পর আবার তিনটা ট্যাব। ওষুধের সবচেয়ে বড় অত্যাচারটা হয় রাতে। খাবারের আগে দুই, খাবারের পর তিন ট্যাব। সব মিলিয়ে চব্বিশ ঘন্টায় নয় ট্যাবলেট। বুঝতে পারছি না, আমি বাঁচার জন্য প্রতিদিন সুবোধ বালকের মতো রুটিন মেনে ওষুধ খেয়ে চলেছি, না কি ওষুধ খাওয়ার জন্যই আমার এই বেঁচে থাকা। মনে পড়ছে কবিগুরুর বিখ্যাত উক্তি, ডাক্তারের সাহায্য ছাড়া বাঁচাই আসল বাঁচা। সন্দেহ নেই, আমার এখন নকল বাঁচা, আসল আমির ছায়াতলে এখন শুরু হয়েছে আমার নকল আমির জীবনচক্র। জীবনের বাকিটা সময় এভাবেই আমাকে ওষুধের দাসত্ব করে যেতে হবে।
৩১.১২.২০১৪
লাল চাল
শ্রীলংকার পর এবার ভারতে চাল রফতানি করতে চলেছে বাংলাদেশ। ইংরেজি নববর্ষের সকালের টিভি সংবাদে এই কথা শোনার পর থেকে কী আনন্দই না লাগছে। চাল উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। পাকিস্তান আমলে যখন আমাদের জনসংখ্যা ছিল ৫-৬ কোটি, যখন আমি স্কুলের ছাত্র, তিন বেলা ভাত খেতে পারতাম না। আমার ছেলেবেলা বইটিতে সেইসব পেট পুরে ভাত খেতে না পাওয়া দিনগুলোর করুণকথা বর্ণিত হয়েছে। আজ যখন বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ছাড়িয়ে, তখন আমরা চাল রফতানি করছি। এরই নাম স্বাধীনতা, ধন্য লক্ষ জীবনদান। ভাবছি কিসিঞ্জারের নামে কিছু চাল আমেরিকায় রফতানি করলে কেমন হয়! খুব মজা হবে, তাই না? চালের বস্তার ওপর কালো কালির মোটা হরফে লেখা থাকবে ‘মি হেনরি কিসিঞ্জার, প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা।’
লাল চাল নামে আমার একটা পেইন্টিং আছে। ছবিটি ধানমন্ডিতে অবস্থিত বিদশার রেস্টুরেন্ট এরিকো বিস্ত্রোতে সংরক্ষিত আছে। রক্তরঞ্জিত চাল। ছবিটি মন্দ নয়, বেশ ভালো।
০১.০১.২০১৫
নতুন প্রধান বিচারপতি
দেশের প্রধান বিচারপতি হতে চলেছেন বিচারপতি এস কে সিনহা। আগামী ১৭ জানুয়ারি বিচারপতি এস কে সিনহা বাংলাদেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিবেন। কেমনে কী? শেখ হাসিনা দেখি বঙ্গবন্ধুকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। তাঁর শাসনকাল দীর্ঘ হলে, কে জানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদেও হয়ত এরকম পদায়ন হতে পারে। অবশ্য বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা সাংবিধানিকভাবে কতটা বয়েছে, জানি না। নতুন বিচারপতিকে প্রাণঢালা অভিনন্দন।
১২.০১.২০১৫
নিঃসঙ্গ ঘর
কবির বাড়ি কাশবন শিরোনামে স্বকৃত নোমান একটি ছোট্ট ভ্রমণ কাহিনি লিখেছেন সাপ্তাহিক এই সময় পত্রিকায়। গ্রামের বাড়িতে গেলে আমি যে ঘরটিতে থাকি সেই ঘরের সামনে আমাকে দাঁড় করিয়ে সকালের দিকে এই ছবিটি তুলেছিল। সময় সকাল ১০টা (আনুমানিক), ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪। স্বকৃতর তোলা এই ছবিটিতে আমার বাসগৃহটিকে যেমন নিঃসঙ্গ বোধ হলো, এমনটি আগে কখনও মনে হয়নি। ধন্যবাদ স্বকৃত, খুব কষ্ট জাগানিয়া একটা ছবি তুলেছো তুমি। দরজা জানালা বন্ধ ঘরটির নিঃসঙ্গতা কী ভয়াবহ! যেন বলছে, যেতে নাহি দিব। সে কথা কানে না তুলে আমি ছেড়ে চলেছি তাকে। কী নিষ্ঠুর এই মনুষ্য জীবন। এই নিঃসঙ্গ ঘরটিকে আরও কিছুকাল সঙ্গ দেবার ইচ্ছা জাগছে মনে।
১৪.০১.২০১৫
একটি দুর্লভ ছবি
১৯৯৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে এই ছবিটি তোলা হয়েছিল। স্থান নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সামনের সড়ক। কাগজের শহীদ মিনার বানিয়ে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়েছিল। আয়োজক ছিল নিউইয়র্ক-এর মুক্তধারা ফাউন্ডেশন। ১৯৯১ সাল থেকে মুক্তধারা এভাবেই আমেরিকায় একুশের অনুষ্ঠান পালন করে আসছে। জাতিসংঘ যে আমাদের ভাষা দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে, তার পেছনে মুক্তধারা আয়োজিত একুশের অনুষ্ঠানটির কার্যকর ভূমিকা ছিল। ছবিতে কবি শহীদ কাদরীকে বক্তৃতা দিতে দেখা যাচ্ছে। তাঁর বাম পাশে কালো লং কোট পরিহিত আমি ও আমার পেছনে জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে দেখা যাচ্ছে। ছবিতে না থাকলেও এই অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক ও চিন্তক ছিল মুক্তধারার প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিৎ সাহা।
১৬.০১.২০১৫
সুন্দরবনের গল্প
সুন্দরবনের মৌমাছিরা চাকে বাঁধছে মধু।
ও বাওয়ালী একটু লক্ষ রাখিস, ভাই।
মধুর জন্য তাড়া দিচ্ছে বধূ
ও বাওয়ালী আগুন ঢালো চাকে।
আর কত ঘুম পাড়িয়ে রাখবো তাকে?
মধুর তোমার শেষ যে নাহি পাই।
২৪.০১.২০১৫
এই কাল-অগ্নি
এই কাল-অগ্নি জ্বালিয়াছে যারা,
দান্তের নরকে নিশ্চিত
চিরকাল ভস্ম হবে তারা।
হে দৈত্যজয়ী, বীর বজ্রপাণি,
পুষ্পচ্ছলে তাঁরি অগ্নি
দাও আজি মোর হাতে আনি।
০৩.০২.২০১৫
একটি ঐতিহাসিক ছবি
সৌদি আরবের বাদশার সংগে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকার। পবিত্র মক্কা শরীফে হজ করার অনুমতি ও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য বঙ্গবন্ধু সৌদি বাদশাকে অনুরোধ জানান। বাদশা বলেন, আপনি বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করে ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ রাখুন আর পাকিস্তানের যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি দিন। উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, মহামান্য বাদশা পবিত্র মক্কা শরীফের হেফাজতকারী হিসেবে আমরা আপনাকে সম্মান করি। আমি সৌদি আরবের নাম পরিবর্তন করার কথা বলতে পারি না। আমার দেশের নাম আমরাই স্থির করেছি। ওই নামই থাকবে। আর পাক যুদ্ধবন্দিদের বিষয়টি দ্বিপক্ষীয়। বাংলাদেশের মুসলমানদের হজ পালনের পথের বাধা দূর করেন, যাতে পাকিস্তান বা ভারতের পাসপোর্ট নিয়ে তাদের হজ পালন করতে না হয়। সৌদি বাদশার সংগে বঙ্গবন্ধুর আলোচনা ভেংগে যায়।
পরের ঘটনা আমরা জানি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু নিহত হলে সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু তারপরও বঙ্গবন্ধুর খুনিরা জয় বাংলার পরিবর্তে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ চালু করলেও, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাম পরবর্তন করে ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ করার ঝুঁ নেয়নি।
০৮.০২.২০১৫
ধন্যবাদ, প্রিয় হৃৎপি- আমার
আমার হৃৎপিন্ডের অসুখটা আমার জন্য বেশ কাজের হয়েছে। সুস্থ হয়ে শুনেছি, হাসপাতালে যখন আমার ওপেন হার্ট সার্জারি হচ্ছিল, তখন দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ আমার কবিতার ভক্ত ও অনুরাগীরা অনেকেই আমার জন্য প্রার্থনা করতে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভিড় করেছিলেন। আমার চিকৎসার খরচ বহনের জন্য সরকার ছাড়াও কেউ কেউ আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। অনেকেই রক্ত দেবার জন্য হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন। টিভি চ্যানেলে স্ক্রল-নিউজে প্রচারিত হচ্ছিল আমার সর্বশেষ অবস্থার সংবাদ। আমার প্রতি প্রদর্শিত অভাবিত সম্মান ও ভালোবাসায় বিভ্রান্ত হয়ে ল্যাবএইড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার চিকিৎসার সব খরচ বহনের ঘোষণা দেন। সরকারের পক্ষ থেকেও আমার চিকিৎসার খরচ বহনের কথা ঘোষণা করা হয়।
এই বাতানুকূল ভূমি-বাস্তবতা (মৎড়ঁহফ ৎবধষরঃু) আঁচ করতে পেরে আমি ল্যাবএইডের ওপর চিকিৎসা-খরচের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে, সরকারকে আপাতত অব্যাহতি দেই, পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ-তহবিলে হামলা করা যাবে, ভেবে। পনের দিনের মাথায় আমার চাপের মুখে নতি স্বীকার করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ২০ লক্ষ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র প্রদান করেন। দৃশ্যমান না হলেও সঞ্চয়পত্রও তো নিরাপদ টাকা বটে। এতো টাকা কখনো আমার হাতে আসবে, আসতে পারে, জীবনে ভাবিনি। আমার হৃদযন্ত্রকে ধন্যবাদ। সে জানে, কখন অসুস্থ হতে হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে টাকাটা না পেলে, কাশবন নিয়ে আমার দুশ্চিন্তা দূর হতো না। গত তিরিশ বছর ধরে যে দরিদ্র পরিবারটির সংগে আমি বাস করছি, তাদের জন্যও আমি কিছু রেখে যেতে পারবো। ধন্যবাদ প্রিয় হৃৎপি- আমার।
আমার প্রকাশকদের মধ্যেও কিছুটা সততা ও সহৃদয়তার লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। আমাকে কবি হিসেবে নতুন করে চিনেছেন অনেকে। ধন্যবাদ, প্রিয় হৃৎপি- আমার। এবারের বইমেলায় পাঁচজন কবি ও দুইজন কথাশিল্পী আমাকে তাঁদের গ্রন্থ উৎসর্গ করেছেন। তাঁদের তালিকা নিম্নে সন্নিবেশিত হলো।
আবারও বলি, ধন্যবাদ, প্রিয় হৃৎপি- আমার। আমি আমার বুকের পাঁজর না খুললে, আমাকে ওঁরা তাদের বই উৎসর্গ করতেন বলে মনে হয় না। করতেন, তবে এখনি নয় আরও পরে করতেন। ধন্যবাদ, প্রিয় হৃৎপি- আমার।
আপাতত মার্কিনপ্রবাসী কবি হুমায়ূন কবির, লন্ডনপ্রবাসিনী কবি সোনম মনি, তুর্কী তরুণ কবি আখতারুজ্জামান আজাদ ও লালমনিরহাটের মরমী কবি এস এম মাহবুবুর রহমান মনুর কাব্যগ্রন্থ হাতে পেয়েছি। কানাডা প্রবাসিনী নাঈমা আফরোজ সম্পা ও ঢাকার ইস্কাটনবাসী কথাশিল্পী স্বকৃত নোমানের বই দুটি আমার হাতে অচিরেই পৌঁছে যাবে। ৭ম বইটির কবির নাম মনে করতে পারছি না। তিনি মুখপঞ্জিতে আমাকে তাঁর বই উৎসর্গ করার অনুমতি নিয়েছিলেন। তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত বদল করেছেন বলে মনে করি না। ধন্যবাদ, হে প্রিয় হৃৎপি- আমার।
১৭.০২.২০১৫
বইমেলায় কিছুক্ষণ
ধন্যবাদ, হাসানআল, তোমার জন্যই দেহমনের জাড্য (জড়তা) ভেঙে প্রথমবারের মতো এবারের বইমেলায় যাওয়া হলো। বিভাস, কাকলী আর আবিষ্কারÑ এই তিনটি বুক স্টল ছাড়া আমার অন্য প্রকাশকদের স্টলে ঢু মারা সম্ভব হলো না। পরে আবারও মেলায় যাবার ইচ্ছা রাখি। তখন যাবো। খুব ভালো কেটেছে সময়টা। কাকলীর সেলিম সাহেব, বিভাসের রামশংকর ও আবিষ্কারের দেলোয়ার ছাড়াও বেশ কয়জন তরুণ প্রকাশকের সংগে পরিচয় হলো, যারা তাদের প্রকাশিত বই আমাকে উপহার দিয়েছেন। চমৎকার তাদের প্রকাশনার মান। বইমেলার এমন পরিবেশই দেখতে চেয়েছি সর্বদা। খুব স্বস্তিতে মানুষজন এবার মেলায় বই দেখতে পারছেন, পছন্দের বইটি কিনতে পারছেন। ১৯৭২ সালে মুক্তধারার চিত্তদার পাশে ঘাসের ওপর গায়ের চাদর বিছিয়ে বইমেলা শুরু করছিলাম। ২০১৫ সালের বইমেলায় গিয়েও যে বইমেলার সেই জন্মস্থানটি দেখা হয়নি, সেকথা মনে পড়লো আজ, এই লেখাটা লেখার সময়।
ক্ষমা করো বাংলা একাডেমি।
তোমার গল্পটা ভুলে গেছিলাম।
ধন্যবাদ হাসান, ধন্যবাদ মাহবুব।
১৯.০২.২০১৫
স্যার আইজ্যাক নিউটন
আপেলটি মাটিতে পড়িল কেন? আপেলটি তো আকাশে উড়ে যেতেও পারতো! ঝুলে থাকতে পারতো মাটি ও আপেল গাছের মাঝের শূন্যতায়, কোনোখানে। এটা কি আপেলের ইচ্ছার প্রকাশ নাকি কোনো অজানা কারণে আপেলটি মাটিতে পড়তে বাধ্য হয়েছে? মাটির আকর্ষণ ক্ষমতা বলে একটা ক্ষমতা আছে তবে। এই ভাবনাটাই পৃথিবীর অন্য সকল মানুষ থেকে নিউটনকে আলাদা করে দিয়েছিল। আজ থেকে চারশ বছর আগে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই মানুষটি। জ্ঞানসমুদ্রের তীরে নুড়ি কুড়ানো এই মানুষটিই নিউটন। বিজ্ঞানী নিউটন। কাশবন বিদ্যানিকেতনের প্রবেশপথে নজরুলের আবক্ষ ভাস্কর্যের পাশে স্থাপিত হবে নিউটনের এই আবক্ষ ভাস্কর্য। এটি তৈরি করেছেন ভাস্কর অখিল পাল। মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও বঙ্গবন্ধুর পর এবার কাশবনে যুক্ত হবেন সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী নিউটন।
২৮.০২.২০১৫
অভিজিৎ রায় স্মরণে
আমার ওপেন হার্ট সার্জারির কারণে এবার বইমেলায় মাত্র দুদিন গিয়েছি। ১৮ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি। মেলার শেষ দিনেও যাবো মনে করেছিলাম। কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারির রাতে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে, টিএসসির মোড়ে বিজ্ঞান-লেখক ও মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়ের নৃশংসভাবে নিহত হওয়া এবং ওর স্ত্রী বন্যার অস্ত্রাঘাতে আহত হওয়ার ঘটনাটি সব ভ-ুল করে দিলো। আগের রাতে ঠিক এই গেট দিয়েই আমি মেলাশেষে তরুণদের সংগে বসে চা খেয়ে, গান শুনে, আড্ডা মেরে বেরিয়ে এসেছিলাম। কোনো আততায়ীর আনাগোনা অনুভব করিনি। ভাবতেও পারিনি, কাল রাতে এই টিএসসির চত্বরে রাজু ভাস্কর্যের পাশে অভিজিৎ রায়কে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হবে। স্বামীকে বাঁচানোর নিষ্ফল প্রয়াসে ক্ষতবিক্ষত হবে বন্যা। ওর রক্তমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে অক্ষম লজ্জায় মুখ লুকাবে বাংলাদেশ। ভাগ্যিস, ঘটনাটি আগের রাতে ঘটেনি, এরকম একটি নৃশংস হত্যাকা-ের অসহায় দর্শক হতে হয়নি আমাকে।
অভিজিৎকে আমি নামে জানি, মুক্তমনায় দু-একটা লেখা পড়েছি। লিখেছিও কিছুদিন। মুক্তমনার সংগে আমার সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ভুলে গিয়েছিলাম মুক্তমনা ও অভিজিৎ রায়কে। ওঁর নিষ্ঠুরভাবে টিএসসির সামনে নিহত হওয়ার খবরটি টিভির স্ক্রলে দেখে বুঝলাম, অভিজিৎ বইমেলায় সস্ত্রীক ঢাকায় এসেছিল। শুধু আসেনি, হত্যার হুমকি থাকার পরও শুধুমাত্র স্ত্রীর ওপর ভরসা রেখে গিয়েছিল বইমেলায়, অটোগ্রাফ দিয়েছিল তাঁর নতুন বইয়ে, তারপর নির্বোধসরল বিশ্বাসে স্ত্রীর হাত ধরে মেলা থেকে বেরিয়ে এসেছিল পিতা ডক্টর অজয় রায়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে ফিরবে বলে। কিন্তু ঘরে ফেরা হলো না ওদের। অভিজৎ ফিরল ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে, ওর স্ত্রী বন্যা ফিরলো ডিএমসি হয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালে।
আর আমাদের জন্য রেখে গেলো পথের ওপর বাংলাদেশর মাটি আঁকড়ে ধরে উবু হয়ে শুয়ে থাকা লাল পাঞ্জাবি পরা অভিজিতের মরদেহের একটি চোখকাঁপানো ছবি। আর স্বামীর মৃতদেহ আগলে সারা গায়ে, চোখে-মুখে রক্ত মেখে বসে থাকা বেহুলার মতো হতবিহ্বল বন্যা। আহা! কী কষ্টই না হলো আমার এই ছবিটি দেখে। বন্যা হয়ত সেরে উঠবে, কিন্তু এই ছবিটিকে সে কি পারবে চোখ থেকে তাড়াতে কোনোদিন? পারবে না। আমরাও কি পারবো?
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ঋইও-এর তদন্ত প্রস্তাব গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সরকার। এই সরকারি সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই। মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে নিজের নতুন বইয়ে ভক্ত-ক্রেতাকে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন অভিজিৎ রায়। তার পাশে দাঁড়িয়ে দৃশ্যটি উপভোগ করছেন বন্যা। সম্ভবত এটাই ওদের শেষ ছবি।
রাত ২-৪৫ মি. ২ মার্চ ২০১৫।
আজ ৩০০+ রান চাই
এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বাউন্সি পিচে এ রকম রানের বন্যা বইবে কখনও ভাবিনি। টিভির পর্দায় বাংলাদেশের দর্শকদের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সরাসরি সম্প্রচার দেখা শুরু হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। ৬০ ওভারে ১৮৩ রানের মামুলি সঞ্চয় নিয়েই ও.ইন্ডিজকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছিল ভারত। এবার একাদশ বিশ্বকাপে যে রকম রানের বন্যা বইতে দেখছি, তাতে পূর্বের সর্বোচ্চ রানের সকল রেকর্ডই যে ভঙ্গ হবে, সেটা চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়। তার জন্য ক্রিকেট-বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার পড়ে না।
ইতিমধ্যেই ক্রিস গেইল বিশ্বকাপে ২১৫ রানের ব্যক্তিগত হিমালয় গড়েছেন। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ৪১৮ রান তুলে বারমুডার বিরুদ্ধে ভারতের তোলা ৪১৩ রানের রেকর্ড ভেঙেছে অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া ৪০০ রানের দেয়াল টপকেছে। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩১০ রান তুলেও ম্যাচ জিততে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সুতরাং এবারের বিশ্বকাপে ৩০০ রান মোটেও উইনিং রান নয় আর।
বাংলাদেশ মেলবোর্নের বড়-মাঠে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ২৪০ রান তুলেছে। গত বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে ২৯৫ রান তুলেছিল। আমি নিশ্চিত নেলসনের ছোট মাঠে ৩০০ রান বাংলাদেশের জন্য কোনো ব্যাপার নয়। স্মরণ রাখতে হবে সর্বদা এই তথ্যটি যে, গত বিশ্বকাপে আমরা তিন-ল্যান্ডের বিরুদ্ধেই জিতেছিলাম। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঢাকায় এবং ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে। এবারও আমাদের সামনে পড়েছে তিন ল্যান্ড। খুব খেয়াল কইরা।
আফগানিস্তানের কাছে পরাজিত স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয়টা আমি দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি। দিলশানের কাছে বিশ্বসেরা অল রাউন্ডের মুকুট হারানো সাকিব আজ নেলসনের মাঠে ব্যাঘ্রগর্জনে জ্বলে উঠবেন বলেই বিশ্বাস করি। টেস্টফ্রেন্ডলি মোমিনুলের পরিবর্তে নাসির এই বিশ্বকাপে অধিক কার্যকর হবেন বলে ধারণা হয়।
৪ মার্চ, ২০১৫
জন্মদিনের শুভাশিস
শুভ জন্মদিন মৃত্তিকা। আমার সংগে তোলা তোমার কিছু ছবি তোমার জন্মদিনের উপহার। তোমার প্রিয় দিদিমা, মহাদেবের মা, মহাদেবের দুই পুত্র তীর্থ ও সৌধর ছবিটি মহাদেবের আজিমপুরের বাসায় তোলা। মনে হয় ছবিটি আমিই তুলেছিলাম, আমার সদ্যকেনা সেকেন্ডহ্যান্ড ইয়াসিকা দিয়ে। প্রথম ছবিটি ‘কালো মেঘের ভেলা’ ছবির লোকেশন কাশবনের পাশের গ্রাম ডেমুরা গ্রামে তোলা। চিত্রপরিচালক মৃত্তিকা। দ্বিতীয় ছবিটাতে লেখক-সাংবাদিক স্বকৃত নোমানকে কাশবনে সুখেন্দু-শুভেন্দু সরোবরে সাঁতার কাটতে দেখা যাচ্ছে। এই ছবিটি কীভাবে যেন আপলোড হয়ে গেছে। চেষ্টা করেও ডিলিট করতে পারিনি। শুভ জন্মদিন স্বকৃত। সিকেপির শতবর্ষের অনুষ্ঠানে সে আমাদের গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিল।
দুটো ছবি আছে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে তোলা। চিত্রগ্রাহক বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক সুইডেন-প্রবাসী মোয়াজ্জেম হোসেন আলমগীর। সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আমার সংগে মঞ্চে কথা বলার ছবিটি ইত্তেফাকের চিত্রগ্রাহক সুবীর কুমারের তোলা। শিল্পিতর আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে তুমি এসেছিলে তোমার জন্মদিনে আমার সংগে দেখা করতে। পরে আমি সবাইকে জানাই যে, আজ তোমার জন্মদিন। উপস্থিত সবাই হাততালি দিয়ে সেদিন তোমাকে শুভ জন্মদিন জানায়। খুব মজা হয়েছিল গত বছরের এই দিনে। এই হচ্ছে ছবিগুলোর জন্মকথা। শুভ জন্মদিন, মৃত্তিকা। আমার আশীর্বাদ, স্নেহ ও ভালোবাসা। কর্মের মধ্যে তোমার শিল্পগুণের বিকাশ ও প্রকাশ ঘটুক, এই প্রার্থনা।
২৩.০৫.২০১৫
ভারত আমাদের গন্তব্য নয় : নতুন ছবি
আমার আরও একটি কবিতা অবলম্বনে আরও একটি নাতিদীর্ঘ চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে। কবিতার নামে ছবিটির নাম রাখা হচ্ছে, ‘ভারত আমাদের গন্তব্য নয়।’ ছবির তরুণ পরিচালক জিৎ দে-র প্রথম ছবি হবে এটি। জিৎ দে প্রখ্যাত পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল-এর সহকারী পরিচালক হিসেবে ‘জীবন ঢুলী’ ছবিতে কাজ করেছেন। সাম্প্রদায়িক পীড়নের মুখে হিন্দুদের দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার বিরুদ্ধে এই ছবিটি জন্মভূমিতে লড়াই করে বাঁচার মানসিকতা তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে পরিচালক আশা করেন। ছবিতে পিতার চরিত্রে অভিনয় করবেন প্রখ্যাত অভিনেতা ও আবৃত্তিকার জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। কন্যার চরিত্রে অভিনয় করবে নতুন মুখ কুমারী পপি বিশ্বাস। স্বল্প বাজেটের এই ছবিটির প্রযোজনা করছেন পুলিন মল্লিক। হুলিয়া ও নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ-এর পর ভারত আমাদের গন্তব্য নয়- হবে আমার কবিতানির্ভর তৃতীয় ছবি। আমার কিশোর উপন্যাস ‘কালো মেঘের ভেলা’ অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে আরেকটি চলচ্চিত্র, আমার কন্যা মৃত্তিকার পরিচালনায়। ইতিমধ্যেই কমলাপুর রেলস্টেশন ও কাশবনে ছবিটির সিংহভাগ শ্যুটিং সম্পন্ন হয়েছে। আমার কবিতা ও গল্পকে তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতারা বেছে নিতে শুরু করেছেন, দেখে আমি খুব আনন্দ বোধ করছি।
হুলিয়া কবিতা দিয়ে এই কাজটা ১৯৮৫ সালে শুরু করেছিলেন তানভীর মোকাম্মেল। তাঁকে ধন্যবাদ। পরবর্তীতে এর ধারাবাহিকতায় যুক্ত হয়েছেন কবি ও পরিচালক মাসুদ পথিক, কবি মৃত্তিকা গুণ ও পরিচালক জিৎ দে। তাদের সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। প্রখ্যাত নাট্যজন ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ আমার ‘দেশান্তর’ উপন্যাস অবলম্বনে পূর্ণদৈর্ঘ চলচ্চিত্র নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি প্রযোজকের সন্ধানে রয়েছেন। একদিন দেশান্তরও ছবি হবে বলে আমার বিশ্বাস। দুঃখের বিষয় একটাই, আমার কবিতা ও গল্পনির্ভর কোনো ছবি বাণিজ্যসফল হয়নি এবং হবেও না। তবে একটা বাণিজ্যসফল ছবি বানাবার বাসনা আমার আছে। সেটা হবে আমার জীবনীনির্ভর। নাম হবে ‘মহাজীবনের কাব্য।’
০৭.০৪.২০১৫
আমার ইলিশস্বপ্ন
ভাবছি ইলিশ মাছ মারতে পদ্মা নদীতে চলে যাবো। জানতে চাচ্ছি, মাছ ধরার জাল থাকলেই হবে, নাকি সরকারের অনুমতি লাগবে? নিয়ম না জেনে ইলিশ ধরে শেষে নদী-পুলিশের হাতে ধরা খেতে চাই না। কেউ কি আমাকে বলবেন কী করতে হবে?
১৩.০৪.২০১৫
সৌম্য সরকারের প্রথম সেঞ্চুরি
জীবনের প্রথম সেঞ্চুরি করার পর যথারীতি ব্যাট উঁচিয়ে আকাশপানে তাকিয়ে বাংলাদেশের ওপেনিং ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার কিছু একটা ভাবছেন। আশ্চর্য বটে, পায়ের নিচে, মাটির উপর দাঁড়িয়ে যে ক্রিকেটাররা তাদের জীবনের প্রার্থিত সাফল্য অর্জন করেন, তারা তাদের জীবনের আনন্দমুহূর্তে মাটির দিকে না তাকিয়ে আকাশের দিকে তাকান। আকাশে কী যেন আছে। কে যেন আছেন। জীবনের প্রথম শতক হাঁকার পর সৌম্য সরকার কী করেন, দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। অভিনন্দন সৌম্য। তোমার ব্যাটিংদক্ষতা প্রশ্নাতীতভাবে আজ মীরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রমাণিত হয়েছে। তোমার চার-ছয়ের মারগুলো দেখে আমরা, দর্শকরা অনেক অনেক আনন্দ পেয়েছি। বিশ্বের সকল বোলিং অ্যাটাকের বিরুদ্ধে তোমার ব্যাটের ধ্রুপদী দাপট অব্যাহত থাকুক, এই প্রার্থনা।
২২.০৪.২০১৫
ক্ষমা করো ভূমিকম্প
ক্ষমা করো ভূমিকম্প, শত শত বর্ষ ধরে
হিমালয়গর্ভে তুমি সুপ্ত ছিলে
বাসকীর শান্তস্থির ফুার উপরে।
আজ তবে কোন পাপে, কোন রোষে,
কোন অপরাধে
কোটি কোটি নাগিণীর মিলিত নিশ্বাসে
মুহূর্তে গুঁড়িয়ে দিলে শতাব্দী প্রাচীন
মন্দিরশোভিত কাঠমা-ু
ভক্তপুর, পোখরা ধূলিখেল, আর
সীতার জন্মস্থান জনকপুরীর পুণ্য জনপদ?
হে অশ্রুসিক্ত পর্বতদুহিতা নেপাল,
তোমার চোখের জল আমার চোখে দাও।
২৬.০৪.২০১৫
ধন্যবাদ কাকলী প্রকাশনী
আমার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও প্রিয় প্রকাশক হচ্ছেন কাকলী প্রকাশনীর মালিক জনাব এ কে নাছির আহমেদ সেলিম। আমার সবচেয়ে প্রিয় গ্রন্থ নির্বাচিতা (নির্বাচিত প্রিয় কবিতার সংকলন)সহ আমার কাব্যসমগ্র (১-৪), আমার ছেলেবেলা, আমার কণ্ঠস্বর, দেশান্তর, কালোমেঘের ভেলা, আমি যখন বড় হবো, আপন দলের মানুষ (গল্পগ্রন্থ), সোনার কুঠারসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের প্রকাশক হচ্ছে কাকলী প্রকাশনী। ঘটনাচক্রে আশির দশকে আমার বই দিয়েই কাকলীর নবযাত্রা শুরু হয়েছিল। কাকলী প্রকাশনী থেকেই আমি সবচেয়ে বেশি অর্থ সম্মানী হিসেবে লাভ করেছি। সম্প্রতি আমার রচনাবলী প্রকাশের ব্যাপারে কাকলী প্রকাশনীর সঙ্গে আমার চুক্তি হয়েছে। কাকলী প্রকাশনী আমাকে সম্মানী হিসেবে পাঁচ লক্ষ টাকা অগ্রিম দিয়েছে। এর ফলে কামরাঙ্গীরচরে আমার একখ- জমি কেনার পথ সুগম হলো। দুস্থ ও অসুস্থ কবি হিসেবে আমাদের দুস্থ প্রধানমন্ত্রী আমাকে বিশ লক্ষ টাকা সঞ্চয়পত্র আকারে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে অনুদান দিয়েছেন। সেই টাকা হচ্ছে চাবিমারা টাকা। ওই সঞ্চয়পত্র থেকে আমি মাসে ২১ হাজার ৪শ টাকা সুদ হিসাবে পাই, কিন্তু টাকার কিয়দংশও ক্যাশ করতে পারি না। সেই স্বাধীনতা আমার নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে আমি ক্ষমতার অপব্যবহার বলে মনে করি। তারপরও কাশবন ও আমার ওপর নির্ভরশীল কিছু মানুষের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে, ওই স্বাধীনতাহীন পারিবারিক সঞ্চয়পত্র আমি গ্রহণ করেছি। আশা করছি প্রতিশ্রুতি মতো মাননীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংগে কথা বলবেন। কবিকে অস্বস্তিতে রাখাটা কোনো কাজের কথা নয়। আমার প্রকাশকদের মধ্যে একমাত্র কাকলীর মালিক সেলিম সাহেবই আমার কন্যাকে আমার অপারেশনের সময় টাকা দিতে চেয়েছিলেন, যদিও শেষপর্যন্ত তাঁর প্রতিশ্রুত টাকা আমার কন্যাকে গ্রহণ করতে হয়নি। ল্যাব এইড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার সকল চিকিৎসা ব্যয় মওকুফ করে দিয়ে আমার প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা প্রদর্শন করে। কিন্তু আমার অন্তত একজন প্রকাশক যে আমার জীবনের চরম দুঃসময়ে আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, লেখক হিসেবে, এটা আমাকে অত্যন্ত আনন্দ ও স্বস্তি দিয়েছে। ধন্যবাদ সেলিম সাহেব। ধন্যবাদ কাকলী প্রকাশনী। স্থির হয়েছে, মোট ১০ খ-ে আমার রচনাবলী আগামী বইমেলা থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে। প্রতি খ-ের পৃষ্ঠা সংখ্যা হবে ৪৮০ পৃ. অর্থাৎ ৩০ ফরমা করে। প্রতিখ-ের দাম কত হবে, এখনও স্থির হয়নি।
২৮.০৪.২০১৫
এক রিকশাচালকের গল্প
এই ভদ্রলোকটির নাম নজরুল ইসলাম। ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে থাকেন। পেশায় রিকশাচালক। ওনার দেশের বাড়ি দিনাজপুর। তাঁর ছবিসহ জীবনবৃত্তান্ত প্রকাশ করার একটা কারণ আছে। কারণটা বলি। কামরাঙ্গীর চরের বেড়িবাঁধ থেকে কাঁটাবনের রিকশাভাড়া ৫০ টাকা। হাতিরপুল বাজারে গেলে ৬০ টাকা। বেশি ভাড়া চান কেউ কেউ, কিন্তু এর কম কাউকে চাইতে শুনি না সাম্প্রতিককালে। কিন্তু এই নজরুল ইসলাম আমাকে অবাক করে আমার কাছে কাঁটাবনের ভাড়া চাইলেন ৩৫ টাকা। কেউ বড্ড বেশি ভাড়া চাইলে মাথা গরম হয়। আবার অভাবিতভাবে কোন রিকশাওয়ালা যদি কম ভাড়া চেয়ে বসেন, তাহলেও দেহমনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। রক্ত ঠা-া হয়ে আসে। আমারও তাই হলো। আমি রিকশাওয়ালার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললাম, ঠিক আছে আমি আপনার রিকশায় উঠছি, কিন্তু ভাড়াটা কাঁটাবনে গিয়ে ঠিক করব।
কাঁটাবনে গিয়ে রিকশা থেকে নেমে আমি বললাম, আপনি সোজা হয়ে দাঁড়ান, আমি আপনার ছবি তুলবো। মুখপঞ্জিতে আপনার সম্পর্কে লিখবো। আমি পথের ওপর দাঁড় করিয়ে রেখে রিকশাওয়ালার ছবি তুলছি দেখে বেশ কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে গেলো। একজন বললো, কবি দাদা ওর ছবি তুলছেন কেন? কী করেছে ও? আমি বললাম, ও মানুষ ভালা না।
রিকশাওয়ালা আমার হাত চেপে ধরে বললো, স্যার আপনে মুরব্বি মানুষ। কুনু অন্যায় হইলে আমারে মাফ কইরা দিয়েন।
ততক্ষণে ছবি তোলা শেষ। আমি তাকে তার সদ্যতোলা ছবিটা দেখালে সে খুশি হলো। তার মুখ থেকে ভয়ের ভাবটা কেটে গেলো। বুঝলো এত মমতা দিয়ে যে লোক তার ছবি তুলেছে, সে নিশ্চয়ই ভালো মানুষ। আমি ৫০ টাকার একটা চকচকে নোট তার দিকে তুলে ধরে বললাম, যাও আজকের মতো তোমাকে মাফ করে দিলাম। ভবিষ্যতে আর কখনও যদি কম ভাড়া চাও, তো তোমার খবর আছে। মনে থাকবে?
টাকাটা বুক পকেটে রেখে রিকশাওয়ালা বললো, মনে থাকবে।
যাবার পূর্বে বললো, স্যার আমার একটা ছেলে আছে, ক্লাস ফাইভে পড়ে। ওর জন্য দোয়া করবেন। ও জানি আপনের মতো কবি হয়।
শুনে আমার চোখে জল এসে গেল।
কামরাঙ্গীর চর, ৩০ এপ্রিল ২০১৫
শ্যালিকার সংগে গালগল্প
আমার প্রিয় শ্যালিকা মণি আমার সামাজিক অবস্থান বা বাজারমূল্য সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়ার জন্য আমাকে বললো, আইচ্ছা দাদা আপনের দাম কি মন্ত্রীদের সমান না নিচে? পধানমন্ত্রী বা পেসিটেন (সে প্রেসিডেন্ট শব্দটা সঠিক উচ্চারণ করতে পারে না) এরা আপনের চেয়ে কত উরপের?
আমি বললাম, কিয়ের লগে কী! কার লগে কার তুলনা। তবু তুই যহন একটা ধারণা নিতে চাছ, তো বলি। শোন, মনে কর একটা দাড়িপাল্লার এক পাল্লায় আমারে উঠানো হইলো। ঠিক আছে?
হ, ঠিক আছে। কন।
অন্য পাল্লায় তোলা অইলো ওগো পায়ের কেনি আঙুলের একটা নউখ।
দেখবি আমি যে পাল্লায় বইছি, হেইডা লাফ দিয়া উরপে উইঠ্যা গেছে। আর নখের ভারে বাকি পাল্লাডা মাডির উরপে পাত্থরের মতো চাইপ্যা বইসা আছে। হুহু।
আমার শ্যালিকা ক্ষীণ কটিতে মৃদু ভূমিকম্পের দুলুনি তুলে গৃহান্তরে যেতে যেতে বললো, হুনছি আপনের কথা। অত লালি আদজের (আধা সের) না। আপনের ওজন কিছু কম হইতে পারে, কিন্তু ওগো ওজন অত না। এরা আইজ আছে কাইল নাই।
আমি অনেক ডেকেও আমার দ্বিতীয় গিন্নিকে থামাতে পারলাম না। সে রাগ করে উঠে গেলো।
আমি চেয়ে চেয়ে দেখলাম। আমার করার কিছু ছিল না।
০৪.০৫.২০১৫
একদিন চুল কাটতে যাব না সেলুনে
চাঁদনী হেয়ার কাটিং। কামরাঙ্গীর চর। আমি গত সাত বছর ধরে এই সেলুনে চুল-দাড়ি ছোট করার কাজটি করিয়ে থাকি। চুল, দাড়ি, গোঁফÑকোনটা কতটা ছোট করলে আমার চেহারার সংগে মানাবেÑ আমি স্বস্তি পাবো, এই সেলুনের মালিক মুহম্মদ সেলিমই তা ঠিক করে থাকে। আমি এ ব্যাপারে তার উপর অনেকটাই নির্ভর করি।
হার্ট সার্জারির কারণে গত ছয় মাস চুল-দাড়ি কাটা হয়নি। সেলুনে যাব যাব করেও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। কাল চাঁদনী হেয়ার কাটিং সেলুনে গেলে সেলুন মালিক আমাকে খুব যতœ করে আমার চুল-দাড়ি-গোঁফ কেটে ছেটে আমার মুখটাকে সুন্দর করে দিল। স্বস্তিও পেলাম। ধন্যবাদ সেলিম।
সেলিম আমার অসুস্থতার সব সংবাদ রাখে। বললো, স্যার আপনি ভালো হয়ে আবার আমার সেলুনে ফিরে এসেছেন। আমরা খুব খুশি হয়েছি।
আমি বললাম, তোমরা আমার জন্য দোয়া করেছিলে তো?
জি স্যার, অনেক দোয়া করেছি।
তারপরই আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুললো সে। আবার অসুস্থ হলে এই ছবি দেখে সে আমার জন্য আবারও দোয়া করতে পারবে। কাস্টমারদের দেখিয়ে বলতে পারবে, এই লোকটাই কবি নির্মলেন্দু গুণ। উনার চুল-দাড়ি কাটার দায়িত্ব আমার। উনি আমাকে ভালোবাসেন।
৪ মে ২০১৫
যার বেলায় প্রযোজ্য
আমার মতো সাধারণ কবির ‘ধৃষ্টতাপূর্ণ’ পত্রের উত্তর প্রদানকালে, ক্ষুব্ধ বোধ না করে মনে করবেন রবীন্দ্রনাথ বা নজরুল বা জীবনানন্দের মতো বড় কবিদের সুখপত্র আপনার ভাগ্যে ছিলো না। পাশাপাশি এও মনে রাখবেন যে, বাংলাদেশের এইসব ‘ছোট-কবিরা’-ই ছিলেন আপনার সহযাত্রী এবং ছিলেন বঙ্গবন্ধুহীন বিপন্ন দেশমাতৃকার দুঃসময়ে আপনার সহযোদ্ধা এবং অগ্রযোদ্ধা। আপনার মনের অভ্যন্তরে অংকুরিত অহংকে যদি দমন করতে পারেন, তবে তা আমার, আপনার নিজের এবং দেশের সকলের জন্যই মঙ্গলজনক হবে।
০৯.০৫.২০১৫
বিদায় অভিশাপ
আমার লেখার পাট চুকে গেছে বেশ কয়বছর আগেই। এখন, গত ৪-৫ বছর ধরে মুখপঞ্জিতে (ফেসবুকে) মনে জাগা ছোট ছোট চিন্তাকে ছোট আকারে প্রকাশ ও প্রচার করার সুযোগ নিচ্ছি। এটাই আমার মতো অলস মানুষের চরিত্রের সংগে মানায়। হয়ত আরও কিছুদিন চেষ্টা চালানো যেত। বাড়ানো যেত গ্রন্থসংখ্যা। অকারণ পুলকে মুগ্ধ করা যেত আমার পাঠকদের। কিন্তু অন্তর থেকে তেমন কিছু করার সায় পাইনি। আমার কেবলই মনে হয়েছে, হচ্ছে, যা বাবা, যথেষ্ট হয়েছে। এবার নামিয়ে নাও জ্ঞানের বোঝা, সইতে নারি বোঝার ভার...।
এবার হাত-পা গুটিয়ে একটু নির্ভার হয়ে বসো। তোমাকে জীবনপ্রবাহ থেকে প্রত্যাহার করে নেবার জন্য স্বর্গ থেকে যে স্বর্ণরথ পাঠাবেন ঈশ্বর, সেই স্বর্ণরথের যাত্রা শুরু হয়েছে। তুমি কী মহানন্দে পুলকিত বালকের মতো সেই স্বর্ণরথে চড়ে বসবে, সে আমরা জানি, হে কবি।
তুমি বড় কবি বলে বড় কবি নও। ছোট কবি হতে, এমনকি কবি না হতেও ভয় পাওনি বলেই তুমি বড় কবি হয়েছো বা কবি হিসেবে বড় হয়েছো।
যাও, আমরা তোমাকে বিদায় দিচ্ছি, যে ভালোবাসা তুমি দিয়ে গেছো আমাদের তা দিয়ে আমাদের জীবন চলে যাবে।
কামরাঙ্গীর চর, ১১ মে ২০১৫
পুরনো ছবি, নতুন চেক
একটা খুব পুরনো দিনের ছবি আমাকে উপহার দিয়েছেন প্রখ্যাত প্রচ্ছদকার ধ্রুব এষ। ধ্রুবর সংগে এসেছিলেন শিশু সাহিত্যিক ও বাংলাপ্রকাশের কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির ঢালী। ধ্রুব দিলো ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমির কোন অনুষ্ঠানে আমার কবিতা পাঠের একটা ছবি। মনে হয় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানের ছবি হবে। ছবিতে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে আমি কবিতা পড়ছি। আমার বামপাশে তরুণ কবীর চৌধুরী। সম্ভবত তিনি তখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন। তাঁর পাশে কবি সুফিয়া কামাল। তিনি সম্ভবত তখন বাংলা একাডেমির সভাপতি ছিলেন। অথবা তখনকার সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠা কবি হিসেবে কবীর চৌধুরীর পাশের চেয়ার অলংকৃত করে থাকবেন। কোন কবিতা পড়েছিলাম, মনে পড়ে না। ছবিটা কে তুলেছিলেন, তার নাম নেই ছবির পেছনে। তবে ছবিটা ধ্রুব যার মাধ্যমে পেয়েছে, তাঁর নাম মাহবুব রেজা, শিশু সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। ছবির পেছনে সুন্দর ছোট হরফে লেখা আছে ছবির সংগ্রাহক মাহবুব রেজার নাম আর ডান কোণে লেখা আছে বাংলা একাডেমী ১৯৭২। কোনো পুরনো দুর্লভ ছবি না দিলেও ঢালী প্রায় সম-আকারের যে কাগজখ- দিয়েছিল, তার মূল্যও কম নয়। সেটি ছিল বাংলাপ্রকাশের পক্ষ থেকে প্রদত্ত এক লক্ষ টাকার চেক। ধন্যবাদ ধ্রুব, ধন্যবাদ ঢালী, ধন্যবাদ মাহবুব রেজা। মধুরেণ সমাপয়েৎ।
১৬.০৫.২০১৫
ভালোবাসা যারে কয়
ভাত মাংস ছিটিয়ে কাক-পক্ষী-বিড়াল-কুকুরকেও সত্যিকারের বশ মানানো যায় না। তাদের জন্য ভালোবাসাও থাকতে হয়, যা বিলাই কুত্তাও বুঝে। মানুষ বুঝবে না কেন? নিশ্চয়ই বুঝবে। বুঝে। বুঝেও চুপ করে থাকে। উপেক্ষার জবাব দেবার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। আমার ধারণা, আমাদের নেতা-নেত্রীদের মধ্যে ভালোবাসার ঘাটতি আছে। বঙ্গবন্ধুর মধ্যে এই ঘাটতিটা ছিল না। থাকলেও খুব কম ছিল। আজকাল ভালোবাসার অভিনয়টা বড় বেশি বেড়েছে। আপনি ভালোবাসার অভিনয় করে যাবেন দিনের পর দিন, বছরের পর বছরÑ আর মানুষ তা ধরতে পারবে না, এ রকম আশা করা সঙ্গত নয়। এ রকম যারা করছেন, তারা সংযত হোন।
১৭.০৫.২০১৫
স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কিছুদিন পূর্বে রচিত এই গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় কবিতাটির কারণে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার পক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া আর সম্প্রতিকালে বিশিষ্ট আবৃত্তিকার-অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের সংস্কৃতিমন্ত্রী হওয়া কিছুটা হলেও সহজ হয়েছে। কিন্তু তাঁরা তা কোনোদিন প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি, ভবিষ্যতেও করবেন না। আপনাদের কী মনে হয়? শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নবরূপপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের মধ্যে কৃতজ্ঞতাবোধের ঘাটতি আছে। কারও প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ঝুঁকি নিয়ে সে ছোট হতে চায় না। সে জানে না যে, এটাই হচ্ছে তার ছোট হওয়ার পথ।