গণভোটের রায়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। বিশ্ব অর্থনীতিতেই এর নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কার কথা বলছেন অর্থনীতিবিদ আর বিশ্বনেতারা। ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশের রপ্তানিও। বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন পোশাকশিল্পের মালিকরা। তবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদ মনে করেন, বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগও তৈরি করতে পারে ব্রিটিশদের এই সিদ্ধান্ত। ঢাকাটাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নতুন সম্ভাবনার কথা বলেছেন এই ব্যবসায়ী নেতা। আলাপচারিতায় ছিলেন তানিম আহমেদ।
ঢাকাটাইমস: ব্রিটেন ইইউ থেকে বের হয়ে গেলে গোটা ইউরোপেই বাংলাদেশের রপ্তানি কমে যাওয়ার আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে।
মাতলুব আহমাদ: হ্যাঁ, এর অনেক নেতিবাচক দিক আছে। তবে আমি ব্যবসায়ী হিসেবে একে নতুন সুযোগ হিসেবেও দেখতে চাই। আমরা আলোচনা করে ব্রিটেন বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আরও বেশি সুবিধা আদায় করে নিতে পারব।
ঢাকাটাইমস: ইউরোপের নতুন ব্যবস্থায় আপনার এই আশাবাদের কারণ কী?
মাতলুব আহমাদ: ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন গণভোটের আগেই বলেছেন নির্বাচনের ফলাফলে আন্তঃদেশীয় সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। আমি তার এমন বক্তব্যে আশ্বস্ত বোধ করছি।
ঢাকাটাইমস: নতুন ব্যবস্থায় কোন ধরনের সুবিধা পেতে পারে বাংলাদেশ?
মাতলুব আহমাদ: আমরা কমনওয়েলথভুক্ত দেশ। তাই দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় ব্রিটেন থেকে আরও বেশি সুবিধা আদায় করে নেয়ার সুযোগ আছে। ব্রিটেন ইইউতে থাকার সময়ও আলাদা ভিসা করতে হতো। সেখানে আমরা শুধু জিএসপি সুবিধা পেতাম। অন্যদিকে ব্রিটেন ইইউতে থাকার পরও ইউরো ব্যবহার না করে পাউন্ড ব্যবহার করত। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না নতুন ব্যবস্থায় খুব বেশি পাল্টাতে হবে আমাদের।
ঢাকাটাইমস: কিন্তু জনপ্রশাসনমন্ত্রী যে বলেছেন, বাণিজ্যিক চুক্তিসহ সবগুলো আবার নতুন করে করতে হবে...
মাতলুব আহমাদ: ব্রিটেনের সঙ্গে আমাদের নতুন করে চুক্তি করতে হবে। এ বিষয়ে আমি আবারও বলছি, কমনওয়েলথভুক্ত দেশ হিসেবে আমরা কম সুবিধা (ইইউতে থাকাকালীন যেসব সুবিধা ছিল) পাব না। সময় অনেক আছে। এত হুড়োহুড়ি করার কিছু নেই। মাত্র তো ওদের গণভোট হলো। ইইউ থেকে ইংল্যান্ডের বের হতো আরও দুই-তিন বছর লাগবে। এই সময়ের মধ্যে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে নেব। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
ঢাকাটাইমস: ইউরোপে বাংলাদেশের পণ্যের, বিশেষ করে পোশাক খাতের শুল্কমুক্ত প্রবেশ নিয়েও উদ্বেগের কথা বলছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
মাতলুব আহমাদ: পোশাকশিল্পের ব্যবসায়ীরা সব সময়ই বলে তাদের ব্যবসা ঝুঁকির মুখে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় রপ্তানি বাড়ছে। ব্রিটেনে আমাদের অনেক পোশাক রপ্তানি হয়। যখন আমাদের নতুন ফর্মুলা আসবে, তখন সেখানে ডিউটি ফ্রি বাজারসুবিধার জন্য কমনওয়েলথ কিংবা কান্ট্রি টু কান্ট্রি ভিত্তিতে চুক্তি করে ফেলব।
ঢাকাটাইমস: ইইউ থেকে ব্রিটেনের আলাদা হয়ে যেতে আরও কিছু সময় লাগবে। বাংলাদেশের চুক্তি কিংবা সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা কি আগেভাগেই শুরু করতে হবে?
মাতলুব আহমাদ: অবশ্যই, আমাদের সময় নষ্ট করা যাবে না। সরকারকে এখনই উদ্যোগী হয়ে গ্রাউন্ডওয়ার্ক করে নিতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে।
ঢাকাটাইমস: সরকারের পক্ষ থেকে এই মুহূর্তে কী পদক্ষেপ দেখতে চান?
মাতলুব আহমাদ: সরকারকেই তো মূল কাজ করতে হবে। সরকার কূটনৈতিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যর সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনা করবে। আর সরকারকে আমরা (ব্যবসায়ীরা) আলোচনা করে সরকারকে কিছু ফর্মুলা দেব।
ঢাকাটাইমস: আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মাতলুব আহমাদ: মতামত তুলে ধরার সুযোগ দেয়ায় ঢাকাটাইমসকেও ধন্যবাদ।