প্রকাশ : ১৪ জুলাই, ২০১৬ ১৯:২৮:১৭আপডেট : ১৪ জুলাই, ২০১৬ ২১:০০:২৭
গণমাধ্যমের কার্যক্রম কখনো সীমিত হতে পারে
গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় টেলিভিশনে প্রচার নিয়ে বেশ বিতর্ক হয়েছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুরোধের পর এক পর্যায়ে সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করা হয়। তবে তারপরও সরাসরি সম্প্রচারে প্রতিবেদকদের বক্তব্য নিয়ে পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। খোদ সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সমালোচনা করা হয়েছে।
তবে গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহাম্মদ মনে করেন, ওই ঘটনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমের প্রচারে তেমন কোনও ভুল হয়নি।
এই গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ মনে করেন, দেশে যখন বড় কোনো ঘটনা ঘটে, তখন জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সেই ঘটনা কাভার করতে গণমাধ্যমের উপর বিধি নিষেধ আরোপ হতে পারে। এটা জাতীয় স্বার্থেই মেনে নিতে হয়। কিন্তু সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত হচ্ছে জনগণকে ঠিক তথ্য সরবরাহের জন্য ব্রিফিং করা। এতে করে মানুষের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে।
ঢাকাটাইমস: হলি আর্টিজানে সংবাদ পরিবেশন নিয়ে গণমাধ্যমের কি বড় ধরনের কোনও ত্রুটি ছিল?
ড. আবুল মনসুর আহাম্মদ: আমি মনে করি, গণমাধ্যম এ ক্ষেত্রে সঠিক কাজটিই করেছে। কারণ প্রথম যখন ঘটনা শুরু হয় তখন গণমাধ্যম লাইভ সম্প্রচার করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলার পর তা নিয়ন্ত্রিতই ছিল। কিন্তু সরকার বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য সরবরাহ করা হয়নি। প্রায় ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা মানুষ অন্ধকারে ছিল। বিভিন্ন তথ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের সংবাদ পাওয়ায় মানুষ বিভ্রান্তও হয়েছে।
ঢাকাটাইমস: এই বিভ্রান্তি কেন?
ড. আবুল মনসুর আহাম্মদ: বড় কোনো জঙ্গি হামলা বা অন্য যে কোনো ঘটনা ঘটলে গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবেই তথ্য সরবরাহ করতে হয়। তা নাহলে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকে। ভুল তথ্য প্রচার হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। গুলশানের ঘটনায় গণমাধ্যমের ওপর সংবাদ প্রচারে কড়াকড়ি ছিল। এটা ঠিকই আছে। কারণ এটা নিরাপত্তা ইস্যু। এখানে জাতীয় স্বার্থ বিদ্যমান। কিন্তু সরকার বা এজেন্সিগুলো যদি এক ঘণ্টা পর পর ব্রিফিং করতো তাহলে আর বিভ্রান্তি হতো না।
ঢাকাটাইমস: গণমাধ্যমে সরাসরি প্রচার কী নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারতো?
ড. আবুল মনসুর আহাম্মদ: গুলশানের ঘটনাটি কিন্তু বাংলাদেশে প্রথম। এটা জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। গণমাধ্যম সরাসরি সম্প্রসার করলে জঙ্গিরা তা দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপের বিষয়ে তথ্য পেয়ে যেত। এ ক্ষেত্রে তারাও কৌশল পাল্টে ফেলতে পারতো। এছাড়া এসব ঘটনায় জনমনেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে। অনেক শিশুরাও টেলিভিশন দেখে, আবার অনেক হার্টের রোগীও টিভি দেখে। এরা যেন নৃশংস বর্ণনা না পায় সে বিষয়টিতে গণমাধ্যম কর্মীদেরকে গুরুত্ব দিতে হবে।
তবে গুলশানে গণমাধ্যমের কোনো সুনির্দিষ্ট সোর্স ছিল না। তারা বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য নিয়ে তা প্রচার করেছে। এমন ক্ষেত্রে কিছু ভুল হতেই পারে।
ঢাকাটাইমস: গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা তো তাও আইন দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তো অনেক আপত্তিকর আধেয় প্রচার হচ্ছে...
ড. আবুল মনসুর আহাম্মদ: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে? এখানে নানা মানুষ নানা মত দিচ্ছে। বিভিন্ন তথ্য এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যাচ্ছে। এসব হতো না যদি মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে সঠিক তথ্য সরবরাহ হতো। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভারতে এনডিটিভি প্রথমে নিউজ প্রকাশ করেছে, দুই কূটনীতিক নিহত। কিন্তু আসলে তা তো হয়নি। তারা হয়তো কোনো সূত্রে তথ্য পেয়ে প্রকাশ করেছে। পরে অবশ্য সব জানার পরে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এটা হতো না যদি তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ হতো।
ঢাকাটাইমস: আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাহলে কী করতে পারতো?
ড. আবুল মনসুর আহাম্মদ: ঘটনার রাত থেকেই ডিএমপির পক্ষ থেকে বা অন্য কোনো এজেন্সির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হামলা সম্পর্কে এক ঘণ্টা পর পর ব্রিফিং করা যেত।
ঢাকাটাইমস: এ ধরনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক দৃষ্টান্ত কী?
ড. আবুল মনসুর আহাম্মদ: বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এই ধরনের ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে তারা গণমাধ্যমকে খুব সতর্কভাবেই ডিল করে। উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস এবং ওরল্যান্ডের ঘটনার কথা বলা যায়। ওইসব এলাকার সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা কিন্তু সিটি পুলিশ গণমাধ্যমকে নির্দিষ্ট সময় পরপর জানিয়েছে। ফলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়নি।
ঢাকাটাইমস: সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যের উপর নির্ভর করলে কী সঠিক তথ্য জানা যাবে?
ড. আবুল মনসুর আহাম্মদ: এসব ঘটনায় তো আর কোনো উপায় নেই। কারণ এখানে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু জড়িত। তাদের উপর ভরসা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।
ঢাকাটাইমস: তাহলে এটা তো কিছুটা এমভেডেড জার্নালিজম হয়ে যায়।
ড. আবুল মনসুর আহাম্মদ: তা ঠিক। কিন্তু এছাড়া তো আর উপায়ও নেই। সবচেয়ে বড় কথা হল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তো নির্ভরযোগ্য সোর্স। সাংবাদিকতার কাজ হচ্ছে সোর্সের তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রকাশ করা। সেটি কিন্তু সবসময় করা যায় না।
ঢাকাটাইমস: তাহলে গণমাধ্যমের কার্যক্রম কখনও কখনও সীমিত হতে পারে?
ড. আবুল মনসুর আহাম্মদ: রাষ্ট্রের প্রয়োজনে গণমাধ্যমের কার্যক্রম কখনও কখনও সীমিত হতে পারে। এটা দোষের কিছু নেই। সবার উপরে তো দেশ।