মাস্টার আবুল কাশেম। ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মাদার স্টিল লিমিটেড। পরিচালক, মিডল্যান্ড ব্যাংক লি.। স্বত্বাধিকারী, ম্যাক করপোরেশন ও মাস্টার স্টিল রি-রোলিং মিলস। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বর্তমানে তিনি দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন নিরন্তর। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নিয়ে যেতে চান অনন্য উচ্চতায়। স্বপ্ন দেখেন শোষণহীন, বৈষম্য ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বনির্ভর বাংলাদেশের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শিহাব উদ্দিন
ব্যবসায়ের শুরুটা কীভাবে?
সাধারণ পরিবারেই আমার জন্ম। টিউশনি করেই আমাকে পড়াশোনা করতে হয়েছে। এসএসসি পাস করার পর পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরিও করতে হয়েছে। এইচএসসি পাস করার পর গ্রামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা শুরু করি। এর পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যবসা-বাণিজ্য করতাম। একটা সময় চিন্তা করলাম দেশ, সমাজ ও পরিবারের জন্য কিছু করতে হলে আমাকে ব্যবসায়েই সফল হতে হবে। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর মনপ্রাণ দিয়ে লেগে গেলাম শিপ ইয়ার্ডকেন্দ্রিক ব্যবসায়ে। ব্যবসায়ের শুরুতে আমাকে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে। ধৈর্য, সততা ও পরিশ্রম দিয়ে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আমি আজকে সাফল্যর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছি। আমার প্রতিষ্ঠান মাদার স্টিল লিমিটেড, ম্যাক করপোরেশন, মাস্টার স্টিল রি রোলিং মিলস দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে চট্টগ্রামে সততা ও সুনামের সঙ্গে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের সম্ভাবনা নিয়ে কিছু বলুন
শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের কয়েক লাখ মানুষ জড়িত। এই খাত থেকে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে। আমাদের দেশে কোনো আয়রনের খনি নেই, আকরিক লোহার উপকরণ নেই। লোহা ছাড়া তো কোনো দেশ উন্নতি করতে পারে না। যেহেতু আমাদের দেশে লোহার খনি নেই, তাই লোহার জন্য আমাদের দেশ পুরোপুরি শিপ ইয়ার্ডের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের দেশে ৩৫-৪০ লাখ টন লোহা প্রয়োজন, এর মধ্যে ২৫-৩০ লাখ টন লোহা শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে পাওয়া যায়। আমরা বিদেশ থেকে পুরনো জাহাজ ইমপোর্ট করি। জাহাজগুলো থেকে রড তৈরি করতে পারি, চ্যানেল বানাতে পারি, অ্যাঙ্গেল তৈরি করতে পারি। তাছাড়া জাহাজের মধ্যে তৈজসপত্র থাকে, ফার্নিচার ফিটিংস থাকে, কিছু মেকানিক্যাল জিনিস থাকে, কিছু মোটর, ক্যাবল থাকে, এগুলো দেশের মিল-কারখানায় ব্যবহার করা যায়। আমি মনে করি বাংলাদেশের জন্য শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রি আশীর্বাদ।
শিপ ইয়ার্ডের কর্মপরিবেশ নিয়ে কিছু বলবেন?
বর্তমানে প্রতিটি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের কর্ম পরিবেশ আধুনিক, পরিবেশবান্ধব, বিজ্ঞানসম্মত ও আন্তর্জাতিকমানের। অতীতে মাঝেমধ্যে কিছু দুর্ঘটনা ঘটলেও এখনকার পরিস্থিতি এখন অনেক উন্নতি হয়েছে। মালিকরা শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন ও সতর্ক। প্রতিটি ইয়ার্ডে দুর্ঘটনা মোকাবেলায় আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। শ্রমিকদের চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছে অভিজ্ঞ চিকিৎসক টিম। শ্রমিক- কর্মচারীদের চিকিৎসার জন্য তৈরি হয়েছে আধুনিক হাসপাতাল। তাছাড়া কোনো শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে শ্রম আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করেও আরো অতিরিক্ত কিছু দেওয়া হয়।
সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-কে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
দেশে এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে অভাবনীয় উন্নয়ন হচ্ছে না। মানুষের জীবন যাত্রায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান সরকার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ায় আজ আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৬ বিলিয়নেরও বেশি। প্রবাসীদের পাঠানো আয় ১৫ বিলিয়ন ডলার, জিডিপি ৬.৫ শতাংশ এবং মাথাপিছু আয় ১৪০০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। তাছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার মতো সক্ষমতাও অর্জন করেছে বাংলাদেশ। কৃষিক্ষেত্রে যুগান্তকারী বিপ্লব হয়েছে। গড় উৎপাদনশীলতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, শিক্ষা খাতেও ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। সর্বোপরি বাংলাদেশ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে আজ বাংলাদেশ সবার কাছে একটি রোল মডেল। এসব সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে।
নবীন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে কিছু বলুন
বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে অনেক সৃজনশীলতা রয়েছে। আমি মনে করি সঠিক পরিচর্যা ও সহযোগিতা পেলে আমাদের তরুণরা ভালো করবে। সফল উদ্যোক্তা হতে হলে পরিকল্পনামাফিক কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্য সহকারে কাজ করতে হবে। সবসময় উদ্যোগী মনোভাব জাগ্রত রাখতে হবে। ঝুঁকি নিয়ে সব প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টিকে থাকার মানসিকতা লালন করতে হবে। পৃথিবীতে যারা সফল হয়েছেন তাদের কোনো না কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে। জীবনে হতাশার স্থান নেই। আত্মবিশ্বাস নিয়ে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সততা, ধৈর্য, আত্মবিশ্বাস ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ নিয়ে কাজ করলে সফলতা আসবেই।