একসময়ের ফুটবল আইকন এখন বিজনেস আইকন। দেশের ফুটবল আর রপ্তানিখাত এগিয়ে নিতে এখনো অবদান রেখে চলেছেন। যেখানে হাত দিয়েছেন, সেখানেই সোনা ফলিয়েছেন। সফল মানুষ আবদুস সালাম মুর্শেদী- তার জীবন, দর্শন, ফুটবল, ব্যবসা, দেশ সবকিছু নিয়ে বিশদ বলেছেন ঢাকাটাইমসকে। আজ দীর্ঘ আলাপচারিতার দ্বিতীয় পর্ব ছাপা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেলোয়ার হোসেন।
আপনার অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অনেক ব্যস্ততা। তারপরও ফুটবলকে সময় দিচ্ছেন, টাকা-পয়সা দিচ্ছেন, স্পন্সর জোগাড় করছেন। অনেক সময় অনেক কথা শুনতে হয়, সমালোচনা হয়। তখন কেমন লাগে?
একটু কষ্টই লাগে। তারপরও মনে করি, এটা আমার দায়িত্ব। কাউকে না কাউকে তো কাজ করতেই হবে। আমি মনে করি, আমরা যদি ফুটবলকে একটি জায়গায় নিয়ে রেখে যেতে পারি, তাহলে পরবর্তীতে যারা আসবেন তারা সেটি ধরে রাখতে পারবেন। ভবিষ্যতে দেখবেন, ক্লাবগুলো তাদের নিজেদের মাঠ তৈরি করে নিবে। চট্টগ্রামে যখন চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলা হয় তখন দেখবেন গ্যালারি পরিপূর্ণ থাকে। এক্ষেত্রে রেভিনিউ বাড়ছে। এটাও কিন্তু প্রয়োজন। শুধু খেলোয়াড় তৈরি করলেই হবে না। আপনার পৃষ্ঠপোষকও প্রয়োজন। তাহলে সংগঠকরাও আগ্রহী হবেন। ক্লাবকে সফলতা পেতে হলে তো টাকারও প্রয়োজন। আমি ধন্যবাদ দিতে চাই বিটিভি ওয়ার্ল্ড ও বৈশাখী টিভিকে। মাঠে যে ফুটবল খেলা হচ্ছে তা কিন্তু তারা গ্রামগঞ্জে সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মাঝে মধ্যে খারাপ লাগে। কিন্তু সবসময় আমি এটা মনে করি যে, ফুটবল আমাকে আজকের এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। আমাকে পৃথিবীটা চিনিয়েছে। তার জন্য যদি একটু কষ্ট পাই তাকে আমি কষ্ট মনে করি না। আনন্দ হিসেবে গ্রহণ করি। অনেক কিছু সহ্য করি বলেই ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি।
দীর্ঘদিন ধরে আপনি বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি। বয়সে এখনো অনেকটাই তরুণ। সামনে সভাপতি পদে নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে নিশ্চয়ই।
আসলে আমি যে জিনিস কখনো স্বপ্নেও দেখিনি সেটি আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। এ নিয়ে আমি চিন্তা করি না। এটা যখন আমার প্রয়োজন হবে তখন হয়ত আমার কাছে চলে আসবে। তবে এ বিষয়ে আমি এখনো কোনো চিন্তা করিনি। সময়ই সবকিছু বলে দিবে।
এবার অন্য প্রসঙ্গ। ব্যবসার শুরু কীভাবে?
অনেক বড় প্রতিবন্ধকতা। আমার বাবা শিক্ষক ছিলেন। ব্যবসায় আমাদের অতীত কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। ওই সময় সবাই গার্মেন্ট ব্যবসা শুরু করে। আমিও শুরু করলাম। কুতুব ভাই চাকরি করতেন। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। জনতা ব্যাংকের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে ছিলেন। যত ইন্ডাস্ট্রি পাস হতো ওনার হাত দিয়ে। উনি মোহামেডান ব্যাডমিন্টন টিম চালাতেন। সেই হিসেবে ফুটবল খেলা দেখতে আসতেন, আমার কাছে বসতেন। এখনো আমাদের মধ্যে ছোট ভাই বড় ভাইয়ের মতো সম্পর্ক। হঠাৎ করে উনি আমাকে বললেন, সালাম ব্যবসা করবা নাকি। আমি বললাম, হ্যাঁ করতে পারি। কিন্তু আপনি তো চাকরি করেন। আর আমি তো খেলি কিভাবে করব। ওইভাবেই ব্যবসা শুরু করা। উনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। পরে যখন দেখি আস্তে আস্তে ব্যবসা বাড়ছে তখন ফুটবলকে বাই বাই বলে চলে আসলাম।
আপনি ফুটবল মাঠে সফল। সফল শিল্পপতি, ব্যবসায়ী হিসেবেও। এত সাফল্যের রহস্য কি?
বাবা-মায়ের দোয়া ছিল। আমার যারা রিলেটিভ সবার দোয়া ছিল। তাছাড়া আমি মনে করি, ব্যবসায় সফলের পেছনে কুতুবউদ্দিন ভাইয়ের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। পরিবারের মধ্যে আমার স্ত্রীও যথেষ্ট সেক্রিফাইস করেছে। আমি বিয়ের পরদিনই বিজনেসের কারণে দেশের বাইরে চলে গিয়েছি। আমি মনে করি, খেলোয়াড়ি জীবনের চেয়ে ব্যবসা আরও বেশি কঠিন। আমরা যারা এক সঙ্গে খেলেছি তাদের অনেকেই গার্মেন্ট ব্যবসা করেছেন। কিন্তু এইভাবে ভালো করতে পারেননি। আমি আগে অফিসে যে সময় দিতাম তার চেয়ে এখন দ্বিগুণ দেই। এখন প্রায় ১২ ঘণ্টা সময় দেই। এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল বলে আমি খুলনা থেকে ঢাকায় আসতে পেরেছি, জাতীয় দলে খেলতে পেরেছি। আর জাতীয় দলে খেলতে পেরেছি বলেই ব্যবসার সুযোগ পেয়েছি। সুতরাং আমি মনে করি সব সফলতার পেছনে স্বাধীনতা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। যুদ্ধের সময় আমরা খুব ছোট ছিলাম। দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তাম। আমি মনে করি, এই ব্যবসার মাধ্যমে যদি কিছু লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে পারি তাহলে সেটি মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি সম্মান দেখানো হবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে চেষ্টা করছি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।
আপনার বাবা তো আপনার ব্যবসায়িক সাফল্য দেখে যেতে পারেননি।
মা দেখেছেন। বাবা দেখতে পারেননি। বাবা ’৮৮ সালে মারা গেছেন। তখন আমি বিজনেস স্ট্রার্ট করি। উনি ব্যবসা দেখে গেছেন কিন্তু সাফল্যটা দেখেননি। মা দেখেছেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন আমার বাসায়ই। আমার বাবা-মা অন্য ছেলেমেয়েদের টাকা নিতেন না। আমি যেদিন থেকে আয় করি তাদেরকে দিয়েছি, শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত।
তাদের কতটা মিস করেন?
বাবা-মাকে প্রতি মুহূর্তে মিস করি। বাবা-মায়ের দোয়া ছিল বলেই আমি অজপাড়া গাঁ থেকে এসে এখন প্রতিষ্ঠিত। সব মিলিয়ে এখনো আমার মনে হয় যদি আবার আগের জীবনে ফিরে যেতে পারতাম। সত্তর-আশির দশকে যখন খেলেছি, ওই সময়টা যদি এখন হতো। এখন ৩০টা টেলিভিশন, ১০টা রেডিও ৫০টা পেপার। বড় কাভারেজ মিলে ছোট্ট একটা সাফল্যে। এখন যারা খেলছে তাদের জনপ্রিয় হওয়া কত যে সহজ, এরা আমাদের সময়ে থাকলে উপলব্ধি করত। এখনো যে বাংলাদেশ টিমে ভালো খেলোয়াড় নেই তা আমি বলব না। আছে। কিন্তু কাউকে জার্সি নম্বর না দেখে নাম বলা যায় না। আগে হাঁটা, দেহের গড়ন দেখে বুঝা যেত যে উনি টুটুল, আনোয়ার, আসলাম, বাবুল।
ফুটবল আইকন এবং বিজনেস আইকন- কোনটি আপনি এগিয়ে রাখবেন?
ব্যবসা হচ্ছে সবসময় প্রতিযোগিতামূলক। আমরা শুধু বাংলাদেশেই প্রতিযোগিতা করছি না। আমরা আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতা করছি। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থেকে সাফল্য অর্জন করার মধ্যে মজা আছে। আবার দেখেন, এত ভালো করার পরও বলে, ‘ইওর কোয়ালিটি ইজ নট গুড।’ আপনাকে আরও ভালো করতে হবে ইত্যাদি কথা শুনতে হয়। সবকিছু মিলিয়ে আমি মনে করি যে, ফুটবল না খেলে এই পর্যায়ে আমি আসতে পারতাম না। ফুটবলার হিসেবে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি ফুটবলে সম্মান পেয়েছি। আবার ব্যবসায়ও পেয়েছি। তবে যখন কেউ আমার ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে বলে, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার, সর্বোচ্চ গোলের অধিকারী, তখন আমার বেশি ভালো লাগে।
ব্যবসাক্ষেত্রে আপনার আদর্শ কে? কাকে অনুসরণ করতেন?
আমরা ব্যবসা করতে এসে যাকে পেয়েছি তিনি আজ বেঁচে নেই। তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। তিনি হচ্ছেন নুরুল কাদের খান। উনি সচিব ছিলেন। পরে ব্যবসায় আসেন। আমি বিজিএমইএর সভাপতি থাকাকালে বিজিএমইএ অডিটোরিয়ামকে নুরুল কাদের অডিটোরিয়াম করে দিয়ে আসছি। তিনিই আমার আইডল ছিলেন।
এত উপরে ওঠার পেছনে আপনার সবচেয়ে বড় নিয়ামক কী?
বড় হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় জিনিসটি হলো ধৈর্য। আমি যখন বিজনেস করি, তখন অনেক সমালোচনা শুনেছি। আমার ফ্রেন্ড সার্কেল অনেক সমালোচনা করেছে। আমার শুভাকাক্সক্ষীরাও বলেছে, আপনি অনেক ঝুঁকি নিচ্ছেন। আমি বলেছি, ঝুঁকি না নিলে তো মানুষ কখনো সফল হতে পারে না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, নেগেটিভ বিষয়কে যদি আপনি নেগেটিভভাবে নেন তাহলে বড় হতে পারবেন না। আপনাকে অনেক কিছু হজম করতে হবে।
বিজিএমইএর সভাপতি হিসেবে একদিকে অনেক কঠিন সময় পার করেছেন। অন্যদিকে অনেক সাফল্যও দেখিয়েছেন। যদি বিশেষ কোনো সাফল্যের কথা জানতে চাওয়া হয় তাহলে সেটা কি?
আমি যখন বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট হলাম, তখন আমার প্রতিপক্ষ যারা ছিলেন তারা অনেক শক্তিশালী। বিজিএমইএর যারা মেম্বার আছে আমি তাদের অনেক সহযোগিতা করেছি। সে কারণেই আমি অসাধারণ সাফল্য পেয়ে পাস করি। ওই সময় (২০০৯-১০ সালে) কিন্তু বিশ্বের প্রেক্ষাপটে মন্দা আসে। সারা বিশ্বে কিন্তু মন্দা। আমাদের দেশেও তার প্রতিফলন পড়েছিল। সেই সময় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার দায়িত্বে ছিলেন। আমি সরকারকে কিছু বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলাম। সরকার সেটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিল। আমাদের মার্কেটও বেড়েছে। আমি খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে অনেক বিষয় বোঝাতে পেরেছিলাম। ওই সময় অনেক গ্রোথ হয়েছিল।
গত কয়েক বছর দেশের পোশাক রপ্তানিখাত বেশ ভালোই করছিল। কিন্তু গুলশান ও শোলাকিয়া ঘটনার পর নতুন করে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে গেল।
পরপর দুটি ঘটনা আসলে আমাদের ব্যবসার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহলে বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে পোশাক, বস্ত্র ও রপ্তানিখাত। এটা খুবই কষ্টদায়ক ঘটনা। আমাদের সবসময়ই কিছু না কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। কিছু করার নেই। আশা করি ঘুরে দাঁড়াতে পারব।
কি ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে আপনাদের?
আমরা এক সময় অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ইন্ডাস্ট্রিয়াল একসিডেন্ট, প্রাইস কম ইত্যাদি। এসব কঠিন সময় পার করে আমরা যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছি তখনই এই ঘটনাটা আমাদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী?
আমি মনে করি দিস ইজ দ্য টাইম টু ওয়ার্ক টুগেদার। আমরা যারা এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ক্রেতাদের সঙ্গে কাজ করছি, আমাদের সরকারও বেশ আন্তরিক। তারাও কাজ করছে। এখন আমাদের হয়ত একটু বেশি বেশি ভ্রমণ করতে হবে, দেশের বাইরে যেতে হবে বায়ারদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমি মনে করি, জাতীয় স্বার্থে দেশবাসী, রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, সংবাদ মাধ্যম যে যে ক্ষেত্রে আছে সবাই মিলে যদি আমরা কাজ করি তাহলে ওভার কাম করতে পারব। কারণ এর চেয়েও বেশি ক্রাইসিস আমরা অতিক্রম করেছি। যেভাবে সবাই কাজ করছি তাতে খুব শিগগিরই এগুলো কাটিয়ে উঠতে পারব। যদিও ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে প্রতিযোগিতা তো আছেই।
কোন কোন দেশকে বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ মনে করছেন?
অনেক চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে। দেশের নাম না বলে এভাবে বলি, পোশাকখাত ও অন্যান্য রপ্তানিমুখী খাতের মূল চ্যালেঞ্জ হলো আমাদের সক্ষমতা কমে আসছে। কারণ, আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেয়ে তারা প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছে। যেমন আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম কমেছে, তারা একাধিকবার সমন্বয় করেছে। ডিভ্যালুয়েশন তাদেরকে একটা বড় সুযোগ করে দিয়েছে। ডিভ্যালুয়েশনে চায়না, ইন্ডিয়া কৌশলগত অনেক উদ্যোগ তারা নিয়েছে। যেমন আগে এক ডলারে পাওয়া যেত ৪৪ রুপি, আর এখন পাওয়া যাচ্ছে ৭০ রুপিতে। মানে তাদের সক্ষমতা বেড়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশও ডিভ্যালুয়েশনে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ইন্ডিয়া এ বছরের বাজেটে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রণোদনা রেখেছে, রপ্তানিখাতের জন্য। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের কৌশলগত চুক্তি তারা স্বাক্ষর করছে। আমাদের সরকারও ব্যবসা ও শ্রম বান্ধব সরকার। এখন রপ্তানি খাত এবং কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে রপ্তানিমুখী শিল্পকে বিবেচনায় রেখে আমাদের যে আন্তর্জাতিক বাজার, সেটা আরও বেশি বড় করতে পারি। অংশীদারিত্ব বাড়াতে পারি। সেজন্য প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে মিল রেখে আমাদেরও যেন সুযোগ-সুবিধাগুলো দেওয়া হয়।
আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের পোশাকখাতকে কোন জায়গায় দেখতে চান আপনি?
আমার বিশ্বাস, আমরা একটি কঠিন সময় পার করে এসেছি। রানা ও তাজরিন ব্যাক টু ব্যাক দুর্ঘটনার পরে আমাদের পোশাক খাত একটা বিশাল বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছিল আন্তর্জাতিকভাবে। এখন ক্রেতাদের নমিনেটেড দুটি সংস্থা অ্যাকর্ড- অ্যালায়েন্স ও ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান তারা কাজ করছে পোশাক খাত নিয়ে এবং ইতিমধ্যে তারা চার হাজার ফ্যাক্টরিকে চিহ্নিত করেছে নিরাপদ হিসেবে। এগুলোর রেমিটিয়েশনের কাজ, রেগুলেশনের কাজ এক সঙ্গে চলছে। আমি মনে করি, আমাদের পোশাক খাত এখন নিরাপদ। ঢাকায় এখন ফ্যাক্টরি চালানো সম্ভব নয়। তারা ডিসকারেজ করছে। ঢাকায় ছোট ছোট ঘরবাড়ির মধ্যে যে ইন্ডাস্ট্রিগুলো আছে, সেগুলো যারা রিলোকেশন করছে সেখানে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ-গ্যাসের ব্যবস্থা করতে হবে। আর যারা নতুন করে আসছেন, গ্রিন ফ্যাক্টরি করছেন বা করার চিন্তা করছেন, তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ-গ্যাসের সংযোগ দিতে হবে। তাহলে সার্বিকভাবে ৬০ বিলিয়ন এবং বিশেষভাবে তৈরি পোশাকখাত থেকে যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জন করা খুব কঠিন হবে না।
রপ্তানি খাতে আর কোন কোন খাত বড় ভূমিকা রাখতে পারে?
দেশের শতাধিক পণ্য কিন্তু বিদেশে রপ্তানি হয়। এর মধ্যে লেদার, সিরামিক, ফার্মাসিউটিক্যাল, ফিস আছে। এছাড়া আমাদের আইটিও একটি বিশাল সম্ভাবনাময় খাত। জুট একটা বড় খাত। আমরা যে শিল্পগুলোকে নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বপ্ন দেখি সেগুলোকে রিফাইন্যান্সিং করা, প্রণোদনা দেওয়া, সহায়তা দিয়ে আমাদের বাজার দখল করা। আর পোশাক ও বস্ত্রখাত তো ইতিমধ্যে একটা বাজার সৃষ্টি করে ফেলেছে আন্তর্জাতিকভাবে। আমাদের অবস্থান, অংশীদারিত্ব কিন্তু ইতিমধ্যে সৃষ্টি করে ফেলেছি। বাংলাদেশ দুটো কারণে এখন পরিচিত। একটা হলো, এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড, অনেক এক্সপোর্ট হচ্ছে, অন্যটি হচ্ছে পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে একটা ব্র্যান্ডিং হয়ে গেছে বিশ্ব বাজারে। যদিও বিশ্ব মার্কেটে আমাদের মাত্র ৫% অংশীদারিত্ব। এটা আরও বাড়ানো সম্ভব। বিশ্ব বাজার তো ছোট হচ্ছে না, বাড়ছে। আর সরকারের কাছে আরেকটা চাওয়া হলো, আমাদের যে নতুন বাজার আসছে, সে বাজারের প্রণোদনটা বাড়ানো। নতুন বাজার যাতে আরো বাড়ে সে জন্য সরকারের কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন আমরা ল্যাটিন আমেরিকাসহ অন্যান্য আফ্রিকার দেশে রপ্তানি করছি ডিউটি ফি দিয়ে। আমরা বাই রেন্টাল আলোচনা করে জার্মান বা অন্যান্য দেশের মতো যদি ডিউটি ফ্রি স্ট্যাটাসটা পাই তাহলে কিন্তু নতুন বাজারে আমাদের রপ্তানির গ্রোথ অনেক বেড়ে যাবে।
এবার অন্যরকম প্রশ্ন। আপনার কাছে কোন দায়িত্বটা বেশি চ্যালেঞ্জিং- ফুটবল কর্মকর্তা, নিজ প্রতিষ্ঠানের বস নাকি ব্যবসায়ী নেতা?
আসলে সব জায়গার দায়িত্বই অনেক বড়। আমি যে বিষয়টি মনে করি, আপনি জীবনে যেখানে যাই করেন না কেন আন্তরিকতার সঙ্গে করতে হবে। কল্যাণের মনমানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। তাহলে সফলতা পাবেন।
আগামীকাল তৃতীয় পর্ব : বাংলাদেশের মানুষ অনেক সৃজনশীল