এস এম আবু তৈয়ব। সভাপতি, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম, চট্টগ্রাম। সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি বিজিএমইএ। ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইনডিপেনডেন্ট অ্যাপারেলস লি.। সাংগঠনিক দক্ষতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে যে প্রতিষ্ঠানেরই দায়িত্ব নিয়েছেন সেটিকে নিয়ে গেছেন সাফল্যের স্বর্ণশিখরে। প্রতিষ্ঠান আর সংগঠন যেখানেই হাত দিয়েছেন সাফল্যে এসে ধরা দিয়েছে তার কাছে। তার মোহনীয় নেতৃত্ব গুণে সংগঠনগুলো ভূমিকা রাখছে সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শিহাবউদ্দিন-
ব্যবসার শুরুটা কিভাবে?
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এক ব্যবসায়িক পরিবারেই আমার জন্ম। আমার শ্রদ্ধেয় পিতা আলহাজ্ব মোজাহের সাহেব চট্টগ্রামের সুপরিচিত ব্যবসায়ী ছিলেন। বাবার পূর্ব-পুরুষরাও ব্যবসা বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে আমাদের পারিবারিক ব্যবসায়ের হাল ধরি। আমার বাবার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান মোজাহের ঔষধালয় দেশের মানুষের আত্মমানবতার সেবায় নিরন্তর ভূমিকা রাখছে। আমাদের প্রতিষ্ঠান ইনডিপেনডেন্ট অ্যাপারেলস লি., ব্রাদার্স অ্যাপারেলস লি. ও মোজাহের ঔষধালয় দক্ষতা, সুনাম ও সাফল্যের সঙ্গে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমাদের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ আন্তর্জাতিক মানের। শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে রয়েছে আধুনিক সরঞ্জাম। শ্রম আইন অনুযায়ী আমরা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি যথাযথ নিয়ম মেনে যথাসময়ে পরিশোধ করে থাকি। আমাদের উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান বিশ্ববাজারে ব্যাপক সমাদৃত।
দেশেরপোশাকশিল্পেরসম্ভাবনাওসমস্যানিয়েকিবলবেন?
দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের একক প্রধান খাত তৈরী পোশাক শিল্প। এই শিল্পে এককভাবে নিয়োজিত আছে বৃহত্তম শ্রমশক্তি। দেশের অর্থনীতিতে নিরন্তন ভূমিকা রাখছে আমাদের পোশাক শিল্প। এই খাতের বিস্তৃতি ঘটানো ও আয় বৃদ্ধির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বেশ কিছু সমস্যার কারণে এই খাতের প্রত্যাশিত ব্যাপ্তি ঘটানো সম্ভব হচ্ছে না। আমরা আশা করি সরকার দেশের অর্থনীতির স্বার্থে দ্রুত পোশাক শিল্পের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
২০৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অনেক কিছু করা প্রয়োজন। কিন্তু আমরা এখনো অনেক সঙ্কীর্ণতার মধ্যে আছি। আমাদের জনশক্তিকে আরও দক্ষ ও অভিজ্ঞ হিসেবে তৈরি করে বিদেশে পাঠাতে হবে বেশি রেমিটেন্স পাওয়ার জন্য। সম্ভাবনাময় অর্থনীতির জন্য এদেশের মানুষকে শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। দেশে অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি মানসম্পন্ন শিক্ষায় বিনিয়োগের বড় অংশ ব্যয় করতে হবে।
চট্টগ্রামেরউন্নয়ননিয়েআপনারঅভিমত কী?
চট্টগ্রামের উন্নয়নের প্রয়োজন নেই। চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের জন্য যা প্রয়োজন তা চট্টগ্রামে আছে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য চট্টগ্রামকে প্রয়োজন। চট্টগ্রামকে নিয়ে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো গবেষণা করলেও আমাদের জাতীয় সংসদে চট্টগ্রামকে নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয় না। চট্টগ্রামকে বলা হয় বাণিজ্যিক রাজধানী। এই পরিচিতি নিয়ে চট্টগ্রামবাসীর গর্ব থাকলেও ক্ষোভও কম নেই। প্রকৃতপক্ষে চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী গড়ে তুলতে যে উদ্যোগ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রয়োজন তা করা হয়নি। ভৌগলিক কারণে চট্টগ্রামের প্রতি ব্যবসায়ীদের আগ্রহ অনেক বেশি। চট্টগ্রামের যে অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে তা কাজে লাগাতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। এটি শুধু চট্টগ্রামবাসীর সম্পদ নয় এটি পুরো বাংলাদেশের সম্পদ। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
সরকারেরউন্নয়নকর্মকাণ্ডকেকিভাবেমূল্যায়নকরছেন?
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্র, আইনের শাসন আর উন্নয়নের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পালন করছেন কাণ্ডারীর ভূমিকা। দেশের এমন কোনো খাত নেই যেখানে ঈর্ষণীয় উন্নয়ন হয়নি। কেবল জাতীয় ক্ষেত্রে নয় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মিলেছে বাংলাদেশের। নিম্নআয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। মধ্যআয়ের দেশ হওয়ার পথেই চলছে নিরন্তর যাত্রা। আর্ন্তজাতিকভাবে বাংলাদেশ আজ সবার কাছে রোল মডেল। এসব কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার।
সব মানুষরই দেশ, সমাজ ও জাতির প্রতি কিছু দায়িত্ব থাকে। সেই দায়িত্ব বোধ থেকে আমি কিশোর বয়স থেকে সমাজের জন্য ইতিবাচক কিছু কাজ করার চেষ্টা করতাম। মূলত ছাত্রজীবন থেকেই নিজেকে আত্মমানবতার সেবায় নিয়োজিত করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে থাকায় মূল লক্ষ্য আমার। অসহায় নিপীড়িত মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে আনন্দ পাই। সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই।