জীবনযাত্রা ও জলবায়ুর পরিবর্তনে এই ভীতিকর পরিস্থিতি
প্রকাশ : ১৪ মে, ২০১৬ ২১:৪৬:১৮
বজ্রপাত
জীবনযাত্রা ও জলবায়ুর পরিবর্তনে এই ভীতিকর পরিস্থিতি
লম্বা সময় ধরে অতিরিক্ত গরম অব্যাহত থাকলে বজ্রপাত সৃষ্টির পরিস্থিতি উদ্ভব হয় বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ। তিনি বলেন, তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতি যদি অনেক সময় ধরে চলতে থাকে তাহলে দাবানলসহ আরও প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়।
এটি ঠেকানোর সাধারণত কোনো উপায় নেই উল্লেখ করে এই পরিবেশবিজ্ঞানী বলেন, মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন আর আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভীতকর হতে পারে।
শনিবার ঢাকাটাইমসের সঙ্গে মুঠোফোনে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহিউদ্দিন মাহী।
ঢাকাটাইমস:বজ্রপাতে গত দুই দিনে অর্ধশতাধিক মানুষ মারা গেছে। এ ঘটনা তো বিরল।
অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ: অবশ্যই বিরল ঘটনা। এর আগেও বজ্রপাত হয়েছে। মানুষও মারা গেছে। কিন্তু এত বেশি মানুষ বজ্রপাতে মারা যায়নি।
ঢাকাটাইমস: কেন এমন ঘটছে?
অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ: প্রচণ্ড গরম লম্বা সময় ধরে চলতে থাকলে আর্দ্রতা কমে যায়। নদী শুকিয়ে যাওয়া, জলাভূমি ভরাট হওয়া আর গাছ ধ্বংস হওয়ায় দেশে অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা এক থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বর্ষা আসার আগের সময়টা, অর্থাৎ মে মাসে তাপমাত্রা বেশি হারে বাড়ছে। এতে এই সময়ে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। আর বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে আসা আর্দ্র বায়ু আর উত্তরে হিমালয় থেকে আসা শুষ্ক বায়ুর মিলনে বজ্রঝড় সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবেই বেশি বেশি বজ্রপাত ঘটছে।
ঢাকাটাইমস:দেশেএর আগেও প্রচণ্ড গরম পড়েছে। কিন্তু তখন এত বেশি বজ্রপাত কিংবা মানুষও মারা যায়নি।
অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ: একসময় দেশের বেশির ভাগ গ্রাম এলাকায় বড় গাছ ছিল। তাল, নারিকেল, বটসহ নানা ধরনের বড় গাছ বজ্রপাতের আঘাত নিজের শরীরে নিয়ে নিত। খোলা মাঠেও বিভিন্ন স্থানে গাছ ছিল। ফলে মানুষের আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা কম ছিল। সেসব গাছ কেটে সাবাড় করা হচ্ছে।
এ ছাড়া দেশের বেশির ভাগ মানুষের কাছে এখন মুঠোফোন থাকছে। দেশের অধিকাংশ এলাকায় মুঠোফোন ও বৈদ্যুতিক টাওয়ার রয়েছে। দেশের কৃষিতেও যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। আকাশে সৃষ্টি হওয়া বজ্র মাটিতে কোনো ধাতব বস্তু পেলে তার দিকে আকর্ষিত হচ্ছে।
আমরা যদি আবহাওয়া পরিক্রমা দেখি তাহলে দেখতে পাব গত তিন-চার বছরে এ রকম তাপমাত্রা ছিল না। এটা কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনেরও একটা বিষয়। এটাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে চলবে না।
ঢাকাটাইমস: এর মানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে অতি বজ্রপাত হচ্ছে?
অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ: এটাকে অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। বৈশ্বিক জলবায়ুর দিকে তাকালেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। বজ্রপাতসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের পেছনে জলবায়ু পরিবতর্নও অনেকাংশে দায়ী। দাবানাল, শিলাবৃষ্টিসহ আরও অনেক কিছুই হতে পারে।
ঢাকাটাইমস: জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত সমস্যার কারণে ভবিষ্যতে আর কী কী সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে?
অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ: জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে ইতোমধ্যে আমরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। এর মধ্যে যেমন ঋতু পরিবর্তনের সময়কালে হেরফের হচ্ছে। অনেক ঋতু স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দীর্ঘ হচ্ছে। আবার অনেক ঋতু ছোট হচ্ছে। এই সমস্যা সামনে আরও বাড়বে।
ঢাকাটাইমস: এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কী?
অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ: প্রাকৃতিক সংকট থেকে উত্তরণের কোনো উপায় নেই। যা ঘটবে প্রাকৃতিকভাবেই ঘটবে। তবে আমাদের পরিবেশের প্রতি সচেতন হবে। পরিস্থিতির আলোকে মানিয়ে নিতে হবে।
ঢাকাটাইমস: বজ্রপাতে নিহতের লাশ চুরি হয়। কেন?
অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ: আসলে বজ্রপাতের কিছু ইতিবাচক দিক আছে। বজ্রপাতের কারণে প্রচুর নাইট্রোজেন অক্সাইড তৈরি হয়। এটাকে বলে ন্যাট্রিফিকেশন প্রসেস। এটা মাটির জন্য ভালোল। এটা মাটির উর্বরতা বাড়ায়। কিন্তু লাশের সঙ্গে বা মরদেহের হাঁড়ের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক আছে কি না আমার জানা নেই। আমি এ সম্পর্কে আগে কখনো শুনিনি।